সিরিয়ালের টোপ দিয়ে তরুণীকে অপহরণ, ফের গ্রেফতার যুবক

অপরাধের ধরনের কোনও বদল হয়নি। অপরাধের কায়দাও এক। তবে, অভিযোগটা আরও গুরুতর। সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়ার নাম করে এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে আগেই গ্রেফতার হয়েছিল বিষ্ণুপুর শহরের ছিন্নমস্তা এলাকার যুবক শুভেন্দু গুহ। তিন মাস জেল খেটে সবে জামিন পেয়েছে সে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ফের সে পুলিশের জালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:২৭
Share:

নাম ভাঁড়িয়ে শেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ল শুভেন্দু গুহ। বাঁকুড়া সদর থানা থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

অপরাধের ধরনের কোনও বদল হয়নি। অপরাধের কায়দাও এক। তবে, অভিযোগটা আরও গুরুতর।

Advertisement

সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়ার নাম করে এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে আগেই গ্রেফতার হয়েছিল বিষ্ণুপুর শহরের ছিন্নমস্তা এলাকার যুবক শুভেন্দু গুহ। তিন মাস জেল খেটে সবে জামিন পেয়েছে সে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ফের সে পুলিশের জালে। এ বার আর এক কলেজছাত্রীকে অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’টি ঘটনাতেই নাম ভাঁড়িয়ে নিজেকে চিত্র পরিচালক অঙ্কুশ চট্টোপাধ্যায় বলে ওই দুই তরুণীর কাছে পরিচয় দিয়েছিল শুভেন্দু। প্রথম ঘটনায় প্রতারিত তরুণীর দিদি ফোনে শুভেন্দুর সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে বিষ্ণুপুর শহরে এসে তাঁকে পাকড়াও করেছিলেন। আর দ্বিতীয় ঘটনায় শুভেন্দুর মোবাইল ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে তাকে ধরেন বাঁকুড়ার মহিলা থানার ওসি।

পুলিশ সূত্রের খবর, জনপ্রিয় একটি বাংলা সিরিয়ালে অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়ার নাম করে বিষ্ণুপুরের একটি কলেজের ছাত্রীকে ফুসলিয়ে গত মঙ্গলবার (১৯ অগস্ট) হাওড়া নিয়ে গিয়েছিল শুভেন্দু। বিষ্ণুপুরে থাকার জন্য মেসের খোঁজ করছিলেন ওই তরুণী। সেই সূত্রেই অঙ্কুশ ওরফে শুভেন্দুর সঙ্গে ওই তরুণী ও তাঁর দিদির পরিচয় হয়। মোবাইল নম্বরও দেওয়া-নেওয়া হয়। এর পরেই কলেজছাত্রীটির সঙ্গে ফোনে ভাব জমায় শুভেন্দু। মেয়েটির অভিযোগ, তাঁকে নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখায় শুভেন্দু। তিনিও সেই ফাঁদে পা দেন। কলকাতা যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়েই ট্রেনে ওঠেন শুভেন্দুর সঙ্গে।

Advertisement

শুভেন্দু গুহ

হাওড়া পৌঁছতেই শুভেন্দুর স্বরূপ তাঁর সামনে স্পষ্ট হয় বলে কলেজছাত্রীর অভিযোগ। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, কথা না শুনলে তাঁর বাড়ির লোকজনকে খুন করে দেওয়ার হুমকি দেয় শুভেন্দু। এর পর তাঁকে নিয়ে যায় একটি হোটেলে। তাঁর কাছে থাকা টাকাপয়সা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। খুলে নেয় হাতের সোনার আংটি। এ দিকে, মেয়ের কোনও খোঁজ না পেয়ে ১৯ তারিখই বিষ্ণুপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন ওই কলেজছাত্রীরর পরিবার। পরে ছোট মেয়ের দিদির কাছ থেকে শুভেন্দুর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার কথা জানতে পারেন বাড়ির লোক। মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে ২০ তারিখ বাঁকুড়া মহিলা থানায় ওই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়।

বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুরে একটি তদন্তকারী দল পাঠান বাঁকুড়ার মহিলা থানার ওসি রমারানি হাজরা। শুভেন্দুর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করা শুরু হয়। কলেজে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে ১৯ অগস্ট কলেজে এসেছিলেন ওই ছাত্রী। কয়েকটি ক্লাস করে তিনি বেরিয়ে যান। ও দিকে শুভেন্দুর টাওয়ার লোকেশন কখনও বর্ধমান, কখনও মেদিনীপুর দেখাতে থাকে। অবশেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরের উদ্দেশে পুলিশবাহিনী নিয়ে রওনা দেন রমারানিদেবী। রাতে মেদিনীপুরের বেশ কিছু জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও কোনও খোঁজ না পাওয়ায় স্টেশনে এসে রেলপুলিশকে তাঁরা ঘটনাটি জানান। সেখান থেকে খবর পান, বৃহস্পতিবার রাতে শালবনি স্টেশনে দুই যুবক-যুবতীকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয় রেলপুলিশের। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে দু’জনেই দৌড়ে রেললাইন ধরে গোদাপিয়াশালের দিকে পালান। তাঁদের একটি ব্যাগ উদ্ধার করে শালবনি স্টেশনের রেলপুলিশ।

সঙ্গে সঙ্গে গোদাপিয়াশাল স্টেশনের জিআরপি-কে ঘটনাটি জানাতে বলেন রমারানিদেবী। শনিবার সকালে সেই স্টেশন থেকেই শুভেন্দু আর ওই তরুণীকে আটক করে জিআরপি। বাঁকুড়ার মহিলা থানার পুলিশ ওই দু’জনকে বাঁকুড়া নিয়ে আসেন। অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় শুভেন্দুকে। রবিবার তাকে বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয় ওই কলেজছাত্রীর। তাঁর মোবাইল এবং সোনার আংটি অবশ্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বাঁকুড়া জেলা জেলার ডিএসপি (আইন-শৃঙ্খলা) বাপ্পাদিত্য ঘোষ বলেন, “জেল থেকে বেরিয়ে ফের একই কাণ্ড বাধাল শুভেন্দু। ভাবতেই পারেনি, ফের পুলিশের খপ্পরে পড়বে। এ বার ওর বিরুদ্ধে আরও জোরালো প্রমাণ রয়েছে আমাদের হাতে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন