TMC

বাগনানে সত্তরোর্ধ ২ সমাজকর্মীকে মেরে হাড় ভাঙল দুষ্কৃতীরা, অভিযুক্ত তৃণমূল

স্থানীয়দের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা ওই এলাকার কুখ্যাত জমি এবং মাটি মাফিয়া। অভিযোগ, ওরা সবাই শাসক দলের আশ্রিত। আর সেই কারণেই তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশও নিষ্ক্রিয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ১৯:৫৭
Share:

দুষ্কৃতীদের মারে এ ভাবেই রক্তাক্ত হয়েছেন দুই সমাজকর্মী। চিত্ত মিশ্র (বাঁদিকে) এবং অশোক মণ্ডল।

বাঁশ, রড, কোদালের হাতল দিয়ে প্রায় দু’ডজন দুষ্কৃতী সকলের সামনে মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটাল সত্তরোর্ধ দুই বৃদ্ধকে। বাধা দেওয়া দূরে থাক, কেউ ন্যূনতম প্রতিবাদও করার সাহস দেখাতে পারেননি, যখন সামাজিক আন্দোলনের দুই কর্মীকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায় দুষ্কৃতীরা। সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার বাগনানে। ঘটনার পর ১২ ঘণ্টা কেটে গেলেও গ্রেফতার হননি কেউ।

Advertisement

স্থানীয়দের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা ওই এলাকার কুখ্যাত জমি এবং মাটি মাফিয়া। অভিযোগ, ওরা সবাই শাসক দলের আশ্রিত। আর সেই কারণেই তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশও নিষ্ক্রিয়। দুষ্কৃতীদের মারে গুরুতর আহত চিত্ত মিশ্র বাগনান নাগরিক সমাজ নামে একটি সংগঠনের নেতা। তিনি ‘বাগনান রেলযাত্রী সমিতি’ এবং ‘কৃষি জমি এবং পরিবেশ রক্ষা কমিটি’রও নেতৃত্বে রয়েছেন।

বাগনান নাগরিক সমাজের অন্যতম নেতা অভীক নাগ বলেন, ‘‘সোমবার বিকেলে চিত্তবাবু, অশোক মণ্ডল বাগনানের ঘোড়াঘাটা রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রেলযাত্রী সমিতির একটি মিটিং করছিলেন। সেখানেই ওই দুষ্কৃতীরা চড়াও হয়।” ওই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন শশধর করণ এবং মেহবুব আলম। শশধর বলেন, ‘‘ওরা চড়াও হয়ে চিত্তদা এবং অশোকদাকে রেখে সবাইকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলে।” অনেকেই এর পর ভয়ে পালিয়ে যান। অভিযোগ, প্রায় পঁচিশ জন যুবক ওই ঘরে ঢুকে চিত্তবাবু এবং অশোকবাবুকে টেনে বার করে। তার পর সকলের সামনেই শুরু হয় বেধড়ক মারধর।

Advertisement

আরও পড়ুন, আরএসএস-কে দিয়ে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা চলছে রাজ্যে, মেটিয়াবুরুজে বললেন মমতা

অভীকবাবুর অভিযোগ, যখন দুষ্কৃতীরা জমা হচ্ছিল, তখনই বাগনান থানায় ফোন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ কোনও কর্ণপাতই করেনি। ঘটনার সামান্য আগে একটি পুলিশের ভ্যান যায়। তাঁদেরকেও বলা হয় সম্ভাব্য হামলা নিয়ে। পুলিশ পাত্তা দেয়নি। পুলিশ ঘটনার পরে রক্তাক্ত অবস্থায় দু’জনকে গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।” নাগরিক সমাজের অন্য সদস্যদের অভিযোগ, ‘‘জাতীয় সড়কের দু’ধারে প্রায় জোর করে কৃষকদের কাছ থেকে জমি দখল করে সেই জমি বিভিন্ন কারখানার মালিককে বেচে দেওয়া হচ্ছে। আর সেই জমি দখল করছে এলাকার জমি মাফিয়ারা। শাসক দলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা শ্রীকান্ত সরকার সরাসরি যুক্ত ওই জমি কারবারে।”

অভীকবাবু বলেন, ‘‘জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করছিলেন চিত্তবাবু। তিনি ওই এলাকার খুব পরিচিত সমাজকর্মী। এর আগেও গত ডিসেম্বর মাসে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তখনও পুলিশকে জানানো হয়েছিল।”

আরও পড়ুন, তাঁকে ঘিরেও ঝামেলা, তবে তা দেব-দর্শনের

বাগনান-২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ এবং এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা শ্রীকান্ত সরকার অবশ্য গোটা অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার সময়ে আমি কলকাতায় ছিলাম। ফিরে থানায় গিয়ে ওই ঘটনা শুনি। সঙ্গে সঙ্গে আমি পুলিশে খবর দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে ওঁদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।” তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘‘অশোক মণ্ডল এক জন সক্রিয় সিপিএম কর্মী। ভোটের দিন তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ১৫৮ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী আমাদের কর্মীদের উপর ব্যাপক লাঠি চার্জ করে। সোমবার ওই এলাকার কয়েক জন যুবক সেই বিষয় নিয়েই কথা বলতে গিয়েছিলেন অশোকের সঙ্গে। সেখান থেকে তর্কাতর্কি হয়। তখন চিত্তবাবু এবং অশোক মণ্ডল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। তারই প্রতিবাদ করেন ওই এলাকার বাজার কমিটির লোকজন। সেই সময়তেই ধস্তাধস্তি এবং মারামারি হয়।” শ্রীকান্ত জানান, মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে কটু মন্তব্য করার জন্য তাঁরা ওই দু’জনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করবেন থানায়।

অন্য দিকে, উলুবেড়িয়া হাসপাতালে চিত্তবাবুর চিকিৎসা সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, অন্তত পাঁচ জায়গায় তাঁর হাত ও পায়ের হাড় ভেঙেছে।

(দুই বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, 'বাংলার' খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন