আজ উত্তর দিনাজপুরে বিজেপির বন্‌ধ

শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে রণক্ষেত্র ইসলামপুর, গুলিতে মৃত ১ ছাত্র, সাসপেন্ড ডিআই

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাতে বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট ডিআই রবীন্দ্রকুমার মণ্ডল শিক্ষা দফতরকে অন্ধকারে রেখেই নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইসলামপুর শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:০৮
Share:

গুলিবিদ্ধ: তখনও বেঁচে আইটিআই পড়ুয়া রাজেশ সরকার। বৃহস্পতিবার ইসলামপুরের দাড়িভিটে। নিজস্ব চিত্র

শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ বাড়ছিল দু’দিন ধরেই। বৃহস্পতিবার দুই শিক্ষক যখন এসে স্কুলে যোগ দেন, তাতে যেন ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে। প্রথমে অবরোধ, তার পরে লাঠি, ইট-পাথর তো বটেই, বোমা-গুলিও চলে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিট হাইস্কুলে। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে আইটিআইয়ের ছাত্র রাজেশ সরকারের (২০)। পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এই সংঘর্ষে ৬ জন পুলিশ, ১০ জন ছাত্র ও ৪ জন শিক্ষক জখম হয়েছেন। পুলিশ অবশ্য গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘কেন এমন ঘটল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

পড়ুয়াদের অভিযোগ, স্কুলে বাংলা শিক্ষক কম রয়েছে, অথচ নিয়োগ করা হচ্ছে সংস্কৃত ও উর্দুর শিক্ষক। এই নিয়েই গত কয়েক দিন ধরে তারা ক্ষোভ জানাচ্ছিল। পুলিশ সূত্রে দাবি, তাদের পিছনে মদত ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশেরও। এ দিন যখন জানা যায় এর মধ্যেই এক জন সংস্কৃত ও এক জন উর্দুর শিক্ষক স্কুলে যোগ দিয়েছেন, তখন পড়ুয়ারা খেপে যায়।

স্থানীয় সূত্রে দাবি, পড়ুয়ারা প্রথমে স্কুলের ফটকে তালা ঝোলায়। তার পরে দুপুর দেড়টা নাগাদ ইসলামপুর-গোয়ালপোখর সড়ক অবরোধ করে। দু’ঘণ্টা পরে পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে এবং স্কুলে ঢোকার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে। পড়ুয়া এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ মিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করে। জখম হন একাধিক পুলিশ। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ সূত্রে দাবি, তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। স্থানীয় সূত্রে দাবি, পুলিশ গুলিও ছোড়ে। তাতেই মৃত্যু হয় রাজেশের।

Advertisement

দেখুন ভিডিয়ো

রাজেশের বাড়ি ওই এলাকায়। তাঁর পরিবার সূত্রে দাবি, তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। রাজেশের বাবা চাষ করেন। আইটিআই-তে পড়ার পাশাপাশি পিকআপ ভ্যান চালিয়ে রোজগার করতেন রাজেশ।

বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পড়ুয়াদের আন্দোলনে বহিরাগত তো বটেই, নিকটবর্তী গোলাপাড়া এলাকা থেকে দুষ্কৃতীরাও ঢুকে পড়েছিল। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি আজ, শুক্রবার উত্তর দিনাজপুর বন্‌ধের ডাক দিয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর রাজ্য জুড়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এসএফআই।

আরও পড়ুন: ও কথা শুনল না: মা

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাতে বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট ডিআই রবীন্দ্রকুমার মণ্ডল শিক্ষা দফতরকে অন্ধকারে রেখেই নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।’’ রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘স্কুলের আবেদন মেনেই শিক্ষক দেওয়া হয়েছিল।’’ প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডুর মোবাইল বন্ধ ছিল। পার্থবাবুর অভিযোগ, বিজেপি, আরএসএস অশান্তিতে ইন্ধন জুগিয়েছে। তারা মৃত্যুর রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে শুক্রবার ও শনিবার বন্‌ধ ব্যর্থ করতে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানাবে তৃণমূল, জানিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: ছুটে এসে দেখি, ছেলে নেই

তড়িঘড়ি শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইসলামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক কানাইয়ালাল অগ্রবাল। তিনি বলেন, ‘‘দু’দিন আগেই যখন ছাত্ররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল, তখন ওই শিক্ষকদের কেন যোগ দেওয়ানোর ব্যবস্থা করা হল, বুঝতে পারছি না।’’ প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করার দাবি জানান তিনি।।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন