প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
কর্নাটকে কাজ করতে গিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত্যু হল পশ্চিমবঙ্গের সাত জন পরিযায়ী শ্রমিকের। তাঁরা প্রত্যেকেই মুর্শিদাবাদের বহরমপুর ব্লকের বাসিন্দা। প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীর উদ্যোগে রবিবারই পাঁচ জনের দেহ ফিরেছে তাঁদের গ্রামে। বাকি দু’জনের দেহও ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন অধীর। মৃতদের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করার জন্যও কর্নাটকের প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন তিনি।
বহরমপুরের নগড়াজোলের পাঁচপীরতলা এলাকার বাসিন্দা ওই সাত শ্রমিক কাজের সন্ধানে কর্নাটকে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি সেখানে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে ওই সাত শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হন। তাঁদের শরীরের বেশির ভাগ অংশই পুড়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রাখা হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যাওয়ায় একে একে সাত জনেরই মৃত্যু হয়। নিহতদের নাম মিনারুল শেখ, জিয়াবুল শেখ, তাজিবুল শেখ, জাহেদ আলি, হাসান মল্লিক, নূরজামান শেখ এবং সফিজুল শেখ।
সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের এক প্রাক্তন জেলাশাসক পরবর্তী সময়ে কর্নাটকের মুখ্যসচিব হয়েছিলেন। কিছু দিন আগেই তিনি অবসর নেন। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর অধীর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বস্তুত, কর্নাটকের যে হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ভর্তি ছিলেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা, সেই হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ওই প্রাক্তন আমলার বিশেষ পরিচিত। কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুন্ডু রাওয়ের সঙ্গেও কথা হয় অধীরের। কর্নাটকের মন্ত্রী তাঁকে আশ্বস্ত করেন, যে সংস্থা ওই শ্রমিকদের নিয়োগ করেছিল, তাদের থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার জন্যও উদ্যোগী হবে প্রশাসন।
গত সোমবার রাতে বেঙ্গালুরুর বিদাদি থানা এলাকায় মাইসুরু এক্সপ্রেসওয়ের ধারে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নির্মাণ সংস্থার আবাসনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ওই সাত শ্রমিকের। ঘটনার কথা জানার পর থেকে তাঁদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। অধীর বলেন, খবর পেয়েই আমি বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। সেখানকার সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে, হাসপাতালের বার্ন বিভাগের চিকিৎসক শঙ্করাপ্পনের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি আমাকে চিকিৎসার প্রেসিক্রিপশন পর্যন্ত পাঠিয়েছেন। তিনি বলছেন, দেখুন আমাদের এই ভাবে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু, ৮০ ভাগ পুড়ে গিয়েছে, বাঁচাব কী করে!”
নিহতদের দেহ বহরমপুরের পরিজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন অধীর। এ বিষয়ে কর্নাটকের প্রশাসনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথাবার্তাও চালাচ্ছেন তিনি। প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতির কথায়, “এর থেকে দুর্ভাগ্যের আর কিছু নেই। রুটিরুজি কামাতে বাইরের রাজ্যে গিয়ে যে ভাবে মৃত্যু হচ্ছে, এই মৃত্যুমিছিল বাংলায় বন্ধ হোক।”