চাকরি বাঁচাতে রোজ ডন-বৈঠকে ডন, বন্ড

ডন কো পকড়না মুশকিল হি নেহি, না-মুমকিন হ্যায়। ডন ছুটছে। মাই নেম ইজ বন্ড...। ছুটছে বন্ডও। বলিউড-হলিউডের জনপ্রিয় ‘রিল ক্যারেক্টার’ বা রুপোলি পর্দার চরিত্র নয়। এই ডন আর বন্ড কাজ করে রেল সুরক্ষা বাহিনীতে। আরপিএফের দুই জওয়ান তারা। এবং কাজের ধরনটা গোয়েন্দাদের মতোই— বিস্ফোরক বা মাদক খুঁজে বের করা। সেই কাজে তাদের নামডাকও আছে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:১৪
Share:

কসরতে ব্যস্ত। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

ডন কো পকড়না মুশকিল হি নেহি, না-মুমকিন হ্যায়। ডন ছুটছে।

Advertisement

মাই নেম ইজ বন্ড...। ছুটছে বন্ডও।

বলিউড-হলিউডের জনপ্রিয় ‘রিল ক্যারেক্টার’ বা রুপোলি পর্দার চরিত্র নয়। এই ডন আর বন্ড কাজ করে রেল সুরক্ষা বাহিনীতে। আরপিএফের দুই জওয়ান তারা। এবং কাজের ধরনটা গোয়েন্দাদের মতোই— বিস্ফোরক বা মাদক খুঁজে বের করা। সেই কাজে তাদের নামডাকও আছে। কিন্তু এখন তারা কোনও দুষ্কৃতী ধরতে ছুটছে না। ছুটছে ওজন কমাতে। কারণ, ‘স্লিম’ হতে না পারলে চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে যে!

Advertisement

পদমর্যাদায় দু’জনেই হেড কনস্টেবল। এনজেপি আরপিএফ অফিসের পাশে দু’জনের ঘর। ফ্যান, মশা তাড়াতে ইলেকট্রিক কয়েলও রয়েছে সেখানে। আছে যত্নআত্তির ঢালাও ব্যবস্থা। আরপিএফের কিছু অফিসারদের দাবি, তাতেই নাকি উল্টো ফল হয়েছে। ও়জন বেড়েছে সাঁ সাঁ করে। দু’জনেই এখন ছুটতে গিয়ে ঘেমেনেয়ে একশা! অথচ আরপিএফের কাটিহার বিভাগের মুখ্য নিরাপত্তা কমিশনার মহম্মদ শাকিবই বলছেন, ‘‘আদতে ওরা দু’জনেই খুব দক্ষ।’’ তাই ওদের ‘ফিট’ রাখাটা জরুরি।’’

কত ওজন ওদের এখন? বন্ডের ওজন এখন ৪০ কেজি। ডনের ৪১। দু’জনেরই বয়স ন’বছর। এই বয়সে এত ওজন চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। মে মাসেও বন্ডের ওজন ছিল ৩৪ কেজি, আর ডনের ৩৩। মাত্র তিন মাসে ৬-৭ কেজি ওজন বেড়ে যাওয়া কম কথা নয়। শরীর ভারী হওয়ায় সামান্য ছুটলেই হাঁফ ধরে যাচ্ছে। জিরিয়ে নিতে হচ্ছে। আরপিএফের উপরমহল থেকে নির্দেশ এসেছে, যে ভাবেই হোক ওজন কমাতে হবে। কারণ, ওদের অনেকটা জায়গা নিয়ে কাজ করতে হয়। সদা ব্যস্ত নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন তো আছেই, আগে-পিছে আরও পাঁচটি স্টেশনে কোথাও বোমাতঙ্ক ছড়ালে ডাক পড়ে এই দু’জনের।

এই যেমন গত বছর জুনে। এনজেপি স্টেশনে একটি চামড়ার ব্যাগ ঘিরে বোমাতঙ্ক ছড়ায়। বোমা খোঁজার যন্ত্র ‘বিপ’ শব্দ করে জানান দেয়, ব্যাগে বিস্ফোরক রয়েছে। আসরে নামে বন্ড। বার তিনেক ব্যাগের চারপাশ ঘুরে সে উদাসীন ভাবে হেঁটে চলে যায়। সে যদি ব্যাগের কাছে বসে ইঙ্গিত করত, তা হলে ভিতরে বিস্ফোরক থাকা নিশ্চিত। কিন্তু যন্ত্র যে ‘বিপ’ বলছে! বারবার পরীক্ষায় একই ফল। কিন্তু বন্ড নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। পরে ব্যাগ খুলে জানা যায় বন্ড-ই ঠিক। ব্যাগের মধ্যে দেশলাই ছাড়া কিছু নেই।

এমন কেরামতি দেখিয়েছে ডনও। জানুয়ারি মাসে আলুয়াবাড়ি স্টেশনে বোমাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় ডাক পড়েছিল তার। একটি কাপড়ের ব্যাগের ভিতর থেকে তার বেরিয়েছিল। শোনা যাচ্ছিল টিক-টিক শব্দ। ডন এসে ব্যাগ শুঁকে নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে। তবু ঝুঁকি না-নিয়ে সেটি সরিয়ে রাখা হয়। পরে ব্যাগ খুলে দেখা যায়, ভিতরে অ্যালার্ম ঘড়ি আর ভাঙা টর্চ ছাড়া কিছু নেই।

এমন দক্ষ কর্মীকে তো অকেজো হতে দেওয়া যায় না! পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে তাই ডন আর বন্ডের জন্য রুটিন তৈরি করা হয়েছে।

সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম থেকে তুলে ঘরের সামনের উঠোনে মিনিট পনেরো পায়চারি। তার পর জল খেয়ে সোজা মাঠে। প্রথমে আধ ঘণ্টা দৌড়। পনেরো মিনিট উল্টো পায়ে হাঁটা। সামনের দু’পা তুলে পিছনের দু’পায়ে হেঁটে যাওয়া আরও কিছুক্ষণ। মিনিট পাঁচেকের বিশ্রাম। তার পরে শুরু ওঠবোস। এটা চলে আরও দশ মিনিট। হাঁটা-দৌড়ের পরে গড়িয়ে গড়িয়েও চলতে হয় বেশ খানিক ক্ষণ। ঘেমে-টেমে দু’জন যখন বিশ্রামঘরে ঢুকবে, খাবার তখন তৈরি। চিকিৎসকের পরামর্শে তাদের দেওয়া হচ্ছে পেডিগ্রি ওবেসিটি। ‘ওবেসিটি’ বা মেদ বেশি হলে যা খেতে হয়। তুলনায় কিছুটা বিস্বাদ। কিন্তু আপাতত অন্য কিছুই মুখে তুলতে দেওয়া হচ্ছে না তাদের। তা-ও মোটে দু’বেলা, সকাল ৯টায় এক বার। আবার ফের রাত ৭টায়। শরীর ঠিক রাখতে হলে কম খাওয়ার নিয়মই কঠোর ভাবে মানতে হবে, জানাচ্ছেন পশু চিকিৎসক অপরাজিতা চক্রবর্তী। তিনি জানালেন, ‘‘ওজন বাড়লে হার্টেরও সমস্যা হতে পারে।’’

অতএব ডায়েটের কড়াকড়ি আপাতত আদর দিয়েই পুষিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রবল শরীরচর্চার পরে তারা যখন খাবারের অপেক্ষায় বসে থাকে, গায়ে হাত বুলিয়ে দেন সহকর্মী এবং ট্রেনাররা। কুচকুচে কালো বন্ড আর সোনালি লোমে ঢাকা ডন চোখ তুলে কৃতজ্ঞতা জানায়। দু’জনেই ল্যাব্রাডার রিট্রিভার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘স্নিফার ডগ’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement