ছাত্র সংঘর্ষ রুখব রং না-দেখেই: পার্থ

প্রথমে ছিল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তর্জন, হুঁশিয়ারি। তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। ছাত্র-সংঘর্ষ চলেছে সমানে। তার পরে ছাত্র সংগঠনে খেয়োখেয়ি বন্ধ করতে কড়া নির্দেশ আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৩
Share:

প্রথমে ছিল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তর্জন, হুঁশিয়ারি। তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। ছাত্র-সংঘর্ষ চলেছে সমানে। তার পরে ছাত্র সংগঠনে খেয়োখেয়ি বন্ধ করতে কড়া নির্দেশ আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। কিন্তু তাতেও যে কলেজে কলেজে ছাত্র-সংঘর্ষ সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায়নি, বুধবার তা স্বীকার করে নিলেন শিক্ষামন্ত্রী।

Advertisement

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিক্ষামন্ত্রীর দাওয়াই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষা করতে পতাকার রং না-দেখেই কঠোর পদক্ষেপ করা হবে। তাতেও অবশ্য কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে রাজ্য সরকারই সন্দিহান। তাই অদূর ভবিষ্যতে ছাত্র সংসদের নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তাভাবনাও শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্য সরকারের অন্দরে।

পার্থবাবুর কাছে যেটা বেশি বিড়ম্বনার, তা হল, সম্প্রতি বিভিন্ন কলেজে ছাত্রভোট নিয়ে সংঘর্ষের যে-সব ঘটনা ঘটেছে, তার ৯০ শতাংশই হয়েছে তাঁদের দলের ছাত্র শাখা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র অভ্যন্তরীণ গোলমালের জেরে।

Advertisement

নিজেদের দলের ছাত্র সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পার্থবাবুরা কি ব্যর্থ?

শিক্ষামন্ত্রীর আক্ষেপ, ‘‘এটা অনেক পুরনো রোগ। এত বলছি, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন। তবু সম্পূর্ণ বন্ধ হচ্ছে না। কোথাও কোথাও এই ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে।’’

কী ভাবে কমবে ছাত্র সংগঠনের এই আত্মক্ষয়ী সংঘর্ষ?

‘‘আমরা ঠিক করেছি, পতাকার রং না-দেখে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবো,’’ নিদান হেঁকেছেন পার্থবাবু।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামপুর কলেজে টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠী এমন ভাবে পরস্পরের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছে যে, শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। গত ১৯ জানুয়ারি টিএমসিপি-র দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। একই ভাবে ইসলামপুর কলেজের সংঘর্ষে রক্তাক্ত হন পড়ুয়ারা। যা নিয়ে রাজ্য সরকারকে বারবার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে এবং হচ্ছে। কারণ, দু’টি ক্ষেত্রেই কার্যত বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ দখল করেছে টিএমসিপি। কিন্তু কোন গোষ্ঠীর প্রভাব বজায় থাকবে এবং ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, তা নিয়েই গন্ডগোল বাধে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যার সমাধানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হন শিক্ষামন্ত্রী। টিএমসিপি-র বর্তমান সভানেত্রী জয়া দত্ত এবং প্রাক্তন সভাপতি অশোক রুদ্র গোষ্ঠীর দলবলকে নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করতে হয় পার্থবাবুকে। শেষে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় মুখবন্ধ খামে ছাত্র সংসদের কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সাধারণ ভাবে নির্বাচিত পড়ুয়াদের মধ্য থেকেই কমিটি ঠিক করার কথা। কিন্তু গন্ডগোলে তা করা সম্ভব হয়নি।

শিক্ষা শিবিরের খবর, রাজ্যে সাড়ে পাঁচশোরও বেশি কলেজ আছে। তার মধ্যে মাত্র আটটিতে ছাত্র সংসদ দখল করেছে এসএফআই। বাকিগুলির মধ্যে বেশির ভাগ কলেজেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে টিএমসিপি। কিন্তু গোষ্ঠী-কাজিয়ায় বারবার উত্তাল হয়ে উঠছে শিক্ষাঙ্গন। কলেজের টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর থেকে রক্তপাত পর্যন্ত সবই হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্যের পরে বক্রোক্তি করতে ছাড়ছেন না বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতারা। এসএফআইয়ের রাজ্য সভানেত্রী মধুজা সেনরায় বলেন, ‘‘আসল কথা হল, টিএমসিপি-র গুন্ডা বাহিনীকে মুখ্যমন্ত্রীও আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। সেই জন্য পুরনো রোগের কথা বলে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন শিক্ষামন্ত্রী।’’

আরও পড়ুন:

টাকা নিয়ে বচসাতেই ‘খুন’ রোশন: পুলিশ

শাসক দলের ছাত্র সংগঠন নিজেদের মধ্যে এ ভাবে লড়ছে কেন? কী বলছে তাদের বিভিন্ন গোষ্ঠী?

এর জন্য ছাত্র সংগঠনের বাইরের কিছু দলীয় নেতানেত্রীর দিকে আঙুল তুলছে টিএমসিপি-র একাংশ। তাদের অভিযোগ, ছাত্র-সংঘর্ষের বেশির ভাগ ঘটনাতেই দলের বিধায়ক, ব্লক সভাপতি, কাউন্সিলরেরা ঢুকে পড়ছেন। তাতে সংঘর্ষের মাত্রা বেড়ে গিয়ে পরিস্থিতি ছাত্র সংগঠনের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তাই সংগঠনের ওই অংশের দাবি, দল আগে ওই সব ‘মাথা’‌কে (বিধায়ক-কাউন্সিলর-ব্লক সভাপতি...) ঠিক করুক।

তবে এই সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘এ বার থেকে যখন যেখানে যা হবে, সব ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে দলের সঙ্গে আলোচনা করে।’’

ছাত্রভোট তুলে দেওয়ার সম্ভাবনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এসএফআই। ওই সংগঠনের তরফে জানানো হয়, শাসক দল দু’বছর ধরে বেশির ভাগ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভোট বন্ধ রেখেছিল। যে-ক’টা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট হয়েছে, তার বেশির ভাগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন। কিন্তু যেখানে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, সেখানেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ হেরে গিয়েছে। সেই জন্যই সরকার চাইছে না, ছাত্র সংসদের নির্বাচন হোক। ছাত্রভোট সত্যি সত্যি বন্ধ করে দিলে তারা অভিভাবকদের নিয়ে লড়াইয়ে নামবে বলে
জানিয়েছে এসএফআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন