সমাবর্তনে রীতি ভাঙা নিয়ে প্রশ্ন

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আশ্রমিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, ছাতিমপাতার বিষয়টি না হয় ঠিক আছে। কেননা, সে ক্ষেত্রে এ দিন ডিগ্রি-প্রাপক চার হাজার ছাত্রছাত্রীকে পাতা দিতে হত।

Advertisement

বাসুদেব ঘোষ

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৯
Share:

বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে আম্রকুঞ্জে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

রীতি ভাঙার শুরু হয়েছিল গত বছরের সমাবর্তনে। বিশ্বভারতীতে তা বজায় থাকল এ বারও।

Advertisement

গাছ বাঁচাতে গত বছরের মতো এ বারও জনে জনে ছাতিমপাতা দেওয়া হয়নি। প্রতীকী হিসেবে উপাচার্যের হাতে ছাতিমপাতা তুলে দেন রাষ্ট্রপতি তথা বিশ্বভারতীর পরিদর্শক রামনাথ কোবিন্দ এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তবে সমাবর্তন শুরুর আগে বেদমন্ত্র পাঠ হয়নি। হয়েছে শুধু বেদগান। উপাচার্যের হাত থেকে পাওয়া যায়নি চন্দনের ফোঁটা। দেওয়া হয়নি দেশিকোত্তম-সহ একাধিক সম্মাননাও।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আশ্রমিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, ছাতিমপাতার বিষয়টি না হয় ঠিক আছে। কেননা, সে ক্ষেত্রে এ দিন ডিগ্রি-প্রাপক চার হাজার ছাত্রছাত্রীকে পাতা দিতে হত। কিন্তু, বেদমন্ত্র কি করা যেত না, কয়েক জনকে চন্দনের ফোঁটা দিতেই বা কি আপত্তি ছিল? সম্মাননা না-দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন ঘুরছে।

Advertisement

কয়েক বছর বন্ধ থাকার পরে ২০১৮ সালে সমাবর্তন হয় বিশ্বভারতীতে। সেই উপলক্ষে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতবারও সমাবর্তন উৎসবে বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সম্মান দেশিকোত্তম, অবন-গগন বা রথীন্দ্র পুরস্কার কিছুই প্রদান করা হয়নি। তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বভারতীর ব্যাখ্যা ছিল, এর আগে শেখ হাসিনা বা তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ সমাবর্তনে দেশিকোত্তম দেওয়া হয়েছে। সমাবর্তনেই দেশিকোত্তম প্রতি বার দেওয়া হয়েছে, এমন নয়।

কেন এমনটা হল, তা নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার। তবে এড়ানো যাচ্ছে না সমালোচনা। প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরের আক্ষেপ, ‘‘ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীতে সমস্ত রীতি বদলে যাচ্ছে। শুনলাম, এ বার সমাবর্তনে বৈদিক মন্ত্র পাঠ ও রবীন্দ্রনাথের গান ‘বিশ্ববিদ্যা তীর্থ প্রাঙ্গণ...’ গাওয়া হয়নি। এগুলো হওয়া উচিত না।’’ আর এক আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, ‘‘ধীরে ধীরে সমাবর্তনের মাধুর্য ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, সেটা কখনওই কাম্য নয়।’’

প্রথা মাফিক আম্রকুঞ্জের জহর বেদিতে সমাবর্তনের অনুষ্ঠান হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের হাতে রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির রেপ্লিকা তুলে দেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। পরে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল রবীন্দ্রভবনের সংগ্রহশালা ঘুরে দেখেন। সেখানে ‘ভিজিটরস বুক’-এ বিশ্বভারতীতে আসা সম্পর্কে নিজের মতামত লেখেন রাষ্ট্রপতি।

পাস থাকা সত্ত্বেও অনেক ছাত্রছাত্রী এ বার সমাবর্তনে ঢোকার অনুমতি না পাওয়াতেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সমাবর্তনে আঁচ পড়েছে বিশ্বভারতীতে সিআইএসএফ মোতায়েন নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কেরও। সমাবর্তন যখন চলছে আম্রকুঞ্জে, ক্যাম্পাসের বাইরে তখন পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখালেন ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র সদস্যেরা। সিআইএসএফ মোতায়েনের বিরুদ্ধে লেখা একটি প্রতিবাদপত্র তাঁরা তুলে দিলেন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন