Suvendu Adhikari

মোদীর মহা সম্মেলনে দেখা মেলেনি শুভেন্দুর! সকলে থাকলেও বিরোধী দলনেতা কোথায়? জল্পনা বিজেপিতে

শনিবার জেপি নড্ডার বক্তৃতা দিয়ে শুরু। রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতার পরে শেষ। দু’দিনের সর্বভারতীয় অধিবেশন শেষ হল বিজেপির। কিন্তু সেখানে দেখাই যায়নি শুভেন্দুকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫১
Share:

রবিবার নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতার সময়েও শুভেন্দু অধিকারীকে দেখা যায়নি বলে দাবি। — ফাইল চিত্র।

দু’দিনের ‘রাষ্ট্রীয় অধিবেশন’ শেষ হল বিজেপির। কিন্তু শনি বা রবিবারে একটি বারের জন্য সেই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমনটা জানালেন অধিবেশনে হাজির থাকা বাংলার প্রতিনিধিরাই। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শনিবার সকালে কলকাতার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। এর পরে বিকেলের বিমানেই দিল্লি গিয়ে সন্ধ্যায় যোগ দেন ‘ভারত মণ্ডপম’-এ হওয়া অধিবেশনে। রবিবার পুরো সময়টাই ছিলেন তিনি। তবে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি বলেই জানিয়েছেন সুকান্ত। একই কথা বলছেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষে ফোন করা হলে দিলীপ বলেন, ‘‘আমি তো দু’দিন পুরো সময়টাই ছিলাম। কিন্তু ওঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।’’

Advertisement

একই কথা শোনা গিয়েছে একাধিক বিধায়কের মুখে। রাজ্যের সব সাংসদ, বিধায়কেরই এই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা। তবে দলকে জানিয়ে ব্যক্তিগত বা শারীরিক কারণ দেখিয়ে যাননি বাংলার তিন বিধায়ক। বিরোধী দলনেতা দলকে এবং সংবাদমাধ্যমকেও জানিয়েছিলেন, শনিবার সকালেই তিনি দিল্লি পৌঁছে যাবেন। কিন্তু তিনি নাকি আদৌ দিল্লিতেই যাননি। রাজ্যেই ছিলেন। বলছেন বিজেপি নেতাদের অনেকেই। তবে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে গেলে সকলে শুধু এটুকুই বলছেন যে, ‘‘আমার সঙ্গে অধিবেশনের জায়গায় দেখা হয়নি ওঁর।’’

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে হওয়া অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন রবিবার শুভেন্দু বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বলবেন বলে ঠিক ছিল। কিন্তু তিনি উপস্থিত না-থাকায় শেষ বেলায় সে দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের বিধায়ক তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালকে। আনন্দবাজার অনলাইনকে অগ্নিমিত্রা জানান, বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল তাঁকে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বলতে বলেন। আর শুভেন্দুকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে দেখা হয়নি।’’

Advertisement

তবে কি শুভেন্দু আদৌ দিল্লি যাননি? না কি দিল্লি গেলেও অধিবেশনে যোগ দেননি? এমন নানা প্রশ্ন বিজেপিতে। কেউ বলছেন, সম্প্রতি সন্দেশখালিতে যাওয়ার পথে পায়ে চোট পাওয়ার জন্যই অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারেননি। আবার অধিবেশনে যোগ দেওয়া এক শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ বিধায়ক বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে দিল্লিতেই আসেননি। সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টে কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্যকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে তিনি অখুশি। সিদ্ধান্তের আগে তাঁর সঙ্গে আলোচনা না-হওয়ায় শুভেন্দুদা মনঃক্ষুণ্ণ।’’ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বিষয়টা শুভেন্দু জানিয়ে দিয়েছেন বলেও ওই নেতার দাবি। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘একাধিক বারের চেষ্টাতেও শনিবার থেকে তিনি শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি।’’ আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষ থেকেও শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি এবং এখনও পর্যন্ত মেসেজের জবাবও দেননি।

বিজেপির রীতি অনুযায়ী পাঁচ বছর অন্তর তাদের ‘রাষ্ট্রীয় অধিবেশন’ বসে। এর আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে দিল্লিতেই হয়েছিল সম্মেলন। তখন শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেননি। তিনি বিজেপিতে আসার পরে এটাই ছিল দলের সবচেয়ে বড় অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সুযোগ।

দলের সভাপতি জেপি নড্ডার বক্তৃতা দিয়ে শনিবার শুরু হয় অধিবেশন। রবিবার শেষ হয় মোদীর বক্তব্যের পরে। রবিবার বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। শনিবার কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সন্দেশখালির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। শাহের বক্তৃতাতেও বাংলা সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কেন্দ্র বলে অভিযোগ করা হয়। দেশের আট হাজারের বেশি প্রতিনিধির সামনে একই বিষয়ে বলেন অগ্নিমিত্রাও।

এই অধিবেশন জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য হিসাবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান বাংলার সাত জন। এ ছাড়াও জাতীয় পরিষদের সদস্যেরাও থাকেন। তাঁদের মধ্যে বাংলার ৪২ জন। ডাক পান রাজ্যের ১৬ লোকসভা সাংসদ ও একমাত্র রাজ্যসভা সাংসদ অনন্ত রায়। অনেকগুলি পদে থাকার দৌলতেই ডাক পান সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপ। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি হিসাবে অধিবেশনে রাহুল সিংহ যোগ দিলেও যাননি তথাগত রায়। বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য। সামনে লোকসভা নির্বাচন থাকায় জেলা সভাপতিরাও ডাক পেয়েছিলেন। মোর্চা এবং শাখা সংগঠন ছাড়াও রাজ্যের ৪২ লোকসভা আসনের দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন তাঁদেরও ডাকা হয়েছিল। শুভেন্দুকে অধিবেশন দেখা না-গেলেও সব মিলিয়ে বাংলার উপস্থিতি যথেষ্ট ভাল ছিল বলেই জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন