ক্রমশ আরও পিছিয়ে যাচ্ছে বর্ষার বিদায়। সৌজন্যে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে চলা ফের একটি নিম্নচাপ।
গত সোমবার বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপে ভুগেছে গোটা দক্ষিণবঙ্গ। তার জেরে ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় ডিভিসি-র ছাড়া জলে প্লাবিত হয়েছে বর্ধমান ও হাওড়ার কিছু এলাকা। এর মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে দানা বাঁধতে থাকা নতুন নিম্নচাপটি চিন্তা বাড়াচ্ছে। আবহাওয়াবিদেরা জানান, ওই নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ওডিশা-বাংলা উপকূলের দিকে আসার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ফের বৃষ্টি হবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ। বর্ষার ইনিংসও দীর্ঘায়িত হবে।
আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, রবিবার নাগাদ নিম্নচাপটি পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে দানা বাঁধবে এবং তা শক্তিশালী হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। অক্টোবর থেকে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় জন্ম নিতে থাকে। ২০১৩ সালে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে চারটি ঘূর্ণিঝড় জন্ম নিয়েছিল। এই নির্মীয়মাণ নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে কি না, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন আবহবিদেরা। দিল্লির মৌসম ভবনের ঘূর্ণিঝড় বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেন, ‘‘সাগরের আবহাওয়ার উপরে নজর রাখছি। নিম্নচাপটির গতিবিধির উপরেও নজর রাখা হবে।’’
এ দিনই মৌসম ভবন সূত্রে জানানো হয়েছে যে, আগামী তিন-চার দিন উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব ভারতের একাংশে বর্ষা বিদায় নেবে। কিন্তু নতুন নিম্নচাপটি ওডিশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ঘনীভূত হলে এ তল্লাট থেকে বর্ষা বিদায় নিতে নিতে অক্টোবরের পেরিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা আবহবিদদের। বস্তুত, গত কয়েক বছর ধরেই জুন মাসের তুলনায় অগস্ট বা সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। নির্ঘণ্ট মেনে ৮ অক্টোবর গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে বর্ষার বিদায় নেওয়ার কথা। কিন্তু তা দেরি হতে হতে অক্টোবরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহ হয়ে যাচ্ছে। এ বারেও সেই রকম পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে আবহবিদদের অনুমান।
বর্ষার চিত্র যে বদলাচ্ছে, বহু দিন ধরেই তা জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। বছর দুই আগে মৌসম ভবন এবং তাদের রিপোর্ট সেই কথা মেনে নিয়েছে। কিন্তু এই বদলের পিছনে জলবায়ু বদলই দায়ী কি না, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় মৌসম ভবন। কিন্তু আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, বর্ষার বিদায়ে দেরি হলে ঋতুচক্রের ছন্দপতন হবেই। বর্ষার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে হিমেল হাওয়া বাংলায় ঢুকতে শুরু করে। সেই হাওয়ার হাত ধরেই জাঁকিয়ে বসে শীত। এ বার বর্ষার বিদায় যত ক্ষণ না সম্পূর্ণ হচ্ছে তত ক্ষণ সাগরের জোলো হাওয়া বাংলায় ঢুকবে। তার ধাক্কায় বাধা পাবে উত্তুরে হিমেল হাওয়া। ফলে হেমন্তের আগমনও বিলম্বিত হবে। পিছোতে পারে শীতের হাজিরাও।
এ দিকে নতুন নিম্নচাপের খবরে উদ্বিগ্ন রাজ্য প্রশাসন। কারণ, তার জেরে বৃহস্পতিবারই জল ঢুকেছে বিভিন্ন এলাকায়। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দক্ষিণবঙ্গে অতি ভারী বৃষ্টির ফলে নদ-নদীগুলি ভর্তি ছিল। রাজ্যে বৃষ্টি কমার পরে সেই জল ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছিল। ডিভিসি-কে বলা হয়েছিল দু’টি দিন অপেক্ষা করে তার পরে জল ছাড়তে। কিন্তু তারা শোনেনি। মন্ত্রীর অভিযোগ, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার বাহানা দিয়ে জল ছেড়েছে ডিভিসি। ফলে ডিভিসি অববাহিকায় থাকা জেলাগুলির একাংশে জল ঢুকেছে। তবে ডিভিসি-র দাবি, বাধ্য হয়েই জল ছাড়তে হয়েছে।