Tathagata Roy

রাজ্যে বিজেপির ‘মুখ’ হতে কোমর বাঁধছেন তথাগত

তথাগতবাবুর এই তৎপরতায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ অন্য আভাস দেখতে পাচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ০২:১৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

রাজ্যে ভোটের বাদ্যি শুরু হতেই ফের বিজেপির মঞ্চে ফিরতে চান বর্তমানে রাজ্যপাল পদে থাকা তথাগত রায়। শুধু তা-ই নয়, এই রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিভিন্ন কথাবার্তা বাঙালির রুচির বিরোধী বলেও খোঁচা দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

তথাগতবাবুর এই তৎপরতায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ অন্য আভাস দেখতে পাচ্ছেন। তাঁদের অনেকেরই ধারণা, বিজেপির সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে মেঘালয়ের বর্তমান রাজ্যপাল তথাগতবাবু নিজের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। বিষয়টি কার্যত রাজ্য বিজেপির ভিতরকার টানাপোড়েনকেই সামনে আনে।

তথাগতবাবু সোমবার নিজেই জানিয়েছেন, রাজ্যপাল পদে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও এখন করোনা পরিস্থিতির জন্য তাঁকে সেখানেই কাজ চালাতে হচ্ছে। তবে তিনি যে বাংলায় বিজেপির মঞ্চে ফিরতে চান, সে কথা খোলাখুলি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অনুমতি দিলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আমি ফিরব।’’ তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, এই মনোবাসনা দিল্লিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও পৌঁছে দিয়েছেন তথাগতবাবু।

Advertisement

আরও পড়ুন: কড়া চিঠি, সঙ্গে টুইট, পিএমকিসান প্রকল্প নিয়ে আবার তোপ ধনখড়ের

এই সূত্রেই তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে নাম না করেও দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে তথাগতবাবুর সমালোচনা। নিজের ‘উচ্চশিক্ষা’ সম্পর্কে তথাগতবাবু খুবই সচেতন। দিলীপবাবু গরুর দুধে সোনা পাওয়া থেকে শুরু করে গোমূত্র পানের ‘উপকারিতা’ সম্পর্কে যে সব কথা বলে থাকেন, তার বিরোধিতা করে তথাগতবাবুর বক্তব্য, ‘‘গোমূত্র, গোবর, উটমূত্র ইত্যাদি পানের পরামর্শ, গরুর দুধে সোনা খুঁজে পাওয়া— এ সব অবৈজ্ঞানিক কথা বাঙালিরা পছন্দ করে না। এ সব আমিও বলি না। কিন্তু এ সবের জন্য় আমাকে অনেক কুবাক্য সহ্য করতে হয়। সামাজিক মাধ্যমে যখনই আমি কমিউনিস্টদের সম্পর্কে যুক্তিসঙ্গত এবং তথ্যনিষ্ঠ সমালোচনা করি, তখনই আমাকে গোমূত্র খান, গরুর দুধে সোনা খুঁজুন ইত্যাদি বলে আক্রমণ করা হয়।’’

এ নিয়ে দিলীপবাবুর কোনও প্রতিক্রিয়া এ দিন রাত পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাঁকে ফোন করা হলেও তা বেজে গিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দেখেছেন বলে বোঝা গেলেও উত্তর আসেনি।

এক সময় রাজ্য বিজেপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তথাগতবাবু। ২০০৯ এবং ২০১৪-র দুটি লোকসভা ভোটেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি হেরে যান। প্রথম বার কলকাতা উত্তরে। তার পর কলকাতা দক্ষিণে। পরবর্তী কালে ২০১৫-র মাঝামাঝি তাঁকে ত্রিপুরার রাজ্যপাল করে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তিনি যান মেঘালয়ে।

ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের রাজ্যপাল হয়েও তথাগতবাবু রাজনৈতিক মন্তব্য করা থেকে বিরত হননি। সামাজিক মাধ্যমে প্রায় নিয়মিত হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পক্ষে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও বামেদের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন। বার বারই অভিযোগ উঠেছে, রাজ্যপাল পদের ‘নিরপেক্ষতা’র ন্যূনতম মাত্রাটুকুও তথাগতবাবু রাখেন না। তবে তিনি তাঁর এই ভূমিকা থেকে সরেননি। এ দিন তথাগতবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, দলীয় নেতৃত্ব বাংলায় প্রত্যক্ষ রাজনীতি করার সুযোগ না দিলে তিনি কী করবেন? তাঁর উত্তর, ‘‘এখন আমি বই লিখছি। সেটাই চালাব।’’

রাজ্য বিজেপির অনৈক্য়ের চেহারা গত মাসখানেক ধরে সামনে আসছে। যেমন— দিল্লিতে থেকেও দলীয় বৈঠক এড়িয়েছেন বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির নেতা মুকুল রায়। বিজেপি সূত্রের খবর, দিলীপবাবু এবং তাঁর শিবিরের বিরুদ্ধে দিল্লিতেই দলীয় বৈঠকে তোপ দেগেছেন সাংসদ অর্জুন সিংহ, যিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন মুকুলবাবুর হাত ধরে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের মতো কয়েক জনও দিলীপবাবুর প্রতি ‘খুব’ সদয় নন বলে দলীয় সূত্রে খবর। যদিও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিলীপ-বিরোধী এই উদ্যোগকে এখনও খুব আমল দিচ্ছেন বলে জানা যায়নি। বরং, বিজেপির সব নেতাই প্রকাশ্যে যাবতীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিলেন। তবে তথাগতবাবুর এ দিনের মন্তব্যে রাজ্য বিজেপির অন্দরে আর একটি চিড় ধরার ইঙ্গিত মিলতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন