Suvendu Adhikari

এগোতে হলে পিছোতে হবে, মঞ্চের রাজনীতির সরল ধারাপাত

আপনি কি বৃহৎ রাজনৈতিক সমাবেশের শেষ বক্তা? তা হলে কিন্তু আপনিই বাকি বক্তাদের চেয়ে এগিয়ে। জনতার বক্স অফিসে আপনারই জয়জয়কার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:৩৭
Share:

ভরা ব্রিগেডে চলছে ভাষণ। প্রতীকী ছবি।

আপনি কি বৃহৎ রাজনৈতিক সমাবেশের শেষ বক্তা? তা হলে কিন্তু আপনিই বাকি বক্তাদের চেয়ে এগিয়ে। জনতার বক্স অফিসে আপনারই জয়জয়কার। শেষ বক্তা। অর্থাৎ, শেষ আকর্ষণ। ‘এবং উত্তমকুমার’। আপনার অব্যবহিত আগে যিনি, তিনি ‘সৌমিত্র’। তাঁর আগে যিনি, তিনি ‘শুভেন্দু’। তবে ‘অধিকারী’ নন। ‘চট্টোপাধ্যায়’।

Advertisement

‘অধিকারী’ শুভেন্দুর বক্স অফিস দেখা গেল শনিবার মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায়। তাঁর জন্য নির্ধারিত সূচি বদলে ফেলল বিজেপি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত যে শেষে বলবেন, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ, সভা তাঁরই। কিন্তু অমিতের আগে ওজনদার বক্তাদের ক্রমপর্যায় ছিল মুকুল রায়, শুভেন্দু এবং দিলীপ ঘোষ। সভায় কিন্তু দেখা গেল ক্রমপর্যায় পাল্টে হয়ে গেল মুকুল, দিলীপ এবং শুভেন্দু। অর্থাৎ, বক্স অফিসের বিচারে শুভেন্দু দ্বিতীয়। অমিতের ঠিক পরেই। তাই অমিতের ঠিক আগেই।

এগোতে হলে পিছোতে হবে। মঞ্চের রাজনীতির এই-ই হল সরল ধারাপাত। বক্তৃতার ‘প্রোটোকল’-এ যিনি সবচেয়ে পিছিয়ে, আসলে গুরুত্বের বিচারে সবচেয়ে এগিয়ে তিনিই।

Advertisement

বাম এবং অবাম— উভয় ধরনের দলেই বিশাল জনসভায় এই ক্রমপর্যায় রাখা হয়। সেটাই রীতি। বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশে যেমন শেষ বক্তা থাকতেন অধুনাপ্রয়াত জ্যোতি বসু। তাঁর ঠিক আগেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আবার জ্যোতিবাবুর অবসরের পর শেষ বক্তা বুদ্ধদেব। তাঁর আগে মহম্মদ সেলিম।

এমন রীতি যে আছে, তা মেনে নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘শুভেন্দুকে অমিত শাহ নিজের পাশে বসিয়েছেন। নিজের ঠিক আগেই এবং দিলীপ ঘোষের পরে ভাষণ দিতে দিয়েছেন। এতেই বোঝা যায়, বিজেপি তাঁকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছে!’’ কিন্তু, পাশাপাশিই তাঁর বক্তব্য, ‘দলত্যাগী’ কাউকে একেবারে কেন্দ্রীয় নেতার ঠিক আগেই ভাষণ দিতে দেওয়ার নজির তাঁদের দলে নেই। বললেন, ‘‘আমাদের দলে কোনও দিন দেখেছেন, অন্য দল থেকে কেউ এসে তিনি প্রকাশ কারাট বা সীতারাম ইয়েচুরির আগেই বক্তব্য পেশ করেছেন?’’

তৃণমূলে যেমন বছরের সেরা সমাবেশ একুশে জুলাইয়ের সভায় সবসময়েই শেষ বক্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অব্যবহিত আগে সাধারণত থাকেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁদের আগে আবার অন্যান্য বক্তারা। কিন্তু সেই ‘লাইন আপ’ বুঝিয়ে দেয়, দলে কার গুরুত্ব কতটা।

আরও পড়ুন: দল বদলেই ‘ভাইপো হঠাও’ স্লোগান শুভেন্দুর, ‘কাপুরুষ’ বলে পাল্টা তোপ তৃণমূলের

শনিবারের সভা ‘ঐতিহাসিক’ হয়েছে বলে রাজ্য বিজেপি নেতাদের দাবি। তাঁদের আরও দাবি, ওই ভিড়ের অধিকাংশই ছিল ‘স্বতঃস্ফূর্ত’। সমাবেশের বিশালত্ব নিয়ে বিশেষ কেউই সংশয় প্রকাশ করছেন না। কিন্তু পাশাপাশিই বিরোধীরা বলছেন, ওই ভিড় ছিল ‘সংগঠিত’। সেখানে কেউই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এসে যোগ দেননি। হাজার হাজার বাস-গাড়ি ভাড়া করে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে লোক নিয়ে আসা হয়েছিল মাঠ ভরাতে।

আরও পড়ুন: শাহি সভায় যাওয়ার পথে রাজ্যবাসীকে খোলা চিঠি শুভেন্দুর

তবে ভিড়ের প্রকৃতি নিয়ে যতই চাপাউতোর থাকুক, শুভেন্দুর ‘গুরুত্ব’ নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। কলেজ ময়দানের সভাস্থলে তিনি যখন পৌঁছেছেন, তখনও অমিত আসেননি। অমিত সভাস্থলে এসে শুভেন্দুকে সঙ্গে নিয়েই মঞ্চে উঠেছেন। তাঁদের সঙ্গে দিলীপ। মঞ্চেও অমিতের পাশের আসনটিই ছিল শুভেন্দুর। দু’জনকে মুখের মাস্ক নামিয়ে পরস্পরের দিকে ঝুঁকে পড়ে কথাও বলতে দেখা গিয়েছে বেশ কয়েকবার। তার পরে বদলে গিয়েছে শুভেন্দুর বক্তৃতার সময়। অমিতের ঠিক আগে বলতে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে।

মঞ্চের রাজনীতির সরল ধারাপাতে পিছিয়ে গিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন