Rhea Chakraborty

রিয়ার নাম করে নয়া ফিকির সোশ্যাল মিডিয়ায়, ধৃত ১

সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ায় অভিযুক্তেরা আক্রোশবশত এমন পোস্ট করছেন বলে অভিযোগ। 

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:২০
Share:

—ফাইল চিত্র।

সীমান্তে যুদ্ধ হোক বা পোশাক বিতর্ক, ধর্ষণে অভিযুক্তের এনকাউন্টার হোক বা বলিউডে মাদক কারবার— যে কোনও ঘটনা ঘটতে না ঘটতেই তা নিয়ে নিজস্ব মতামত উপচে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই সঙ্গে তথ্যপ্রমাণ ছাড়া যে কাউকে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াস তো রয়েইছে। বলিউড তারকা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পরে তাঁর বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে মাদক-যোগে গ্রেফতারের পরে সেই প্রবণতা ফের মাথাচাড়া দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুরু হয়েছে নতুন ট্রেন্ড— হ্যাশট্যাগ রিয়া চক্রবর্তী অব মাই লাইফ!

Advertisement

সেখানে তথ্যপ্রমাণ ছাড়া অনেকেই কোনও মেয়ের নাম, ছবি-সহ পোস্ট করছেন। মেয়েটিকে চিহ্নিত করছেন নিজের জীবনের রিয়া চক্রবর্তী হিসেবে! গত কয়েক দিনে লালবাজারের সাইবার শাখায় এমন একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগকারিণীদের দাবি, তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক বা কোনও পুরনো বন্ধু এই কাণ্ড ঘটাচ্ছেন। সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ায় অভিযুক্তেরা আক্রোশবশত এমন পোস্ট করছেন বলে অভিযোগ।

এমনই একটি অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার প্রণয় চন্দ্র নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে নেতাজিনগর থানা। পেশায় মডেল, কুঁদঘাট এলাকার এক তরুণীর অভিযোগ, প্রণয়ের সঙ্গে গত মার্চে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল তাঁর। এক মাসের মধ্যেই বুঝতে পারেন, ওই যুবকের সঙ্গে থাকা সম্ভব নয়। তরুণীর দাবি, “এক দিন রাগের মাথায় গায়ে হাত তোলে। মারের চোটে আমার চোখের উপরে কালশিটে পড়ে যায়। স্কুটার ভেঙে দেয়। তার পরে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসি। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার ছবি দিয়ে হ্যাশট্যাগে লিখেছে, আমি নাকি ওর জীবনের রিয়া চক্রবর্তী।” ওই তরুণীর এ-ও দাবি, প্রথমে লালবাজারে গিয়ে বিষয়টি জানালে প্রণয়কে ফোন করে প্রথমে সতর্ক করেছিল পুলিশ। কিন্তু ফের এই ধরনের পোস্ট করায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

একই ধরনের অভিযোগ করেছেন হাজরার বাসিন্দা, সল্টলেকের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। তাঁর দাবি, “চার বছরের সম্পর্ক শেষ হওয়ার পরে আমার কর্মক্ষেত্রে গিয়ে বদনাম করার চেষ্টা করেছে প্রাক্তন প্রেমিক। ওর থেকে প্রচুর টাকা-গয়না নিয়েছি, এমন কথা লিখে এবং রিয়ার সঙ্গে তুলনা টেনে পোস্ট করেছে।” সিঁথির এক তরুণীর আবার দাবি, পাড়ার একটি ছেলের সঙ্গে তিনি সম্পর্কে জড়াতে চাননি। তাই সেই যুবক তাঁর ছবির সঙ্গে রিয়ার ছবি জুড়ে ফেসবুকে লিখেছেন— ‘দু’জনের কত মিল!’

আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, এমন ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা রুজু করে ব্যবস্থা নিতে পারে। যাঁদের নাম বা ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে তাঁরা ছাড়াও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকতে পারেন খোদ রিয়াও। মানহানির ধারাতেও মামলা হতে পারে। কিন্তু শুধুই কি অন্যকে কালিমালিপ্ত করার উদ্দেশ্যে এমন পোস্টের ধুম? মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, “এর পিছনে অন্য রকম আনন্দও কাজ করে। এমন পোস্টে

যে হেতু না ভেবেচিন্তেই অনেকে লাইক বা কমেন্ট করেন, তাই এ ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার বাড়ানোর নেশা চেপে বসে অনেকের।” তাঁর আরও দাবি, “এই মুহূর্তে রিয়া চক্রবর্তীকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাই এমন হ্যাশট্যাগ ব্যবহারে বেশি মানুষের কাছে সহজেই নিজের কথা পৌঁছনো যাবে, এমনও ভাবছেন অনেকে।”

সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র যদিও বলছেন, “এ ভাবে তাঁরাই কাউকে কালিমালিপ্ত করার কথা ভাবেন, যাঁদের অন্তর কালিমায় ভরা। ধারে-ভারে-যোগ্যতায় এঁরা সুশান্ত বা রিয়ার ধারেকাছেও নন। তাই এ ভাবেই প্রচার পাওয়ার চেষ্টা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন