শপথ ভাঙছেন পার্থ, মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করুন: কঠোর বিবৃতি রাজভবনের

শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন রাজ্যপাল সম্পর্কে, তা ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ এবং একজন মন্ত্রীর মুখে এ ধরনের কথা মানায় না বলে লেখা হয়েছে রাজভবনের বিবৃতিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২০ ১৯:৩১
Share:

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্কে শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন রাজ্যপাল সম্পর্কে, তারই নিন্দা করে রাজভবন। ফাইল চিত্র।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কঠোর সমালোচনা করে বিবৃতি দিল রাজভবন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্কে শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন রাজ্যপাল সম্পর্কে, তার নিন্দা করেই মঙ্গলবার বিবৃতিটি প্রকাশ করেছে রাজভবন। সংবিধান এবং গণতন্ত্র সম্পর্কে পার্থবাবু কিছুই জানেন না বলেও মন্তব্য করা হয়েছে সেখানে। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চাওয়া হয়েছে রাজভবনের তরফে।

Advertisement

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন ও শিক্ষা) পদে অধ্যাপক গৌতম চন্দ্রকে সম্প্রতি নিয়োগ করেন রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনখড়। আর ওই নিয়োগের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়া দেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের পাঠানো নামের তালিকা থেকে সব নাম বাদ দিয়ে রাজ্যপাল বেছে বেছে বিজেপি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে সহ-উপাচার্য পদে বসিয়ে দিয়েছেন বলে পার্থ দাবি করেন। এই নিয়োগ মানা হবে না বলেও শিক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেন।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ওই সব মন্তব্যেরই কঠোর সমালোচনা করেছে এ দিন রাজভবন। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে সব মন্তব্য রাজ্যপাল সম্পর্কে করেছেন, সে বিষয়ে রাজভবন অত্যন্ত কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছে। রাজ্যপাল ধনখড় সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী পার্থর যে সব মন্তব্য সংবাদমাধ্যমে দেখা গিয়েছে, এ দিন তার কিছুটা অংশ তুলে ধরা হয়েছে রাজভবনের বিবৃতিতে। রাজ্যপাল সব সময় বিজেপি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়োগ করতে চান বলে যে মন্তব্য পার্থ করেছিলেন এবং রাজ্যপালকে ‘বিজেপির লোক’ বলে যে আক্রমণ পার্থ করেছিলেন, তা নিয়ে তীব্র উষ্মা ধরা পড়েছে রাজভবনের বিবৃতিতে।

Advertisement

শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন রাজ্যপাল সম্পর্কে, তা ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ এবং একজন মন্ত্রীর মুখে এ ধরনের কথা মানায় না বলে লেখা হয়েছে রাজভবনের বিবৃতিতে। মন্ত্রী হিসেবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে শপথ নিয়েছেন, সেই শপথের জন্যও এটা অত্যন্ত অবমাননাকর বলে লেখা হয়েছে সেখানে।

কোন আইনের বলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন ও শিক্ষা) পদে অধ্যাপক গৌতম চন্দ্রকে নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল তথা আচার্য, তা-ও এ দিন ব্যাখ্যা করা হয়েছে রাজভবনের তরফে। ‘পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বিধি (সংশোধান) আইন, ২০১১’-র ৯এ (১) (বি) ধারা অনুযায়ী সহ-উপাচার্য (প্রশাসন ও শিক্ষা)-কে আচার্য নিয়োগ করবেন মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে— এমনই লেখা হয়েছে রাজভবনের এ দিনের বিবৃতিতে। কাকে নিয়োগ করা হচ্ছে ওই পদে, তা মন্ত্রীকে জানানো হয়েছিল বলেও রাজভবন এ দিন দাবি করেছে।

রাজ্যপাল তথা আচার্যের অফিসের গায়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেও রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টা করেছেন এবং এটা কিছুতেই আর মেনে নেওয়া যাবে না— লিখেছে রাজভবন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই সব মন্তব্য প্রত্যাহার করবেন, রাজভবন এমনটাই আশা করে এবং এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হচ্ছে বলে বিবৃতিটির মাধ্যমে এ দিন জানানো হয়েছে।

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বেতন রাজ্য সরকার দেয়, এটা রাজ্যপাল ভুলে যাচ্ছেন বলে যে মন্তব্য শিক্ষামন্ত্রী করেছিলেন, সে প্রসঙ্গও এ দিন টেনে আনা হয়েছে রাজভবনের বিবৃতিতে। বেতন দেয় বলেই বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বলে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ওই মন্তব্য বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, সংবিধান এবং গণতন্ত্র সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না— এমনও লেখা হয়েছে এ দিন রাজভবনের তরফে।

আরও পড়ুন: মে মাসে কাজে যোগ দিয়েছেন ২ কোটির বেশি মানুষ, আশা জাগাচ্ছে সমীক্ষা রিপোর্ট​

পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য রাজ্যপালের ওই নিয়োগকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য পদে রাজ্যপাল যাঁকে বেছে নিয়েছিলেন, তাঁকে না মেনে অধ্যাপক আশিস পাণিগ্রাহীকে উচ্চশিক্ষা দফতর ওই পদে মনোনীত করেছে। রাজভবনের এই বিবৃতি আসার আগেই তা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: স্মার্টফোন নেই, টিভি বিকল! অনলাইন ক্লাস করতে না পেরে আত্মঘাতী কেরলের ছাত্রী​

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন