ট্রেনে কাটা পড়ল ছাত্র, অবরোধে দুর্ভোগ

কলেজের ক্লাস শেষ করে এ দিন বেলঘরিয়া পলিটেকনিক (রামকৃষ্ণ মিশন শিল্প পীঠ)-এর প্রথম বর্ষের দুই পড়ুয়া চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিক থেকে লাইন পেরিয়ে এক নম্বরের দিকে যাচ্ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৩
Share:

মৃত: সোহম রায়।

রেলের আইন অনুযায়ী হেঁটে লাইন পারাপার দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু প্ল্যাটফর্মে ঢোকার পথ ও পরিকাঠামো না-থাকলে যাত্রীরা কী করবেন? জবাব নেই রেলকর্তাদের কাছে। ফলে প্রাণ হাতে নিয়ে লাইন পেরোতে বাধ্য হন যাত্রীরা। তখন একটু অসতর্ক হলে কী হতে পারে, তার সাক্ষী থাকল সোমবার সন্ধ্যার বেলঘরিয়া স্টেশন।

Advertisement

কলেজের ক্লাস শেষ করে এ দিন বেলঘরিয়া পলিটেকনিক (রামকৃষ্ণ মিশন শিল্প পীঠ)-এর প্রথম বর্ষের দুই পড়ুয়া চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিক থেকে লাইন পেরিয়ে এক নম্বরের দিকে যাচ্ছিলেন। তিন নম্বর লাইনে হঠাৎ চলে আসে শিয়ালদহ-রানাঘাট গ্যালপিং লোকাল। দুই পড়ুয়া সেই ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এক ছাত্রের। অন্য জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সোহম রায় (১৭)। বাড়ি বেহালা সরশুনায়। আহতের নাম অরুণাভ দাস (১৭)। তাঁর বাড়ি হুগলির মানকুণ্ডুতে। বেলঘরিয়া স্টেশনে তখন প্রচুর নিত্যযাত্রী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিট নাগাদ তাঁদের চোখের সামনেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। সহপাঠীর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পেয়ে কয়েকশো ছাত্র চলে আসেন স্টেশনে। সেই সময়েই বেলঘরিয়ায় পৌঁছয় কৃষ্ণনগর লোকাল। পড়ুয়ারা লাইনে বসে পড়ে সেই ট্রেন আটকে দেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের একাংশ। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ‘‘গ্যালপিং লোকালের আসার কথা স্টেশন-কর্তৃপক্ষ ঘোষণাই করেননি। তাই এই দুর্ঘটনা।’’ তবে পূর্ব রেলের দাবি, বেলঘরিয়ায় গ্যালপিং ট্রেন আসার খবর আগাম ঘোষণা করা হয়েছিল। হয়তো ছাত্রেরা তা শুনতে পাননি।

Advertisement

অবরোধের জেরে শিয়ালদহ মেন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আপ ও ডাউন ট্রেনগুলি দাঁড়িয়ে যায় বিভিন্ন স্টেশনে। আটকে পড়েন হাজার হাজার ঘরমুখী নিত্যযাত্রী। পড়ুয়াদের বোঝায় পুলিশ। বেলঘরিয়া মিশনের এক সন্ন্যাসী-মহারাজও স্টেশনে গিয়ে ছাত্রদের বোঝান। ঘণ্টাখানেক পরে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

রেল-কর্তৃপক্ষ জানান, অবরোধের জেরে ছ’‌জোড়া লোকাল ট্রেন বাতিল হয়েছে। ১০টি ট্রেন গড়ে ৫০ মিনিট দেরিচে চলে। এই নিয়ে পরপর তিন দিন অবরোধ এবং ট্রেনের যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে ভুগতে হল যাত্রীদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা আঙুল তুলছেন রেল-কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার দিকে। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই বেলঘরিয়া-সহ কয়েকটি স্টেশনে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। রেল এর দায় এড়াতে পারে না। এই স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছনোর রাস্তা বলতে কিছু নেই। স্টেশনের দু’দিকের বেশির ভাগ এলাকা দখল হয়ে গিয়েছে। বেলঘরিয়া স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিক থেকে স্টেশনে ঢুকতে গেলে লাইন পেরোতেই হবে। কারণ, বেলঘরিয়ার শুরুতে আর সোদপুর স্টেশনের শেষে লেভেল ক্রসিং বন্ধ করে উড়ালপুল তৈরি হয়ে গিয়েছে। চার নম্বরের দিকে কোনও রাস্তাই তৈরি হয়নি। রেলকে বারবার জানানো সত্ত্বেও সুরাহা হয়নি। তাদের সেই উদাসীনতার খেসারত দিতে হচ্ছে সোহমের মতো যাত্রীদের।

নিত্যযাত্রীদের আরও অভিযোগ, বেলঘরিয়া, আগরপাড়া, সোদপুর ও খড়দহ স্টেশনে ট্রেন আসার ঘোষণা নিয়ে বিক্ষোভ লেগেই রয়েছে। কারণ, কখনও কখনও আদৌ ঘোষণা করা হয় না অথবা ভুল ঘোষণা করা হয়।

ট্রেনের ঘোষণা হচ্ছে না কেন?

রেল সূত্রের খবর, অধিকাংশ স্টেশনে ঘোষণা করার কর্মীই নেই। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন