State News

‘সঞ্জীবনীর থেকে এক নম্বর কম পাওয়ায় একটুও আফসোস নেই’

সকাল থেকেই বাড়িতে ভিড় লেগেই রয়েছে। আমাদের বাড়িটা পূর্ব সাতগাছিয়া থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে। যাতায়াতে বেশ অসুবিধা। তবে রেজাল্টের খবর পাওয়ামাত্র অনেকেই শুভেচ্ছা দিতে ছুটে এসেছেন।

Advertisement

শীর্ষেন্দু সাহা, মাধ্যমিকে দ্বিতীয়

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ১৪:৪৮
Share:

শীর্ষেন্দু সাহা। —নিজস্ব চিত্র।

আমাদের বাড়িতে টিভি আছে। কিন্তু, কেব্‌ল কানেকশন নেই। টিভি দেখিনি প্রায় দেড় বছর। প়ড়াশোনার ক্ষতি হবে। তাই বাবাকে বলেছিলাম, কেব্‌ল কানেকশন কেটে দিতে।

Advertisement

আজ সকালে পাড়ার বেশির ভাগ বাড়িতে যখন টিভিতে মাধ্যমিকের রেজাল্ট সরাসরি দেখাচ্ছিল, আমি তখন স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার কাকাদের ঘরেও সকাল থেকে টিভি অন ছিল। খবরটা প্রথম কাকা-ই দিলেন। সত্যি বলতে কী, ভীষণ আনন্দ হচ্ছিল। ক্লাস ওয়ান থেকে টেন— স্কুলে বরাবরই ফার্স্ট হয়ে এসেছি। তবে মাধ্যমিকে দ্বিতীয়! ৬৮৮ নম্বর। অনুভূতিটাই তো আলাদা।

সকাল থেকেই বাড়িতে ভিড় লেগেই রয়েছে। আমাদের বাড়িটা কালনার পূর্ব সাতগাছিয়া থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে। ঢাকা কলোনিতে। যাতায়াতে বেশ অসুবিধা। তবে রেজাল্টের খবর পাওয়ামাত্র অনেকেই শুভেচ্ছা দিতে ছুটে এসেছেন। পঞ্চায়েত প্রধান, জেলার সভাধিপতি, আত্মীয়স্বজন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীহাররঞ্জন সাহা, বন্ধবান্ধব— কে নেই! সঙ্গে আবার টিভিতেও সমানে ইন্টারভিউ দিতে হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন
মাধ্যমিকে প্রথম সঞ্জীবনী, দ্বিতীয় শীর্ষেন্দু, মেধা তালিকায় জেলার জয়জয়কার

এক জন সাংবাদিক জানতে চাইলেন, মাধ্যমিকে প্রথম সঞ্জীবনী দেবনাথের থেকে মাত্র এক নম্বর কম পেয়েছি। আফসোস হচ্ছে কি না? সত্যি বলছি, একটুও আফসোস হচ্ছে না। সে রকম ভাবে তো কোনও প্ল্যান করিনি, ভবিষ্যতে কী করব! তা পরে ভেবে দেখা যাবে। তবে আপাতত ঠিক করেছি, মাধ্যমিকের মতো সাতগাছিয়া স্কুল থেকেই উচ্চ মাধ্যমিকটা দেব। অঙ্ক নিয়ে পড়তে ভীষণ ভাল লাগে। তাই বোধহয় অঙ্ক নিয়েই পড়াশোনাটা চালিয়ে যাব।

মা-বাবার সঙ্গে শীর্ষেন্দু। —নিজস্ব চিত্র।

মাধ্যমিকের টেস্টে ৬৯৪ নম্বর পাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক নীহারবাবু জানিয়েছিলেন, আশপাশের কোনও স্কুলে কেউ কখনও এত নম্বর পায়নি। ফলে আমার উপর ওঁদের আশা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। তবে প্রদান শিক্ষকও জানালেন, রাজ্যের মধ্যে একেবারে যে দ্বিতীয় হব, তা তিনিও আশা করেননি।

আজ দুপুরে আবার আমাকে স্কুলে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে। এত বাজি ফাটানো হয়েছে। মঞ্চে বসে দারুণ লাগছিল। সেই সঙ্গে গত তিন মাসের কথাও খুব মনে হচ্ছিল। ভোর ৫টায় উঠে পড়া। মিনিট দশেকের ধ্যান করে চা খেয়ে পড়তে বসা। এর পর টিউশন। বাংলা, ইতিহাস, ভূগোল, ইংরেজি, অঙ্ক, বায়োলজি— টিউশনগুলো সত্যিই খুব কাজে এসেছে। সারাটা দিন পড়াশোনার মধ্যেই কেটেছে মাধ্যমিকের আগে। তবে বেশি রাত করে পড়তে পারি না আমি। ১১টা পরে পড়াশোনা বন্ধ করে শুয়ে পড়তাম।

এত পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকেও ফুটবল বা গল্পের বই ছাড়িনি। বা়ড়িতে টিভি না থাকলেও ফুটবলের খবরাখবর কিন্তু নিয়মিতই রাখি। লিয়োনেল মেসিকে দারুণ লাগে। কিন্তু এ বারের বিশ্বকাপে আমি জার্মানিকেই সাপোর্ট করছি। আর ভাল লাগে, ব্যোমকেশে ডুব দিতে। তবে এ বার সামনে আরও বড় পরীক্ষা। উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্টটাও ভাল করতে হবে। দেখা যাক, কী হয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন