TET Scam

মানিক নয়, টাকা দেওয়া হয়েছিল পর্ষদকে: তাপস

তদন্তকারীদের দাবি, বেসরকারি কলেজ সংগঠনের সঙ্গে যে-পরিমাণ টাকা লেনদেনের কথা তাপস এখন বলছেন, সেটা প্রকৃত আর্থিক দুর্নীতি-হিমশৈলের চূড়া মাত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২ ০৬:২২
Share:

তাপস মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ ইডির। ফাইল চিত্র।

চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে নিশানা খানিকটা বদলে ফেলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন প্রধানের বদলে পর্ষদের দিকে তর্জনী তুললেন তাপস মণ্ডল। বুধবার রাতে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আঞ্চলিক দফতর থেকে বেরিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘মানিক ভট্টাচার্যকে অফলাইনে পড়ুয়া ভর্তি বাবদ মাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকা হিসেবে মোট ২১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার ইডি অফিসে ঢোকার আগে তাপস জানিয়েছেন, ২১ কোটি টাকা দেওয়া হয়নি, ‘সরাসরি’ মানিককেও দেওয়া হয়নি টাকা। ছাত্র ভর্তি বাবদ বেসরকারি ৬০০ বিএড-ডিএলএড কলেজ সংগঠনের তরফে দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা এবং সরাসরি মানিককে নয়, তা দেওয়া হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। এ দিন রাতে ইডি-র দফতর থেকে বেরিয়ে তাপসের দাবি, ‘‘সব হিসাব মিলেছে। তদন্তে সহযোগিতা করেছি।’’

বুধবার মানিককে টাকা দেওয়ার অভিযোগ করার কিছু পরে তাপস বলেছিলেন, ‘‘হিসেবে একটু গরমিল আছে। বৃহস্পতিবার সকালে পুরো হিসেবটা দিয়ে দেওয়া হবে।’’ এ দিন সকাল থেকে ইডি-র দফতরে বসে তাপস কার্যত সেই হিসেবই দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

তাপস এ দিন উল্লেখ করেছেন মানিকের ছেলে সৌভিকের সংস্থার কথাও। জানিয়েছেন, সৌভিকের এডুক্লাসেস প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থায় পড়ুয়া-পিছু ৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল। তবে মানিকের ছেলের সংস্থাকে কোন চুক্তির মাধ্যমে কলেজ সংগঠনের তরফে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল, তা খোলসা করেননি তাপস।

পর্ষদকেই বা টাকা দেওয়া হয়েছিল কেন? তাপস এ দিন বলেন, ‘‘ছাত্র ভর্তি নিয়ে নানা সমস্যা হয়েছিল। তার পরই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে টাকা দেওয়া হয়েছিল। টাকা দেওয়ার পরে সমস্যা মিটে যায়। ওই সমস্যার সমাধানে ছাত্র ভর্তির জন্য মাথাপিছু অনলাইন ফি ৩০০ টাকা এবং আরও ৪৭০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল পর্ষদকে। তখন পর্ষদের সভাপতি ছিলেন মানিক। আমার সংগঠনের অফিস থেকে ওই টাকা পাঠানো হয়।’’

ইডি-র তদন্তকারীরা এর আগে আদালতে অভিযোগ করেছিলেন, ৬০০টি বেসরকারি বিএড-ডিএলএড কলেজ থেকে ছাত্র ভর্তি বাবদ মাথাপিছু নগদে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছিলেন মানিক। ওই সব কলেজের মাধ্যমে মানিকের ছেলের দু’টি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দু’‌কোটি ৬৪ লক্ষ এবং দু’‌কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা জমা হয়েছিল।

তদন্তকারীদের দাবি, বেসরকারি কলেজ সংগঠনের সঙ্গে যে-পরিমাণ টাকা লেনদেনের কথা তাপস এখন বলছেন, সেটা প্রকৃত আর্থিক দুর্নীতি-হিমশৈলের চূড়া মাত্র।

তদন্তকারীদের ব্যাখ্যা, মানিক তাঁর ঘনিষ্ঠ তাপসকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি করেছিলেন। তার পরে ২০১৮-২০, ২০১৯-২১ ও ২০২০-২২ বর্ষে ছাত্র ভর্তি বাবদ মানিক এবং তাঁর ছেলের সংস্থায় কলেজ সংগঠনের তরফে টাকা দেওয়া হয়েছে।

তদন্তকারীদের দাবি, মানিকের ছেলে এবং তাঁর স্ত্রী শতরূপার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে। কলেজ সংগঠন থেকে মানিক এবং তাঁর ছেলের সংস্থায় কোটি কোটি টাকা লেনদেনের সমস্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে তাপসের কাছে। এ দিনেও তাপসের বয়ান লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি তাঁকে কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন