Sukanta Majumdar

West Bengal BJP: দিলীপকে সরিয়ে সুকান্তর হাতে রাজ্য বিজেপির ভার

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৩৭
Share:

বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। ফাইল চিত্র।

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রাজ্য সভাপতির পদ থেকে হঠাৎ দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে দিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে ঘোষণা করা হয়, রাজ্যে বিজেপির নতুন সভাপতি হচ্ছেন বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। দিলীপকে দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি করা হয়েছে।

Advertisement

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিজেপির ‘প্রত্যাশিত’ সাফল্য না পাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে দলকে ধরে রাখতে না পারা দিলীপের অপসারণের বড় কারণ। পাশাপাশি, লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে যে উত্তরবঙ্গে বিজেপি ভাল ফল করেছে, সেখানকার বাসিন্দা এবং আরএসএস ঘরানার তরুণ অধ্যাপককে রাজ্য সভাপতি হিসাবে বেছে নেওয়া হল। দিলীপও আরএসএসের প্রচারক থেকেই বিজেপির সাংগঠনিক দায়িত্বে এসেছিলেন।

দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিজেপির রাজ্য সভাপতির পদ নির্বাচনভিত্তিক এবং তার মেয়াদ থাকে তিন বছর। এক জন ব্যক্তি একটানা দু’দফায় মোট ছ’বছর সভাপতি থাকতে পারেন। তবে অনেক সময় নির্বাচন ছাড়াও অ্যাড হক ভিত্তিতে নিয়োগ হয়ে থাকে। তেমন করেই এসেছিলেন দিলীপও। পরে সাংগঠনিক নির্বাচনেও তিনি দ্বিতীয় বারের জন্য সভাপতি থেকে যান। সেই মেয়াদ ফুরনোর কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। যদিও ২০১৯-এ লোকসভা ভোট ছিল। তাই বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন পিছিয়ে যায় ২০২০-তে।

Advertisement

তাঁকে যে সরতে হবে, সেই ইঙ্গিত এ দিন দুপুরেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডার ফোনে পেয়েছিলেন দিলীপ। তাঁকে ফোনে নড্ডা বলেন, ‘‘আপনাকে সর্বভারতীয় দায়িত্বে আনা হবে।’’ দিলীপ অবশ্য বোঝেননি সেই ঘটনা এ দিনই ঘটে যাবে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রাজ্য সভাপতি হিসাবে তিনি সাংবাদিক সম্মেলনও করেন। অন্য দিকে, সুকান্ত এ দিনই সকালে দিলীপ-ঘনিষ্ঠ এক রাজ্য সাধারণ সম্পাদককে ফোন করে দলের সাম্প্রতিক ‘অধোগতি’ নিয়ে আলোচনা করেন। সুকান্ত ছিলেন বিজেপির উত্তরবঙ্গের যুগ্ম আহ্বায়ক। কিন্তু রাজ্য স্তরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেই ইদানীং তাঁকে রাখা হচ্ছিল।

জুলাই মাসে দিল্লিতে নড্ডার সঙ্গে বৈঠকে রাজ্য সংগঠনে রদবদলের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছিলেন দিলীপ। তবে সেই আলোচনায় সভাপতি পদের কথা ওঠেনি। যদিও তখনই খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, দিলীপকে সরানো হলে সুকান্ত বা দেবশ্রী চৌধুরীকে ভাবা হতে পারে। শেষ পর্যন্ত সুকান্তই সভাপতি হয়েছেন।

দলের নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্তকে টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন দিলীপ। তাঁর কথা, ‘‘চিরদিন কি কেউ সভাপতি থাকে? আমার ছ’বছর হয়ে গেল। নতুনদের তো কাজ দিতেই হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি বিজেপির কর্মী। যিনি রাজ্য সভাপতি হলেন, তিনি আমারও সভাপতি। তিনি সামনে থাকবেন। আমরা তাঁর নেতৃত্বে কাজ করব।’’ কবে দিল্লি গিয়ে নতুন দায়িত্ব নেবেন, এ দিন দিলীপ সে সম্পর্কে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত কলকাতায় আছি। মেদিনীপুরেও যাব।’’ আর গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক সুকান্ত নতুন দায়িত্ব পেয়ে বলেন, ‘‘আমি উত্তরবঙ্গের মানুষ হলেও আমার কাছে উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহল সব সমান।’’ এর থেকে পর্যবেক্ষকদের অনুমান, বিজেপির একাংশের মধ্যে উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করার যে দাবি উঠেছে, সুকান্ত তার সঙ্গে সহমত নন। যেমন সহমত ছিলেন না দিলীপ।

এ দিকে দলের মধ্যে যাঁরা দিলীপ বিরোধী বলে অভিহিত হন, তাঁদের দু’জন— মুকুল রায় ও বাবুল সুপ্রিয় এখন তৃণমূলে। বাবুল আনুষ্ঠানিক ভাবে টুইট করে দিলীপকে বলেছেন, ‘‘বিগত কয়েক বছর রাজ্য বিজেপির জন্য অনেক খেটেছেন। ভাল থাকুন দিলীপদা।’’

দিলীপকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরানো হতে পারে বলে দীর্ঘ দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। বস্তুত, দিলীপের বিরোধী শিবিরের নেতারা প্রায়ই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁর নামে অভিযোগ করতেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, দিলীপের ‘ভাষা-সন্ত্রাস’-এর জন্য শিক্ষিত মানুষ বিজেপিকে পছন্দ করেন না। সংগঠন নিয়েও দিলীপের সঙ্গে ওই নেতাদের মতান্তর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত প্রায়ই গড়াত। দলের অনেক পদাধিকারীর সঙ্গেও দিলীপের ‘দূরত্ব’ ছিল বলে চর্চা আছে।

দিলীপকে এ দিন বিজেপির যে পদ দেওয়া হয়েছে, সেই সর্বভারতীয় সহ সভাপতির গুরুত্ব নিয়েও দলে নানা মত আছে। দিলীপ-ঘনিষ্ঠদের মতে, তাঁকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হলে ‘সুবিচার’ হত। দিলীপ-শিবিরের অনেকের প্রশ্ন, বিধানসভা ভোটে রাজ্য নেতৃত্বের হাতে কিছুই ছিল না। তবু কি রাজ্য সভাপতির উপরেই দায় চাপল? দলের নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত এবং নতুন সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন