গত দু’মাসে রাজ্যে মোট ১৭টি চটকল বন্ধ হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় দেড় লক্ষ শ্রমিক। এগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য শাসক দলের শ্রমিক নেতাদের একাংশকেই কাঠগড়ায় তুলছেন চটকল মালিকরা। তাঁদের অভিযোগ, ওই নেতা ও বহিরাগতদের তোলা আদায় এবং তাণ্ডবের চাপেই তাঁরা কারখানাগুলি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার নবান্নে এসে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিগোষ্ঠীর সামনেই এই অভিযোগ করলেন বন্ধ চটকলের মালিকেরা। চটকল সমস্যার সমাধান করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মন্ত্রিগোষ্ঠীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রিগোষ্ঠীতে রয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু।
অন্যান্য শিল্পের মতো এ রাজ্যে চটশিল্পের দুরবস্থাও নতুন কিছু নয়। তার মধ্যেও যে ক’টি চটকল এখনও টিকে ছিল, গত দু’মাসে তাদের ১৭টিতে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজ্য সরকার নড়ে বসেছে। শ্যামনগর নর্থ জুটমিল, ভিক্টোরিয়া জুটমিল, নদিয়া জুটমিল, কামারহাটি জুটমিল-সহ এই ১৭টি কারখানার মালিক পক্ষই এ দিন বৈঠকে ছিলেন। কারখানাগুলি খোলার ব্যাপারে কী করা যায়, তা খতিয়ে দেখতেই এ দিন বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রীদের সামনে বসেই কারখানার মালিকরা একে একে জানাতে থাকেন, কারখানা খুলে রাখার পথে প্রধান অন্তরায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাই। অভিযোগ, এঁদের মধ্যে রয়েছেন আইএনটিটিইউসির স্থানীয় নেতা, দলের ব্লক সভাপতি, পুর প্রতিনিধি এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিধায়কও। মালিকদের দাবি, এই নেতারা কারখানা থেকে মোটা টাকা চাইছেন। দাবি মতো টাকা না পেলে কারখানায় হামলা হচ্ছে।
রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে তোলাবাজি আর সিন্ডিকেট-দৌরাত্ম্যের অভিযোগও অবশ্য নতুন নয়। কখনও জামুড়িয়ার শ্যাম সেল কারখানায়, কখনও দুর্গাপুরের প্রতাপপুরে নির্মীয়মাণ কাগজকলে কাজ থমকে গিয়েছে এই একই অভিযোগে। গত বছরে কাটোয়ায় কিসান মান্ডি তৈরির কাজ বন্ধ হতে বসেছিল ‘তোলাবাজি’র চাপে। দুর্গাপুরের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এক সময় দলের তৎকালীন ‘নম্বর টু’ মুকুল রায়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, দলীয় নেতারা তোলাবাজিতে যুক্ত। কিন্তু এই প্রথম সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বকে একেবারে সামনাসামনি একসঙ্গে ১৭টি কারখানার মালিকদের মুখে শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনতে হল।
মালিকরা জানালেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা, যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে উৎপাদনের হার বজায় রাখা যাচ্ছে না। তৃণমূলী তাণ্ডবের ফলে কয়েক কোটি টাকার কাঁচামালও নষ্ট হয়েছে। মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে মালিকরা অভিযোগ করেছেন, এই ধরনের অত্যাচার সহ্যের বাইরে চলে যাওয়াতেই একে একে ১৭টি কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এ রকম চলতে থাকলে আগামী দিনে আরও কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছে চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ।
মালিকদের অভিযোগ শুনে এ দিন রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যান মন্ত্রীরা। পরে মন্ত্রিগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান অমিত মিত্র বলেন, ‘‘বিকেল সাড়ে চারটে থেকে সওয়া ছ’টা পর্যন্ত বৈঠক চলেছে। মালিকদের বক্তব্য মন দিয়ে শুনেছি। তবে এ দিন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’’ তিনি জানান, আগামী মঙ্গলবার চটকল সংগঠন, চালকল সংগঠন, কেন্দ্রীয় জুট কমিশনার এবং খাদ্য, কৃষি, শ্রম ইত্যাদি দফতর বৈঠকে বসবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওই বৈঠকেই সব ক’টি বিষয় খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোনও মতেই কারখানা বন্ধ রাখা যাবে না।’’