যত ক্ষণ ভাই আছে, কাশ্মীরে মজাসে ঘুরুন

বিমানবন্দর পুরো বরফে ঢাকা। নেমে ঠান্ডায় থরথরিয়ে কাঁপছি। বাইরে এসে দেখি এক অসাধারণ সুপুরুষ আমার নাম লেখা কাগজ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। পরিচয় হতে জানলাম, উনি সেলিম ভাই। আগামী ছ’দিন ওঁর গাড়িতেই ঘুরব কাশ্মীর। 

Advertisement

শুভদীপ চক্রবর্তী, চক্ষু বিশেষজ্ঞ

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৪
Share:

স্বাগত: পর্যটন েমলায় কাশ্মীরের স্টলের সামনে উৎসুক পর্যটক। শুক্রবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র

আমাদের বিবাহবার্ষিকী ছিল ১৭ ফেব্রুয়ারি। বিশেষ দিনটা কাশ্মীরে কাটাব, ঠিক করেছিলাম আগে থেকেই। কলকাতা থেকে রওনা দিয়েছিলাম ১২ ফেব্রুয়ারি। ১৩-য় শ্রীনগরে যখন পৌঁছলাম, তখন ঘড়িতে সকাল সাড়ে ১১টা। বিমানবন্দর পুরো বরফে ঢাকা। নেমে ঠান্ডায় থরথরিয়ে কাঁপছি। বাইরে এসে দেখি এক অসাধারণ সুপুরুষ আমার নাম লেখা কাগজ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। পরিচয় হতে জানলাম, উনি সেলিম ভাই। আগামী ছ’দিন ওঁর গাড়িতেই ঘুরব কাশ্মীর।

Advertisement

সে দিন হোটেলে ঢোকার আগেই পরী মহল আর চশমে-শাহি ঘুরে এলাম। এপ্রিলে সবুজে ঢাকা থাকে, আমরা দেখলাম বরফ চাদরে মোড়া। সব সেরে সেলিম ভাই হোটেলে ছেড়ে দিয়ে বলে গেলেন, পর দিন অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় আসবেন। ১৪-য় আমরা বেরিয়ে পড়লাম উলার লেক-এর উদ্দেশে। শিকারা নিয়ে ভাসলাম সেখানে। ফেরার পথে একটা চায়ের দোকানে কিছু স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা হল। এক জন বললেন, ‘‘বঙ্গালী লোগ বহত আচ্ছা হ্যায়, মন সে সাফ হ্যায়। আপ লোগোসে হাম লোগোকা বহত কুছ মিলতাজুলতা হ্যায়।’’ শুনে খুবই আনন্দ হল। বাংলার বাইরে বাঙালিকে রাজনীতি আর রসগোল্লার ঊর্ধ্বেও কেউ বোঝে!

ঘুরে-বেরিয়ে সে দিন ফিরতে প্রায় সন্ধে ছ’টা হয়ে গেল। সেলিম ভাই জানালেন, পুলওয়ামার কথা। তখনই শুনছি, ৩৫ জন জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। গুটিয়ে গেলাম শুনে, মনটা ভারী হয়ে গেল। এর পরে কাশ্মীরকে একেবারে অন্য ভাবে চিনলাম। যে অভিজ্ঞতা মনের কোণে সারা জীবন আগলে রাখব। হামলার কথা শুনে ভয় পেয়েছিল সায়ন্তনী (আমার স্ত্রী)। সেলিম ভাই গিন্নিকেই বললেন, ‘‘ডরিয়ে মত বহেনজি। আপ তো মেরা বহেন হো। আপ কা ভাই যব তক হ্যায়, আপ লোগ মজাসে ঘুম লিজিয়ে। আপ কো কুছ নহী হোগা।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: নারদ-কাণ্ডে চার্জশিট খুব শীঘ্রই, থাকছে রাজ্যের কয়েকজন মন্ত্রীর নামও

বাকি দিনগুলো গুলমার্গ, সোনমার্গ, পহেলগাম— সব ঘুরেছি। অনেক সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে, পুলওয়ামার সেই জায়গার পাশ দিয়ে তার দু’দিন পরে পহেলগামে গিয়েছি। কেউ এমন কিছু বলেননি, যাতে আমাদের ভয় করে। কাশ্মীরিদের সঙ্গে ওই ক’দিনে কথা বলে যতটুকু বুঝেছি, ৪৯টি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যাওয়ার দুঃখ রয়েছে তাঁদেরও। কাশ্মীরি মানেই জঙ্গি নন। ওঁরাও ভারতীয় হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চান। ওঁদের মতে, প্রশাসনের ৫% লোক অত্যাচার চালায়। তবে বাকি ৯৫% ভালদের কথাই মনে রাখেন কাশ্মীরিরা। টানা ছ’দিন কাটিয়েছি। এক দিন বন্‌ধ, এক দিন কার্ফু। তাতে কিছুই অসুবিধে হয়নি।

গুলমার্গে শুকনো ফলের দোকানে আড্ডা দিয়েছিলাম। অনেকে বললেন, ‘‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর পাকিস্তানের নিজের হল না, ওরা আমাদের কী আপন করবে? আমরা ভারতে মাটি পেতে চাই। চাই একটু সহমর্মিতা।’’ ওঁরা জানালেন, এখানে শিক্ষার সুযোগ কম। শিল্প নেই। এমন অবস্থা... বাচ্চা ছেলেগুলো পাথর ছোড়ে।

১৯-এর সকালে সেলিম ভাইয়ের গাড়িতেই ফের বিমানবন্দর ফিরে আসা। উনিই জানালেন, কলকাতায় কাশ্মীরি চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। লজ্জায় মাথাটা নিচু হয়ে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন