Arvind Menon

ঝরঝরে বাংলা, ঝিঙে-আলু-পোস্ত: ভোটের আগে বঙ্গে হাজির বিজেপির নতুন ‘মেঘনাদ’

রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বললেন, ‘‘অরবিন্দ মেনন বাংলাটাও ঝরঝরে বলছেন। শুধু বলা নয়, বাংলা পড়তে এবং লিখতেও পারেন তিনি।’’ অমিত শাহ যে মেননকে বাংলার দায়িত্ব দিয়েছেন, তাঁর অন্যতম কারণ বাংলা ভাষায় মেননের এই পারদর্শিতাও।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:৪৯
Share:

গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।

সবে শেষ হয়েছে ধুন্ধুমার এক নির্বাচন। ত্রিপুরায় বাম-রাজ উড়িয়ে ইতিহাস তৈরি করেছে বিজেপি। নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে যে, মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন বিপ্লব দেব। কিন্তু বিপ্লবকে ঘিরে যত না হইচই, তার চেয়েও বেশি হইচই ছিল এক ‘মেঘনাদ’কে ঘিরে। তিনি সুনীল দেওধর। বাংলাটা মন দিয়ে শিখেছিলেন বিজেপির ত্রিপুরা বিজয়ের অন্যতম নেপথ্য নায়ক ওই মরাঠি। এ বার পশ্চিমবঙ্গেও হাজির আর এক ‘মেঘনাদ’। বাংলা আর বাঙালিয়ানায় বাঙালিদেরও চমকে দিচ্ছেন সেই মালয়ালি নেতা।

Advertisement

বিজেপির তরফে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তাঁর সহকারী হিসেবে মাস খানেক আগেই বাংলার দায়িত্ব পেয়েছেন অরবিন্দ মেনন। কৈলাস আপাতত নিজের রাজ্য মধ্যপ্রদেশের ভোট নিয়ে ব্যস্ত। তাই মেননই সামলাচ্ছেন দায়দায়িত্ব। আর মেননের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে চমকে যাচ্ছেন রাজ্য বিজেপির কেউ কেউ। মূলত যাঁরা নতুন দেখছেন মেননকে।

চলতি মাসের ২৩ তারিখে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে দিনভর বৈঠক চলছিল বিজেপি নেতৃত্বের। সর্বভারতীয় নেতৃত্বের তরফে ছিলেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিব প্রকাশ এবং বাংলার সহ-প্রভারী অরবিন্দ মেনন। দফায় দফায় বৈঠকের ফাঁকে সন্ধের দিকে একবার বৈঠকের ঘর থেকে বাইরে বেরোলেন মেনন। রীতেশ তিওয়ারিকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলেন এবং নিজের কর্মসূচি সংক্রান্ত কিছু কথা সেরে নিলেন। সেই কথোপকথন শুনে হতবাক রাজ্য বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেলের ইনচার্জ উজ্জ্বল পারেখ।

Advertisement

আরও পড়ুন: সিবিআই কাণ্ডের প্রতিবাদে রাহুলের বিক্ষোভে উত্তাল দিল্লি, বিক্ষোভ দেশের অন্য শহরেও

উজ্জ্বল নিজে হিন্দিভাষী। কিন্তু মেনন যে রকম ঠেট হিন্দিতে কথা বললেন, কলকাতায় বড় হওয়া উজ্জ্বল তাতে সড়গড় নন। মেনন সরতেই তাই রীতেশের কাছে নিজের বিস্ময় অকপটে প্রকাশ করলেন তরুণ বিজেপি নেতা।

বিস্ময়ের অবশ্য আরও বাকি রয়েছে। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বললেন, ‘‘অরবিন্দ মেনন বাংলাটাও ঝরঝরে বলছেন। শুধু বলা নয়, বাংলা পড়তে এবং লিখতেও পারেন তিনি।’’ অমিত শাহ যে মেননকে বাংলার দায়িত্ব দিয়েছেন, তাঁর অন্যতম কারণ বাংলা ভাষায় মেননের এই পারদর্শিতাও। এবং দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বাংলায় টুইটও করতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি।

এভাবেই বাংলায় টুইট করছেন অরবিন্দ। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণাবর্ত ফের নিয়ে আসছে বৃষ্টি, রাজ্য জুড়ে তাপমাত্রা কমবে

বারাণসীতে বড় হয়েছেন মেনন। সঙ্ঘের হয়ে ভারতের নানা প্রান্তে কাজ করেছেন। দীর্ঘ দিন মধ্যপ্রদেশে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে থেকেছেন। ফলে মাতৃভাষা মালয়ালমের মতো হিন্দি, ভোজপুরিতেও তিনি চোস্ত। কিন্তু বাংলা শিখলেন কী ভাবে? সায়ন্তন বললেন, ‘‘বারাণসীতে তো অনেক বাঙালি রয়েছেন। বারাণসী থেকে বিজেপির বাঙালি বিধায়কও ছিলেন। তাঁদের সূত্রেই বাংলাটা ছোট থেকেই জানেন অরবিন্দজি।’’

শুধু বাঙালির ভাষা অবশ্য নয়, বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের প্রতিও আকর্ষণ রয়েছে নিরামিষাশী অরবিন্দ মেননের। রীতেশ বললেন, ‘‘দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের প্রতি আলাদা কোনও আকর্ষণ নেই। যে রাজ্যে যেমন পান, তেমনই খান। কলকাতায় তো সব রকমই পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে যত বারই এসেছেন, তত বারই দেখেছি ঘরোয়া বাঙালি খাবারের প্রতি ওঁর একটা টান রয়েছে।’’

আরও পড়ুন: হাসপাতাল ‘মৃত’ ঘোষণার পরও ‘হৃদস্পন্দন’! পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ধোঁয়াশা

২০১৭-র সেপ্টেম্বরে অমিত শাহের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসেছিলেন অরবিন্দ মেনন। দু’দশকের বন্ধু রীতেশের সঙ্গে সে বারই চলে গিয়েছিলেন বাঙালি খাবারের জন্য বিখ্যাত এক রেস্তোরাঁয়। ভাত, ঝিঙে-আলু-পোস্ত, ডাল, বেগুন ভাজায় রসনাতৃপ্তি করেছিলেন দুজনে মিলে।

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বাংলায় এসে দু’বার দলীয় কর্মীদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন। এক বার নকশালবাড়িতে। আর এক বার উত্তর কলকাতার কাশীপুরে। নিখাদ নিরামিষ বাঙালি পদের আয়োজন ছিল অমিত শাহের জন্য। সে আয়োজনের নেপথ্যেও অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মেননের পরামর্শ ছিল বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

মেননের পরামর্শেই অমিত শাহের জন্য নিরামিষ পদের আয়োজন। ফাইল চিত্র।

এখন অবশ্য আর শুধুমাত্র অমিত শাহের সঙ্গী হিসেবে বাংলায় আসার ব্যাপার নেই মেননের। বাংলার দায়িত্বই এখন তাঁর। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক দফায় কলকাতায় এসেছেন অরবিন্দ মেনন। রাজ্য নেতৃত্বকে নিয়ে এবং বিভিন্ন গণসংগঠনকে নিয়ে একের পর এক বৈঠক করেছেন। ডিসেম্বরে এ রাজ্যে বিজেপির যে রথযাত্রা কর্মসূচির শুরু হবে, তার রূপরেখা চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। তবে সবটাই মোটের উপর নেপথ্য থেকে। মিডিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগ্রহ তেমন দেখাচ্ছেন না। রাজ্য বিজেপির কেউ কেউ তাই ‘মেঘনাদ’ আখ্যা দিচ্ছেন মেননকে। কেউ আবার বলছেন, ‘‘রাম তো আমাদের ছিলই, এ বার মেঘনাদও আমাদের। আর ঠেকায় কে!’’

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন