মেটিাবুরুজের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।
এই নির্বাচনে একটাই মন্ত্র, ‘‘মোদীকে হঠাও, দেশ বাঁচাও’’, সোমবার মেটিয়াবুরুজের নির্বাচনী সভায় বললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘রাজীব গাঁধী, নরসিংহ রাওয়ের মতো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করেছি, কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর মতো অভদ্র প্রধানমন্ত্রী দেখিনি।’’
মমতা আরও বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে কোনও কাজ করেননি নরেন্দ্র মোদী। বিমানে চেপে শুধু বিদেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। নিজের প্রচার ছাড়া কিছু বোঝেন না উনি।’’
গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে রবিবারও নরেন্দ্র মোদীকে একহাত নেন মমতা। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বাঙালির মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। সবসময় মিথ্যা কথা বলেন উনি।’’
আরও পড়ুন: গাড়িতে টানা তল্লাশি, প্রতিবাদে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে বসে পড়লেন ডায়মন্ডহারবারের বিজেপি প্রার্থী
এ দিন মমতা আরও বলেন—
গুজরাতের মু্খ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু পাঁচ বছরে দেশটার হাল কী করে ছেড়েছে। এই মোদী-শাহ আর চাই না। আজ ১৩ মে, ৩৪ বছরের রাজত্বের শেষে আজকের দিনেই সিপিএম-কে হটিয়েছিলাম। বিজেপিকেও তাড়িয়ে ছাড়ব। কত বড় সাহস, বলে কিনা বাংলায় এনআরসি করবে।আমি বলি, বাংলার লোকজন তোমাদের আগে তাড়াবে। আজ ওদের দলের সভাপতি এসে বলল আমি নাকি বাংলাকে কাঙাল বানিয়ে দিয়েছি! কাঙালের অর্থ জানে ওরা! বড় বড় কথা বলছ! যখন ক্ষমতা থাকবে না সব বেরিয়ে যাবে। তখন থোতা মুখ ভোঁতা হয়ে যাবে। কী করবে মোদী তুমি আমাকে? গলা কাটবে? খুন করবে? জেলে পাঠাবে? তোমাকে আমি থোড়াই কেয়ার করি। আমরা সবাই মিলে সরকার গঠন করব। বাংলায় তৃণমূল-কংগ্রেস ছাড়া কাউকে ভোট দেবেন না। দেশে যেখানে যাঁর ঘাঁটি শক্ত তাঁকে ভোট দিন। আমি চাই না মোদী ফের ক্ষমতায় আসুক। তা হলে দেশে আগুন জ্বলবে।গরমে কষ্ট হচ্ছে জানি। তার উপর রোজা চলছে। কষ্ট হচ্ছে জানি। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় কষ্ট মোদীকে হঠাতে ভোটটা দিন। বাচ্চা ছেলেও এত মিথ্যা কথা বলে না। ছোট ছেলে কাচের গ্লাস ভাঙলে মা বকে। আর এই বুড়ো খোকা দেশ ভাঙছে। কিন্তু প্রাণ থাকতে তা হতে দেব না। এত মিথ্যাবাদী প্রধানমন্ত্রী জীবনে দেখিনি। বাংলায় লাড্ডু পাবে বিজেপি, তাও আবার মাটির তৈরি। কাজু-কিশমিশ নয় লাড্ডুর ভিতরে কাঁকর মিশিয়ে দেব। গুজরাতে হার্দিক পটেলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দিল না ইচ্ছাকৃত ভাবে। গুজরাত দাঙ্গার পর প্রধানমন্ত্রী হয়ে চাওয়ালা সেজে বসেছিল। এখন আবার চৌকিদার হয়েছে। আগে হাতে ছিল কেটলি, এখন সঙ্গে রয়েছে এক জেটলি, যা কখন মন্ত্রী থাকে আর কখন থাকে না বোঝা দায়। দিল্লি, অসম থেকে চার-পাঁচজন লোককে নিয়ে এশে তাজ বেঙ্গল হোটেলে বসিয়ে রেখেছে। আরএসএসকে নিয়ে এসেছে। টাকা ছড়িয়ে নির্বাচনের সময় ডায়মন্ড হারবারে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা চালিয়েছে। সবাইকে সিবিআই, ইডি-র ভয় দেখিয়ে রেখেছে। শোনো মোদীবাবু, তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে। আগেও বলেছি, এখনও বলছি। মোদী আর বিজেপিকে নিরাপত্তা দিতেই এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাতে হয়েছে। এত বিশৃঙ্খলা আগে কখনও হয়নি। বুথে গিয়ে বিজেপিকে ভোট দিতে বলছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিজেপি একটা অভদ্র দল। পাঁচ বছরে নোট বাতিল করে দেশ লুটে নিয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে, পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে। ৪৫ বছরে সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব মোদীর আমলে। ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছে। একটা কথা বার বার বলি আমি, আমার বাড়িতে কখনও অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে শেখায়নি। অভিষেকে ছোটবেলায় রবীন্দ্রজয়ন্তী নজরুলজয়ন্তী করাতাম। সর্বধর্ম সমন্বয় শিখিয়েছি ওদের। আমার একটা ভাইয়ের স্ত্রীর মা সিপিএম করেন। ওরা আমাকে সংস্কৃতি শেখাবে? আমার এক ভাইয়ের ছেলের পৈতের সময় ববি হাকিম আর ওর স্ত্রী ভাইপোর মুখ দেখেছিল। মুসলিম হয়ে ও কেন আমার ভাইপোর মুখ দেখল, এ কথা কখনও মাথাতেও আসেনি আমার। নোংরা রাজনীতি করে টিভি চ্যানেলগুলি। বলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিমদের তোষণ করে। এর অর্থ কী? ওরাও আমার ভাই, তোষণ করার কী আছে? কোথায় ছিলেন আপনারা? যখন সিপিএম-এর লোকেরা আমার উপর গুলি চালিয়েছিল, তখন কে বাঁচিয়েছিল আমাকে? আখতার আলি। তাই আমাকে এ সব শেখানোর দরকার নেই। বাংলায় এসে মিথ্যা বলছেন মোদীরা। বলছেন, আমি নাকি দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো করতে দিই-না। ওরা জানে মা দুর্গাকে কেমন দেখতে? আরও পড়ুন: ১ কোটি টাকা নিয়ে দিলীপ ঘোষের আপ্তসহায়ক ধৃত আসানসোলে কয়েকটা চ্যানেল বলছে, বাংলায় হিন্দুরা নাকি ভোট দিতে পারছেন না। মনে রাখবেন ভবিষ্যতে এমন মিথ্যা বললে মামলাও হতে পারে। আমাদের এখানে হিন্দু-মুসলিম রা অশান্তি বাধায় না। মোদীর টাকা খেয়ে তোমরা এ সব মিথ্যা ছড়াচ্ছ। এদের আর কোনও কাজ নেই, শুধু হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে ঝামেলা বাধাতে চায়। পাঁচ বছরে কোনও কাজ করেননি মোদী, বরং নোট বাতিল করেছেন। আরএসএস-কে টাকা দিয়ে ডায়মন্ড হারবারে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করছে। দিল্লিতে বিজেপির বিরুদ্ধে অথচ বাংলায় বিজেপির সঙ্গে সিপিএম। ধর্মের নামে রাজনীতি করছে বিজেপি।বাঙালিদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করতে চাইছেন মোদী। এই মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় দাঁড়িয়ে হিন্দু মন্ত্র উচ্চারণ করলেও কেউ কিছু বলবেন না আমাকে। এটাই বাংলার সংস্কৃতি। এখানে সবধর্মকে সমান স্বীকৃতি দেওয়া হয়। নিজের প্রচার বোঝেন মোদী। মোদী জামা, মোদী জ্যাকেট, মোদী সিনেমা, কিছু বাকি নেই। নির্বাচন মিটলে জুতোর দোকান খুলে দেব। মোদী জুতো পরে ঘুরে বেড়াবেন সকলে। মোদী আর তাঁর বন্ধু শুধু মিথ্যা কথা বলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy