বহু সময় অভিযোগ ওঠে, রোগ বিক্রিতে ‘লাভ’ রয়েছে, স্বাস্থ্য সচেতনতায় নেই। সেই জন্য রোগ নির্মূলে বেসরকারি পরিসর বিনিয়োগ করলেও রোগ প্রতিরোধে তাদের বিনিয়োগ নেই।
সত্যিই কি তাই? সম্প্রতি ‘ডাঃ চন্দ্রকান্ত পাতিল স্মারক আলোচনা’-য় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেন চিকিৎসক থেকে ব্যাঙ্ক কর্ণধার।
বিতর্ক সভায় অংশগ্রহণকারী চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর বক্তব্য, লাভের জন্যই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। আর সেখান থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিক্রির ভাবনা তৈরি হচ্ছে। চিকিৎসক এবং রোগীর মাঝখানে চলে আসছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী বেসরকারি সংস্থার নীতি। তাই স্বাস্থ্য পরিষেবায় বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে থাকা উচিত। লাভের সীমারেখা তৈরি করতে হবে সরকারকে। তা হলেই সব শ্রেণির মানুষ সরকারি-বেসরকারি সব পরিসরে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবেন।
তাঁর কথায়, ‘‘দেশ জুড়ে রোগ বিক্রি শুরু হয়েছে। সাধারণ
মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার পরিবর্তে রোগ সচেতনতা তৈরির চেষ্টা চলছে। বেশি টাকা খরচ
করলেই ভাল চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে, এই ভ্রান্ত ধারণা তৈরির চেষ্টা চলছে।’’
যদিও পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেন চিকিৎসক কুণাল সরকার। তাঁর বক্তব্য, শুধুমাত্র সরকার নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হলে চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। লাভ না হলে বেসরকারি সংস্থা বিনিয়োগে আগ্রহও দেখাবে না। তবে চাহিদা অনুপাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা গড়ে তুলতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বহুজাতিক সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি মনে করেন। স্বাস্থ্য সচেতনতার
কর্মসূচিতে বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে সরকারকে। সাধারণ মানুষ যাতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে খরচের জেরে সমস্যায় না পড়েন, সে জন্য স্বাস্থ্যবিমা তৈরি করতে হবে সরকারকে। তাঁর কথায়, ‘‘সব নাগরিকের স্বাস্থ্যবিমা থাকলে সরকারি-বেসরকারি যে কোনও ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে সমস্যা হবে না।’’
বিতর্কে চিকিৎসকদের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করেছিলেন বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষ, বায়ুসেনার প্রাক্তন কর্তা অরূপ রাহা। তাঁরাও জানাচ্ছেন, সবার জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা গড়ে তুলতে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। আর লাভের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের দায়বদ্ধতা এড়িয়ে গেলে চলবে না।