লজ্জা! ধিক্কার! প্রতিবাদ, পথে আইআইটি

জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হানার প্রতিবাদে বম্বে, কানপুর, মাদ্রাজ আইআইটি-র পরে মঙ্গলবার পথে নামলেন খড়্গপুর আইআইটি-র পড়ুয়ারাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:১৮
Share:

মৌনী-মুখর: ক্যাম্পাসের বাইরেই জমায়েত খড়্গপুর আইআইটির পড়ুয়াদের। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

হাতের প্ল্যাকার্ডে উজ্জ্বল ‘এই জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ আমার দেশ নয়’। কোনও পোস্টারে লাল কালিতে লেখা ‘পুলিশ তুমি মারবে যত, ছাত্র-যুব জুটবে তত’।

Advertisement

মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রায় নীরবেই হল প্রতিবাদ জমায়েত। মাঝে শুধু এক সুরে ছাত্রদের গলা উঠল— ‘ওরে হল্লা রাজার সেনা, তোরা যুদ্ধ করে করবি কি তা বল’।

জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হানার প্রতিবাদে বম্বে, কানপুর, মাদ্রাজ আইআইটি-র পরে মঙ্গলবার পথে নামলেন খড়্গপুর আইআইটি-র পড়ুয়ারাও। তবে ক্যাম্পাসে নয়, এ দিন সন্ধ্যায় পুরীগেট এলাকায় ঘণ্টা দেড়েক জমায়েত করেন আইআইটি-র একদল ছাত্রছাত্রী। এ দিন তাঁদের সঙ্গে শামিল হয়েছিলেন রেলশহরের বাসিন্দা রাজ্যের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু পড়ুয়াও। প্রতিবাদ জমায়েত থেকে বার্তা দেওয়া হয়— পড়ুয়ারা অপরাধী নন।

Advertisement

আগেই এই বিষয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছিল বম্বে আইআইটি। পরে মাদ্রাজ ও কানপুর আইআইটিতে প্রতিবাদ হয়। গত দু’দিন ধরে প্রস্তুতির পরে এ দিন পথে নামেন খড়্গপুর আইআইটি-র ছাত্রছাত্রীরা। প্রতিষ্ঠানের প্রথম গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্ল্যাকার্ড হাতে ‘পুলিশি বর্বরতা’র অভিযোগে সরব হন তাঁরা। সেই সঙ্গে নয়া নাগরিকত্ব আইনেরও বিরোধিতা করেন একাংশ পড়ুয়া।

সমাজ মাধ্যমে পেজ তৈরি করে এ দিনের প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন আইআইটি-র পড়ুয়ারা। সেই মতো বিকেল ৫টায় আইআইটি-র গেটের বাইরে জমায়েত হয়। অধিকাংশ ছিলেন গবেষক পড়ুয়া। বিটেক পড়ুয়ারাও ছিলেন। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গবেষক পড়ুয়া বিশ্বরূপ মণ্ডল বলেন, “আমরা জামিয়া মিলিয়ার পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি নিয়েছি। এমন ঘটনা যেন দেশে কোথাও না হয় সেই বার্তা দিতে চাইছি।” খড়্গপুরের পাঁচবেড়িয়ার বাসিন্দা কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষক ছাত্র শেখ আসলম আহমেদ, যাদবপুরের প্রাক্তন ছাত্র বিএসএনএল কর্মী ইজাজ খানেদের সুরও একই। আইআইটির পদার্থবিদ্যার গবেষক ছাত্রী রেবেকা সরকার জুড়লেন, “পড়ুয়াদের উপর পুলিশি অত্যাচার আমাদের কাছে লজ্জা। জামিয়া ও আলিগড়ের পড়ুয়াদের সিএএ বা এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদকেও আমরা সমর্থন জানাই।”

দেশের অন্য আইআইটিতে এই প্রতিবাদ ক্যাম্পাসে হলেও খড়্গপুরে কেন তা বাইরে হল প্রশ্ন উঠেছে। বিটেকের এক ছাত্র বলেন, “তবে ক্যাম্পাসে আন্তঃআইআইটি ক্রীড়া সম্মেলন চলায় আমরাও চাইনি কর্তৃপক্ষের কোনও অস্বস্তি হোক। তাই বাইরে বেরিয়েছি।” আইআইটির গবেষক ছাত্রী রেবেকা সরকার, মণিদীপা সেনগুপ্তদের আবার যুক্তি, “আমাদের আসল উদ্দেশ্য ছাত্র নিগ্রহের প্রতিবাদ। সেটা বাইরে এলে অনেক বেশি সার্থক হবে।”

এ প্রসঙ্গে আইআইটি-র রেজিস্ট্রার ভৃগুনাথ সিংহের বক্তব্য, “ক্যাম্পাসের বাইরে কিছু চায়ের দোকান রয়েছে। সেখানে বাইরের অনেকে আসেন। তাঁরা হয়তো কোনও বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আর সেটা দেখে হয়তো আমাদের পড়ুয়ারা ভিড় করেছেন, দু’একটি কথা বলেছেন। এর বেশি কিছু হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন