Suvendu Adhikari

বিধায়ক পদ ত্যাগ করলেও মুখে কুলুপ শুভেন্দুর, দিল্লি যাত্রা কি বৃহস্পতিবারই

শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, বৃহস্পতিবারই তিনি দিল্লি যাবেন। অমিতের বঙ্গ সফরেই তিনি বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:১৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

ঘটনাটা অবশ্যম্ভাবীই ছিল। জল্পনা ছিল দিনক্ষণ নিয়ে। অবশেষে বুধবার বিকেলে বিধানসভা ভবনে গিয়ে তৃণমূল বিধায়কের পদে ইস্তফা দিয়ে এলেন শুভেন্দু অধিকারী। এর সঙ্গে সঙ্গে শুভেন্দুর তৃণমূলের বিচ্ছেদ চূড়ান্ত রূপ নিল। অতঃপর জল্পনা, শুভেন্দু আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলের সদস্যপদও ছাড়েন কি না। দ্বিতীয়ত, কবে তিনি বিজেপি-তে যোগ দেন।

Advertisement

তবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় না থাকায় শুভেন্দু সরাসরি তাঁর হাতে ইস্তফা দিতে পারেননি। ইস্তফাটি তিনি জমা দেন বিধানসভার সচিবের কাছে। সূত্রের খবর, স্পিকারকে ইমেলে তিনি তাঁর ইস্তফাপত্রও পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে স্পিকার জানিয়েছেন, বিধায়ক পদে শুভেন্দুর ইস্তফা গ্রহণ করা হচ্ছে না। কারণ, সচিবের ইস্তফা গ্রহণ করার কোনও এক্তিয়ার নেই। যে কোনও আইনসভার সদস্যকেই তাঁর ইস্তফা হাতে লিখে সংশ্লিষ্ট আইনসভার অধ্যক্ষের কাছে সশরীরে গিয়ে জমা দিতে হয়। এখন দেখার, শুভেন্দু আবার বিধানসভায় গিয়ে স্পিকারের সঙ্গে গিয়ে দেখা করে তাঁর ইস্তফা দেন কি না।

শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, বৃহস্পতিবারই তিনি দিল্লি যাবেন। তার পর অমিত শাহের সঙ্গে ফিরে আসবেন রাজ্যে। অমিতের বঙ্গ সফরেই তিনি বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন। তবে বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের নিমতৌড়িতে তাম্রলিপ্ত সরকারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি রয়েছে। সেখানে শুভেন্দুর যাওয়ার কথা। এখন দেখার, তিনি সেই সভায় যান কি না। দ্বিতীয়, বিধায়ক পদ ছাড়ার পর তিনি সেই সভায় কিছু বলেন কি না।

Advertisement

আরও পড়ুন: মমতা বললে ইস্তফা দিতে তৈরি, প্রকাশ্যে জানালেন দুর্গাপুরের বিধায়ক বিশ্বনাথ

শুভেন্দুর ইস্তফার খবরে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (যিনি শুভেন্দুকে লাগাতার রাজনৈতিক আক্রমণ করেছেন) প্রতিক্রিয়া, ‘’১০ বছর সব ভোগ করার পর এখন পদত্যাগ করা অর্থহীন! দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল!’’ শুভেন্দুর ইস্তফার খবরে বিজেপি-র সহ-সভাপতি মুকুল রায় বলেন, ‘‘শুভেন্দুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। যাঁরা তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের সকলকে বিজেপি-তে স্বাগত। তৃণমূলের যে নেতৃত্ব এখন শাসন করছেন, তাঁদের সঙ্গে কেউই কাজ করতে পারবেন না।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শুভেন্দু বিধায়ক পদে ইস্তফা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ব মেদিনীপুরের হেড়িয়ায় তাঁর দফতরে বিজেপি-র ঝান্ডা তুলে দিয়েছেন তাঁর অনুগামীরা। শুভেন্দু সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও কথা বলেননি। কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে তিনি আবার বিধানসভা ছেড়ে বেরিয়ে যান। বিধায়কের লেটারহেড প্যাডের পাতায় সংক্ষিপ্ততম ইস্তফাপত্রে শুভেন্দু স্পিকারকে সম্বোধন করে নিজের হাতে যা লিখেছেন, তার মধ্যেগুরুত্বপূর্ণ হল, তাঁর ইস্তফা যেন অবিলম্বে গ্রহণ করা হয়। দ্বিতীয়ত, ইস্তফাপত্রে কোনও তারিখ দেখা যায়নি। যা থেকে প্রাথমিক অনুমান, ইস্তফা দেওয়ার জন্য শুভেন্দু নির্দিষ্ট কোনও একটি দিন স্থির করেননি। বিষয়টি উত্থাপন করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তবে চিঠিতে তারিখ না-থাকায় সেটি ‘বৈধ’ বলে বিবেচিত হবে কি না, তা-ও দেখার। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সেটি একান্ত ভাবেই স্পিকারের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। তিনিই ঠিক করবেন, তারিখবিহীন ইস্তফাপত্র তিনি গ্রাহ্য করবেন কি না।

আরও পড়ুন: পোস্টারে, ফেসবুকে শীল-সুনীল কি শুভেন্দু-পথের পথিক, দ্রুত বাড়ছে জল্পনা

বুধবার বিকেল চারটে নাগাদ বিধানসভায় পৌঁছোন শুভেন্দু। পরনে পরিচিত সাদা কুর্তা-পাজামা এবং ধূসর জহরকোট। মুখে এন-৯৫ মাস্ক। সাধারণত শুভেন্দু চলাফেরা করেন কালো এসইউভি-তে। কিন্তু তিনি ইস্তফা দিতে এসেছিলেন সাদা এসইউভি-তে। মাত্র একজন নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে তিনি বিধানসভার পোর্টিকোয় এসে পৌঁছোন। চালকের পিছনের আসন থেকে নেমে দ্রুত চলে যান বিধানসভার ভিতরে। তবে স্পিকার তখন বিধানসভায় ছিলেন না। তিনি বেলা দুটো নাগাদ বিধানসভা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। অগত্যা শুভেন্দু চলে যান দোতলায় বিধানসভার সচিবের ঘরে। সেখানেই তিনি তাঁর ইস্তফা জমা দেন।

শুভেন্দুর ইস্তফাপত্র।

ইস্তফাটি জমা দেওয়ার পর তার একটি প্রতিলিপিতে সেটি ‘রিসিভ’ করিয়ে নেন পদত্যাগী বিধায়ক। বেরিয়ে এসে নীচে নেমে অপেক্ষারত সংবাদমাধ্যমকে সেই প্রতিলিপিটি উুঁচু করে দেখান। তার পরেই বেরিয়ে যান বিধানসভা ভবন থেকে।

শুভেন্দু বরাবরই বলে এসেছেন, তিনি ‘নীতি এবং আদর্শের রাজনীতি’ করেন। ফলে অনেক বিধায়ক বিধায়ক পদ ধরে রেখে দল বদলালেও তিনি তা করবেন না। তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের কোনও বদল হলে বা কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিলে তিনি তা করবেন বিধায়ক পদ ছাড়ার পরেই। সেই মতোই বুধবার বিধানসভায় গিয়ে ইস্তফা দিয়ে এসেছেন শুভেন্দু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন