ভেতো বাঙালির ছেলেমেয়েরাই স্কুলের মিড-ডে মিলে ভাত পাচ্ছে না!
কোথাও গুড়-জল দিয়ে মাখা ছাতুর গোলা। কোথাও নিম্ন মানের কেক বা ডাল-পোস্ত। কোথাও আবার সয়াবিনের বড়ি। জেলায় জেলায় প্রাথমিক স্কুল ও শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের মিড-ডে মিলে মিলছে না ভাত। খাদ্য দফতরও স্বীকার করছে, রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে ১৭টিতেই মিড-ডে মিলের চালের পর্যাপ্ত জোগান নেই।
এই নিয়ে খাদ্য দফতর দুষছে ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া বা এফসিআই-কে। আবার এফসিআই দায়ী করছে খাদ্য দফতরকে। রাজ্যের অভিযোগ, এফসিআই ঠিকমতো চাল সংগ্রহ করেনি। এফসিআইয়ের পাল্টা অভিযোগ, কেন্দ্রের চাল নিয়ে বসে আছে রাজ্য। এফসিআই-কে সেই চাল ছাড়ছে না বলেই যত বিপত্তি।
এই তরজার মধ্যে রাজ্যের খাদ্য দফতর জানাচ্ছে, মিড-ডে মিলের সঙ্কট কাটাতে তারা নিজেদের মজুত থেকে ৪৬ হাজার ৪০৯ টন চাল এফসিআই-কে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবারেই এই সংক্রান্ত ফাইল নবান্নে মুখ্যসচিবের কাছে জমা দিয়েছে খাদ্য দফতর।
রাজ্যে প্রাথমিক স্কুল ও শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে মিড-ডে মিলের জন্য বছরে সাড়ে ছ’লক্ষ টন চাল লাগে বলে খাদ্য দফতরের হিসেব। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, এফসিআই বেশির ভাগ জেলাতেই মিড-ডে মিলের চাল দিতে পারছে না। তারা চাল দিচ্ছে শুধু বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই বর্ধমান, দার্জিলিং ও কালিম্পঙে।
খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, এফসিআই তাঁর দফতরের কাছে রাজ্যের বাকি সব জেলায় মিড-ডে মিলের জন্য ৪৬ হাজার ৪০৯ টন চাল চেয়েছিল। সেই চাল দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি এক জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য দফতর। ওই চাল দিয়ে ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি— এই তিন মাসের চাহিদা সামাল দেওয়া যাবে। রেশনে এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে দেওয়ার পরেও রাজ্যের কাছে এখন দু’লক্ষ টন চাল মজুত আছে। তার থেকে এফসিআই-কে চাল দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় খাদ্য দফতর।
জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘আমিও তো মেয়ের বাবা। কত ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে। ওদের জন্য আগে স্কুলে স্কুলে মিড-ডে মিল ফের ঠিকঠাক করে চালু করতে হবে। তাই আমরা চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ মন্ত্রীর বক্তব্য, এফসিআই ঠিকমতো চাল সংগ্রহ করেনি বলে সমস্যা হচ্ছে।
‘‘এ-সব দাবি হাস্যকর। রাজ্য সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অসত্য দাবি করছে,’’ বলছেন এফসিআইয়ের পশ্চিমবঙ্গের জেনারেল ম্যানেজার রাজেশ চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, বিকেন্দ্রীভূত সংগ্রহ ব্যবস্থায় কেন্দ্রের হয়ে রাজ্য সরকারই পশ্চিমবঙ্গে চাল কিনে সংগ্রহ করে মিড-ডে মিল এবং অন্যান্য বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জন্য। পরে কেন্দ্র চালের দাম এবং অন্যান্য খরচ বাবদ রাজ্যকে টাকা মিটিয়ে দেয়। সেই খাতে বা সেন্ট্রাল পুল-এ রাজ্যের সংগ্রহে চার লক্ষ ২৯ হাজার টন চাল মজুত আছে। যা আসলে কেন্দ্রের চাল, রাজ্য তার মজুতদার মাত্র। রাজেশের কথায়, ‘‘রাজ্য আমাদের ওই চাল ছাড়ছে না বলেই সমস্যা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এফসিআইয়ের নিজস্ব সংগ্রহে ৪০ হাজার টন চাল আছে।