দুর্ঘটনায় এক স্কুলছাত্রের জখম হওয়াকে ঘিরে সোমবার জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ বেধেছিল বরাবাজারের বামুনডিহা গ্রামে। তার জেরে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, পুলিশকর্মীদের উপরে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর-সহ একাধিক অভিযোগে সোমবার রাতে পুলিশ বরাবাজার এলাকা থেকে ১৩ জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অত্যাচারের পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী।
ধৃতদের মঙ্গলবার সকালে পুরুলিয়া আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “অবরোধকারীদের আক্রমণে ১০ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। বরাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত আইসি প্রেমাংশু চট্টরাজ গুরুতর আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার তাঁকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এলাকার ১৩ জনকে ধরা হয়েছে।” দুর্ঘটনা নিয়ে অবশ্য আলাদা মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
সোমবার বিকেল তিনটে নাগাদ বন্ধুদের সঙ্গে বরাবাজারের শ্যামরলা গ্রামের স্কুলছাত্র শুভম পরামানিক টিউশনি পড়তে যাচ্ছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই সময় পুরুলিয়া থেকে বরাবাজারগামী পুলিশের একটি গাড়ির ধাক্কায় শুভম সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে। এর পরেই বাসিন্দাদের একাংশ বিক্ষোভ ও অবরোধে সামিল হন। বামুনডিহা গ্রামের কাছে বরাবাজার-পুরুলিয়া রাস্তায় হওয়া অবরোধ তুলতে গিয়ে পুলিশ আক্রান্ত হয়। অবরোধকারীদের একাংশ পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়ে। তাতে কিছু পুলিশকর্মী জখম হন। পুলিশ পাল্টা লাঠি চালিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সোমবার রাত আটটা নাগাদ এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে তাণ্ডব চালায়। বেশ কয়েকটি সাইকেলের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ায় সাইকেলগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই খবর পেয়ে পুরুলিয়ার লোক সেবক সঙ্ঘের সচিব সুশীল মাহাতো মঙ্গলবার ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় আমাদের কয়েকজন আত্মীয় ও কর্মী থাকেন। এ দিন সকালে তাঁদের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি, পুলিশ ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। নিরপরাধ গ্রামবাসীকেও পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করেছে। সমস্ত ঘটনা আমরা পুলিশ সুপারকে লিখিত ভাবে জানাব।”
পাছে পুলিশ ফের গ্রামে হানা দেয়, এই আতঙ্কে রয়েছেন বামনুডিহা ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তাঁদের অনেকে বললেন, “সোমবার রাতে পুলিশের যা চেহারা দেখলাম, তাতে আমরা প্রচণ্ড ভয়ে আছি। হাতের সামনে যাকে পেয়েছে, পুলিশ ওই রাতে তাকেই পিটিয়েছে। বাড়ি থেকে টানতে টানতে কয়েক জনকে পুলিশ গাড়িতে তুলেছে।”
বাসিন্দাদের ক্ষোভ, পুলিশেরই গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটাল। অথচ পুলিশই নিরীহ মানুষদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে। এলাকার কিছু তৃণমূল নেতাও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ সমর্থন করেছেন। তাঁরা মানছেন, পুলিশ ঠিক কাজ করেনি। কিন্তু, প্রকাশ্যে কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি। তৃণমূলের জেলা নেতা নবেন্দু মাহালি বলেন, “ওখানে একটা ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় কিশোরের আহত হওয়া যেমন দুঃখজনক, তেমনই ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশকে আক্রমণ করাও ঠিক হয়নি। প্রশাসনিক স্তরে ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে একটা সুষ্ঠু মীমাংসার পথ খোঁজা হচ্ছে।”
তাণ্ডবের অভিযোগ মানতে চাননি পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার। তাঁর দাবি, “গ্রামে পুলিশ অভিযুক্তদের খোঁজ করতে গিয়েছিল। কাউকে মারধর করা হয়নি। পুলিশের উপরে হামলায় আরও কয়েক জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের খোঁজ চলছে।”