Sukanta Majumdar

কী করে মানুষকে বোঝাতে হয়, মমতার থেকে শিখতে আপত্তি নেই: আনন্দবাজার অনলাইনে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত

দিলীপ ঘোষের মুখেও রাজনীতির পাঠ নেওয়ার প্রশ্নে মমতার ‘প্রশংসা’ শোনা গিয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে দলের ‘ব্যর্থতা’র ব্যাখ্যায়, তৃণমূল নেত্রীর বিকল্প মুখ তুলে ধরতে না-পারাকে দায়ী করেছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:৫৯
Share:

মমতার থেকে শিখতে আপত্তি নেই, আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউব লাইভের অনুষ্ঠানে বললেন সুকান্ত। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সকলকে দেখেই তিনি রাজনীতির পাঠ নেন। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে শিখতেও তাঁর আপত্তি নেই। আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউব লাইভের অনুষ্ঠান ‘অ-জানাকথা’য় অকপটেই বললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ঘটনাচক্রে, অতীতে একাধিক বার বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা বর্তমানে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখেও ‘মমতা-বন্দনা’ শোনা গিয়েছে। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, তৃণমূলের সর্বময় নেত্রীকে ‘রোল মডেল’ করে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে এগোনোর পরামর্শ দিয়েছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

Advertisement

শুক্রবারের ওই লাইভে বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্তকে প্রশ্ন করা হয়, রাজনীতির পাঠশালায় তাঁর শিক্ষক কারা। জবাবে সুকান্ত বলেন, ‘‘বহু গুণী মানুষ আছেন। রামকৃষ্ণ তাঁর কথামৃতে বলেছেন, যাঁর কাছে শিখতে পারা যায়, তিনিই গুরু। তাই আমরা সকলের কাছেই শিখি। আমিও সকলকে দেখেই শিখি আমি। এমনকি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে শিখতেও আমার দ্বিধা নেই।’’ ওই মন্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন সুকান্ত। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) থেকে শেখা উচিত, কী ভাবে মানুষকে কনভিন্স করতে (বোঝাতে) হয়। উনি এত বছর মুখ্যমন্ত্রী থেকেছেন...।’’

রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে সুকান্তের পূর্বসূরি দিলীপের মুখেও রাজনীতির পাঠ নেওয়ার প্রশ্নে মমতার ‘প্রশংসা’ শোনা গিয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে দলের ‘ব্যর্থতা’র কথা বলতে গিয়ে মমতার ‘বিকল্প’ কোনও মুখ তুলে ধরতে না-পারাকেই দায়ী করেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যে আমাদের ব্যর্থতা হল, আমরা মানুষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প দিতে পারিনি। যেটা অন্য রাজ্যে পেরেছি। এখানে অক্ষমতা রয়েছে।’’

Advertisement

মমতার সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক মতানৈক্য থাকলেও রাজনীতিক হিসাবে তৃণমূলনেত্রী যে সফল, তা কার্যত স্বীকারও করে নিয়েছেন দিলীপ। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি যাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেকে অবাঞ্ছিত মনে করেছিল। যে মানুষের সঙ্গে আছে, যে মানুষের কথা বলবে, সে রাজনীতিতে থাকবে। অনেকে অনেক কিছু করেছেন। তাঁরা এখন হারিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন। আমি বিরোধিতা করি। কাজের সমালোচনা করি। কিন্তু তিনি আছেন। বিরোধীরা তাঁর সমালোচনা করলেও তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। মানুষ তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সাময়িক মতানৈক্য হতে পারে, অস্বস্তি হতে পারে, অশান্তি হতে পারে। কিন্তু দিনের শেষে সেটাই শেষ কথা, যেটা পাবলিক বলবে।’’

সুকান্ত দাবি করেছেন, মমতাকে ভোট দিয়ে রাজ্যের মানুষ ভুল করেছেন। কিন্তু মমতা গত বিধানসভা ভোটে একক ভাবে ২১৩টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। রাজ্যের মানুষই তাঁকে ভোট দিয়ে তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরিয়েছেন। তা হলে কি যাঁরা মমতা এবং তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁরা ‘মূর্খ’? সুকান্তের জবাব, রাজ্যের মানুষ মমতার আগে সিপিএমকেও সাড়ে তিন দশক ভোট দিয়ে ক্ষমতায় রেখে ‘ভুল’ করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনের মাস চারেকের মধ্যে রাজ্য সভাপতির পদ থেকে দিলীপকে সরিয়ে সুকান্তকে এনেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের সাংগঠনিক স্তরেও বদল আনা হয়েছে। আপাতত ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকেই পাখির চোখ করে এগোচ্ছে বঙ্গ বিজেপি। সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্য নেতৃত্বকে ‘শূন্য থেকে শুরু’ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, গত মে মাসে রাজ্য বিজেপির নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে খোদ শাহই সেই বার্তা দিয়েছেন। সেখানে‌ মমতাকে ‘রোল মডেল’ হিসাবেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলার মসনদ দখলের কোনও ‘শর্টকাট’ নেই। আন্দোলনের পথে বঙ্গ-বিজেপির নেতাদের চালিত করতে তৃণমূলনেত্রীর উদাহরণ বার বার টেনে এনেছিলেন তিনি। তা হলে কি শাহের নির্দেশ মতো মমতার দেখানো পথেই হাঁটতে চাইছেন রাজ্য বিজেপির বর্তমান নেতৃত্ব? তবে অনেকের অভিমত, দিলীপের কথায় মমতা সম্পর্কে মতামতের মধ্যে একটি ‘ইতিবাচক’ দিক থাকলেও সুকান্তের মন্তব্যে কার্যত তা ছিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন