প্রধান শিক্ষকের ডাকেও ফিরতে নারাজ কিশোরী

প্রধান শিক্ষক এসেছেন শুনে ঘর থেকে এসে উঠোনে বসেছিল ময়নাগুড়ির সেই কিশোরী। কিন্তু ধর্ষণের শিকার এই ছাত্রীকে পুরনো স্কুলে ফিরিয়ে নিতে পারলেন না তিনি।

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত

প্রধান শিক্ষক এসেছেন শুনে ঘর থেকে এসে উঠোনে বসেছিল ময়নাগুড়ির সেই কিশোরী। কিন্তু ধর্ষণের শিকার এই ছাত্রীকে পুরনো স্কুলে ফিরিয়ে নিতে পারলেন না তিনি।

Advertisement

প্রধান শিক্ষক ছাত্রীকে বারবার বললেন, জীবনে অনেক আঘাত আসে। সে সব পার করে এগিয়ে যেতে হয়। ছাত্রী শুনল। তারপরে ঘাড় নে়ড়ে বলল, সে নতুন জীবন শুরু করতে চায় মামার বাড়ি থেকেই। প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘‘জীবনে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। পুরনো স্কুলে ফিরে আয়। আমরা তোর পাশে আছি।’’ ছাত্রী মাথা নিচু করেই থাকল। প্রধান শিক্ষক বললেন, “তোর সঙ্গে যা হয়েছে সেটা তোর লজ্জা না৷ সমাজের লজ্জা৷” সহকারী প্রধান শিক্ষকও ওই ছাত্রীর বাবা-মাকে বলেন, “ওকে স্কুলে পাঠান ৷ আমরা আরও যত্নে রাখব৷”

ছাত্রীটি এ বার বলল, ‘‘ওরা প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। যদি স্কুলে যাওয়া আসার পথে আক্রমণ করে, কে বাঁচাবে আমাকে?’’ এই প্রশ্নের জবাবে নিরুত্তর হয়ে যান দুই শিক্ষক।

Advertisement

বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘অনেক বদলে গিয়েছে।’’

১১ নভেম্বর পর থেকেই সেই বদলের শুরু। অভিযোগ, সে দিন ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে তার এক পড়শি যুবক। তারপর থেকে সে যেমন আপমানে কুঁকড়ে গিয়েছে, তেমনই তার চোয়ালও শক্ত হয়েছে। ওই কিশোরীর মা জানান, এ দিন তাঁর মেয়ে যে ভাবে অত বোঝানোর পরেও নিজের মতে অনড় থাকল, তা আগে কখনও দেখেননি। এই ত্রয়োদশী মেয়েটি আগে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সমানে কথা বলা তো দূরের কথা, মাথা নিচু করে থাকত। এ দিনও সেই ভঙ্গিতেই কিন্তু সে নিজের মত স্পষ্ট করে বলে দেয়।

ওই কিশোরী এখন আস্তে আস্তে নিজের চেষ্টাতেই আতঙ্ক থেকে বেরোনোর চেষ্টা করছে। সে ঘরেই থাকে। সন্ধে না হলে বেরোতে চায় না। কিন্তু তার মধ্যেই সে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছে। তার দাদু বলেন, ‘‘ওর কথা বলার ভঙ্গিটাই বদলে গিয়েছে। ও সত্যিই বড় হয়ে যাচ্ছে।’’ তবে অন্য স্কুলে ভর্তি হতে চাইলে ওই কিশোরীকে তাঁরা সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন তার পুরনো স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

ঘটনার পর দেড় মাস কেটে গেলেও ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে পুলিশ অবশ্য এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি৷ পুলিশ সূত্রের খবর, মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে জেলার পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘মূল অভিযুক্তকে ধরার সব রকমের চেষ্টা চলছে৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন