Sovan Chatterjee

সিঁদুর আমিই পরতে বলেছি বৈশাখীকে, রত্নাকে জবাব শোভনের! বৈশাখীর বার্তা, শোভন তাঁর সুরক্ষাকবচ

সোমবার বিচ্ছেদ মামলার শুনানিতে আদালতে গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। ছিলেন রত্নাও। সেখানেই রত্নার বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর অভিযোগ আনেন বৈশাখী। পাল্টা আক্রমণ করেন রত্নাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:০১
Share:

দুপুর ১টা নাগাদ বৈশাখী নিজের ফেসবুকে শোভনের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন, যার শিরোনাম ‘আমার সুরক্ষাকবচ’। ফাইল চিত্র।

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিঁদুর পরতে বলেছেন তিনিই। সোমবার রত্না চট্টোপাধ্যায়ের তোলা প্রশ্নের জবাব মঙ্গলে এ ভাবেই দিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। ‘আমার সুরক্ষাকবচ’ বলে শোভনের এই জবাবি ভিডিয়ো ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বৈশাখী। সেই ভিডিয়োয় রত্নাকে শোভনের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আপনি (রত্না) এ সব নিয়ে প্রশ্ন তোলার কে?’’

Advertisement

সোমবার আলিপুর আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বৈশাখীকে লক্ষ্য করে একের পর এক মন্তব্য করেছিলেন বেহালা পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক রত্না। রত্না প্রশ্ন তোলেন, “কেন সিঁদুর পরেন বৈশাখী? ওঁর তো ডিভোর্স হয়ে গেছে। নিজের মেয়েটাকে কেন বার বার আমার স্বামীর সন্তান বলে সব জায়গায় পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করছেন?” তারই জবাব এল মঙ্গলবার দুপুরে। ১৬ মিনিটের কিছু বেশি সময়ের ওই ভিডিয়োর ছত্রে ছত্রে রত্নার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শোভন। পাশে দাঁড়িয়েছেন বৈশাখীর। ‘প্রাক্তন’ এবং ‘বর্তমান’-এর মধ্যে তুলনা টেনে জানিয়েছেন, কেন ৫ বছর ধরে তিনি বৈশাখীর সঙ্গেই। কেন ২২ বছরের সংসারের পরেও তিনি মনে করেন ২২ বছরের সেই সম্পর্ক ছিল তাঁর জীবনের ‘বড় ভুল’। শোভনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ফেসবুকে আসতে বাধ্য হলাম কয়েকটি ঘটনার জন্য। ...গতকাল ডক্টর বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে আদালত চত্বর থেকে যে ধরনের অঙ্গভঙ্গি করে ভীত সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা চলছিল, তা মেনে নেওয়া যায় না।’’

বিবাহবিচ্ছেদ মামলার শুনানিতে সোমবার আদালতে গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। উপস্থিত ছিলেন রত্নাও। সেখানেই রত্নার বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর অভিযোগ আনেন বৈশাখী। তিনি জানান, রত্না অহেতুক প্রচুর লোক নিয়ে আদালতে আসছেন। যাঁদের সঙ্গে আনছেন, তাঁরা বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখাচ্ছে তাঁকে। অনুমতি ছাড়া তাঁর ছবি তোলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বৈশাখী। এর পরই আদালত চত্বরে সংবাদমাধ্যমের সামনে বৈশাখীকে লক্ষ্য করে পর পর বেশ কিছু মন্তব্য করেন রত্না। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “ভয়ের কোনও কারণ নেই। উনি তো ছেলেধরা। কেউ ওঁকে কিছু করবে না।” শোভনের জবাব, ‘‘উনি বলেছেন বৈশাখী ছেলেধরা। আমি মনে করি ২২ বছর সংসার করার পর পাঁচ বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা আমি চেয়েছিলাম একটি কারণেই। কারণ ২২ বছর পর আমি বুঝতে পেরেছি, আমি একজন ছেলেধরার অভ্যাসে অভ্যস্ত মহিলার সঙ্গে বিয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি। আর যে দিন বুঝতে পেরেছি, সে দিনই বিচ্ছেদ চেয়ে মামলা করেছি।’’

Advertisement

রত্নাকে সোমবার বলতে শোনা গিয়েছিল, “উনি (বৈশাখী) নোংরা। এমনিতেই টিভিতে যে ভাবে নেচেছেন, ওঁদের কেউ ভদ্রলোক বলে না।” শোভনের কথায়, ‘‘আমি এখন জনপ্রতিনিধি নই। তবে যাঁর সঙ্গে আমার বিচ্ছেদের মামলা চলছে তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি যে ভাবে বৈশাখীকে আক্রমণ করেছেন তা একজন জনপ্রতিনিধিকে মানায় না।’’ রত্নার ‘ভদ্রলোক’ মন্তব্য প্রসঙ্গে পাল্টা তাঁরই সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শোভন। বলেন, ‘‘আপনি প্রশ্ন করেছেন, ভদ্রলোকেরা কী বলেন? আপনি কী করে জানবেন? আপনি তো তাদের সঙ্গে মেশেন না। যে পিকলু আপনার সঙ্গে কোর্টে আসছে তাকে আমি অপছন্দ করতাম। তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী যখন বিধায়ক হননি তখন তাঁকে মারার জন্য গ্রেফতার হয়েছিল এই পিকলু। আপনি সে কথা জানেন। আজ সে-ই আপনার ২৪ ঘণ্টার সহচর। ভদ্রলোকেরা বরং বলে, ‘তোমার জীবনে একটা বড় ভুল তুমি ওই বিয়ে করেই ডেকে এনেছ।’ আসলে বৈশাখী যে স্তরে যে সংস্কৃতির জগতে চলাফেরা করে, তার বিন্দুমাত্র কাছে আপনি পৌঁছতে পারবেন না। নিজেকে শোধরান। সবার সংশোধন হতে পারে। তবে আমি জানি না আপনি পারবেন কি না। কারণ নিজেকে যে জায়গায় নামিয়ে এনেছেন, সেখান থেকে উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’’

বৈশাখী তাঁর কন্যা ইরিনাকে শোভনের পিতৃপরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন রত্না। শোভনের জবাব, বৈশাখী তাঁর মেয়েকে আমার পিতৃপরিচয়ে বড় করতে চায়নি। তবে আমি চাই। বরাবর বলে এসেছি আমার তিন সন্তান— সপ্তর্ষি, সুহানি, ইরিনা। এঁদের তিন জনের প্রতিই আমি সমান দায়বদ্ধ। তবে আপনার মতো বৈশাখী কখনও আমার অন্য দুই সন্তানকে নিয়ে মন্তব্য করেননি। আপনি করেছেন। বৈশাখী তাঁর বিচ্ছেদের মামলায় অসুস্থ স্বামীর থেকে সন্তানপালনের অর্থও নেননি। কিন্তু আমি রোগশয্যায় থাকাকালীন আপনি আমার সন্তানদের হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি থেকে আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা বুঝে নেওয়ার জন্য।’’

এমনকি রত্নার তাঁকে ‘আমার স্বামী’ বলাও যে শোভনের পছন্দ নয়, তা বুঝিয়ে দিয়ে শোভন বলেছেন, ‘‘আপনিই বলেছেন, আমি হলাম কুলাঙ্গার। এটা বলতে আপনার বাধেনি। আমাকে দুশ্চরিত্র বলতেও বাধেনি। বিভিন্ন বিশেষণে আঘাত করেছেন যাঁকে, তাঁকে নিজের স্বামী বলেন কী করে? আমার লড়াই চলছে, সে দিন আর বেশি দূরে নেই, যে দিন আপনার নামের পাশ থেকে চট্টোপাধ্যায় সরে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন