সরকারি হাসপাতালের হাল কবে ফিরবে, প্রশ্ন

মঙ্গলবার সকালে সল্টলেকের এক হাসপাতালে লিভারের গুরুতর অসুখে আক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে এসেছিলেন বরানগরের তপতী পাল। অবিলম্বে অস্ত্রোপচার দরকার। কোনও সরকারি হাসপাতালে জায়গা হয়নি। ধার করে হলেও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাবেন ঠিক করেই নিয়ে এসেছিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৭ ০৪:০৩
Share:

মঙ্গলবার সকালে সল্টলেকের এক হাসপাতালে লিভারের গুরুতর অসুখে আক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে এসেছিলেন বরানগরের তপতী পাল। অবিলম্বে অস্ত্রোপচার দরকার। কোনও সরকারি হাসপাতালে জায়গা হয়নি। ধার করে হলেও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাবেন ঠিক করেই নিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু আসার পরে শুনলেন, আপাতত অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। সপ্তাহ দুয়েক পরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে তাঁকে। তপতীদেবীর কথায়, ‘‘ওরা কোনও কারণও বলতে পারছে না। শুধু বলছে ‘এখন হবে না’। তা হলে কি বিনা চিকিৎসায় আমার স্বামীর মৃত্যু হবে?’’

Advertisement

গত ক’দিন ধরে সব বেসরকারি হাসপাতালেই কম বেশি এমন ঘটনা ঘটছে। স্বাস্থ্যবিল পেশের দিন বিধানসভায় বিরোধীরা ঠিক এই জায়গাতেই চাপ দিতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন গরিব মানুষকে ঘটি-বাটি বিক্রি করে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটতে হয় আগে তার কারণটা মুখ্যমন্ত্রী উপলব্ধি করুন। সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতি না করে শুধু বেসরকারি হাসপাতালকে নিয়মের ফাঁসে বাঁধতে চাওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন। প্রশ্ন তুলেছিলেন, সরকার কমিশন গড়ছে, অথচ তার আওতায় কেন সরকারি হাসপাতালগুলি আসবে না?

এ দিনও শহরের একাধিক সরকারি হাসপাতালে অজস্র রোগী প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই মারাও দিয়েছেন অনেকে। যেমন, এসএসকেএম সূত্রে খবর, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত রমেশ হালদারকে হুগলি থেকে আনার পথেই তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। এসএসকেএমে পৌঁছনোর আগেই তিনি মারা যান। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলির আউটডোর-ইমার্জেন্সিতে সকাল থেকে হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেও ‘বেড নেই’ শুনে অন্যত্র ছুটতে হয়েছে বহু রোগীকে। মুমূর্ষু রোগীর এমআরআই-সিটি স্ক্যানের তারিখও দেওয়া হয়েছে পাঁচ মাস-ছ’মাস পরে। সেই ভিড়টার একটা বড় অংশই ছুটেছেন বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমে। কিন্তু সেখানেও এখন ঠাঁই মিলছে না।

Advertisement

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সু্প্রিয়র প্রশ্ন, ‘‘জেলা হাসপাতালগুলির কী হাল মুখ্যমন্ত্রী জানেন না? সব সময়ে কলকাতায় রেফার করা হয়। তার পর কলকাতায় এসেও সরকারি হাসপাতালে জায়গা মেলে না। কী করবেন গরিব মানুষ? তাঁদের তো নিরুপায় হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটতে হয়। এত বড় পদক্ষেপের আগে সরকারি হাসপাতালের হাল ফেরান মুখ্যমন্ত্রী।’’ রাজ্যের বিরোধীদের সুরে সুর মিলিয়েই তিনি বলছেন, ‘‘দুর্ঘটনায় আহতদের তো অনেক বেসরকারি হাসপাতালই ভর্তি নিতে চায় না। খরচ কে জোগাবে, সেই ভয়ে। সরকার তো এত ক্লাবকে এত দান-খয়রাতি করে। কেন সরকার বলছে না যে বিপিএল তালিকাভুক্ত কোনও মানুষ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সরকারি হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে যদি বেসরকারিতে ভর্তি হন, তা হলে তাঁর চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করবে?’’

স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, প্রক্রিয়াটা সবে শুরু হয়েছে। এখনই তাঁরা কোনও মন্তব্য করবেন না। তবে ধাপে ধাপে অনেক কিছুই হবে।

ইতিমধ্যেই প্রবীণ চিকিৎসকেরা অনেকে সরকারের কাছে লিখিত ভাবে আর্জি জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, গোটা বিষয়টিকে ফৌজদারি আইনের আওতায় এনে ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এই জায়গাটায় সরকারের অনেক ভাবনার দরকার ছিল। মুড়ি-মিছরির এক দর হলে বিপর্যয় ঘটতে বাধ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন