Mamata Banerjee

শহিদ স্মরণের আগে রাজ্য জুড়ে উজ্জ্বল ‘টিম অভিষেক’

এ বার একদম বদলে গিয়েছে ছবিটা। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের প্রস্তুতি পর্বে এ বার একটা সভাও করতে পারেননি তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি। কারণ বেজায় ভোগাচ্ছে চোখ

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ১৫:৪৫
Share:

এই জুলাই মাসটায় দম ফেলার ফুরসত থাকত না তাঁর। অন্তত গত দু’বছর ধরে পরিস্থিতিটা সে রকমই ছিল। গোটা বাংলা ঘুরে শহিদ স্মরণ সমাবেশের প্রস্তুতি সভা করে বেড়াতেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

এ বার অনেকটা বদলে গিয়েছে ছবিটা। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের প্রস্তুতি পর্বে এ বছর সভা-সমাবেশ একটু কম করছেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি। কিন্তু তা বলে সমাবেশের প্রস্তুতিতে তাঁর চোখ নেই, এমনটা একেবারেই নয়। ‘টিম অভিষেক’ কোমর বেঁধে ময়দানে। রাজনৈতিক শিবিরে চর্চাও বাড়ছে এই ‘টিম অভিষেক’কে ঘিরে।

শহিদ সমাবেশের প্রস্তুতিতে যাঁদের উপরে অভিষেক ভরসা রাখছেন, তাঁরা কারা? এক ঝাঁক খুব সিনিয়র নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ। মমতা ক্যাবিনেটের প্রথম সারির সদস্য ফিরহাদ হাকিম (ববি), সাংসদ মানসরঞ্জন ভুঁইয়া, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কয়েক দশকের সঙ্গী মদন মিত্র, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আর এক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, কয়েক মাস আগে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হওয়া নেতা তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এককালের ‘ইলেকশন ম্যানেজার’ শুভাশিস চক্রবর্তী— এঁদের উপরেই এ বার মূলত ভরসা রেখেছেন অভিষেক। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতির নির্দেশেই তাঁরা সভা করে বেড়াচ্ছেন জেলায় জেলায়।

Advertisement

বেশ কয়েক বছর দলীয় কর্মসূচির বাইরে ছিলেন মদন মিত্র। এ বার উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন অংশে সভা করে বেড়াচ্ছেন তিনি। কোনও কোনও দিন তিনটে-চারটে করে সভাতেও ভাষণ দিচ্ছেন। বলছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। যেখানে যা কিছু করছি, তাঁর নির্দেশেই করছি।’’

কিন্তু শহিদ স্মরণের প্রস্তুতি পর্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি কোনও সমস্যাই কি তৈরি করছে না? ‘‘একেবারেই না। আমরা তো রয়েছি। ওঁর নির্দেশেই তো রয়েছি,’’—জোর দিয়ে বললেন তৃণমূল সাংসদ মানস ভুঁইয়া। তার পরে বললেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপস্থিত, এ কথা কে বলছে? গোটা প্রস্তুতি পর্বটাই তাঁর তত্ত্বাবধানে চলছে। আমার মতো বেশ কয়েক জনকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশে একের পর একটা জেলায় আমরা সভা করে বেড়াচ্ছি।’’

আরও পড়ুন: জমি নীতি বদলের পথে রাজ্য, ইঙ্গিত মমতার

শুক্রবার যখন এ কথা বলছেন মানস, তখন তিনি মেদিনীপুর শহরের পথে। জেলা সভাপতি অজিত মাইতিও তাঁর সঙ্গে। মেদিনীপুর শহরে মিছিল করবেন। বললেন, ‘‘লক্ষাধিক লোকের মিছিলের আয়োজন হচ্ছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই তো সব হচ্ছে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া এবং ঝাড়গ্রামেই মূলত কাজে লাগানো হচ্ছে মানসকে। ইতিমধ্যেই গোটা দশেক সভা করে ফেলেছেন তিনি। শনিবার এবং রবিবারও সভা করবেন। তার পরে যাবেন দিল্লি, সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে, হাজিরা দিয়েই আবার ফিরে আসবেন।

২১ জুলাইয়ের সমাবেশের প্রস্তুতি সমাবেশে ববি হাকিম।— নিজস্ব চিত্র

ববি হাকিমও সভা করছেন মূলত দক্ষিণ কলকাতায় এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সে সবের মাঝে এক বার ঘুরে এসেছেন পুরুলিয়া থেকে, অমিত শাহের জনসভার পাল্টা সমাবেশে। সেখানেও ববি গিয়েছিলেন অভিষেকের নির্দেশেই, খবর তৃণমূল সূত্রের। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে কাজে লাগানো হচ্ছে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায়। শুভাশিস চক্রবর্তী ঘুরছেন দক্ষিণ কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন অঞ্চলে।

আরও পড়ুন: মোদীর সভা ঘিরে ‘ছবি দেখানো’র টক্কর গেরুয়া-সবুজে

‘টিম অভিষেক’-এরবাইরে কেউ কি শহিদ সমাবেশের প্রস্তুতি পর্বে ময়দানে নামেননি? নেমেছেন। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী সভা করছেন, নিজের মতো করে প্রচারে রয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। অন্য মন্ত্রীরাও প্রচারে-প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন নিজের নিজের জেলায়। প্রতি বছরের মতো সক্রিয় হয়েছে বিভিন্ন জেলার নেতৃত্বও। তবু সব কিছুর মধ্যে আলাদা করে নজর কাড়ছে ‘টিম অভিষেক’।

শহিদ সমাবেশের প্রস্তুতি পর্বে ‘টিম অভিষেকে’র এই দাপট কি নতুন কিছু? মানস ভুঁইয়া এ বার সতর্ক। ‘‘না, না। নতুনের কী আছে? গত বছর তো অভিষেকই তত্ত্বাবধানে ছিল,’’—বললেন মানস। তার পরে আরও কুশলী মন্তব্য করলেন, ‘‘২১ জুলাইয়ের সমাবেশ হল তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সমাবেশ। অভিষেক এই কর্মসূচির সভাপতি। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধান বক্তা।’’

আরও পড়ুন: শীতে ব্রিগেড-সমাবেশে বিজেপি বিরোধী ‘জোট’ দেখাবেন মমতা

তৃণমূল যুব কংগ্রেসও প্রায় একই কথা বলছে। উত্তর কলকাতা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি তথা অভিষেকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত যুবনেতা সৌম্য বক্সী বললেন, ‘‘যুব সংগঠনের কর্মসূচি, যুব সভাপতি সক্রিয় হবেন না, তা কি হয়? কোথায় কে সভা করবেন, ক’টা সভা হবে, সে সব দিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নজর তো রাখছেনই। দূরের জেলা থেকে যে সব কর্মী-সমর্থকরা কলকাতায় আসবেন, তাঁরা কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন, সে সবও তিনি নিজেই দেখভাল করছেন। সব কিছু নিখুঁত পরিকল্পনাতেই এগোচ্ছে।’’

বাইপাসের ধারে মিলন মেলা, আলিপুরে ‘উত্তীর্ণ’ স্টেডিয়াম, রাজডাঙায় ‘গীতাঞ্জলি’ স্টেডিয়াম এবং বড়বাজার এলাকার বিভিন্ন ধর্মশালা— মূলত এই জায়গাগুলোতেই সভার আগের দিন থেকে কর্মী-সমর্থকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মিলান মেলায় গিয়ে অভিষেক নিজেই খতিয়ে দেখেছেন প্রস্তুতি। বাকিটা দেখভাল করছেন যুবনেতারাই। সব মিলিয়ে এ বারের ২১ জুলাইয়ের আগে গোটা রাজ্যে উজ্জ্বল উপস্থিতি ‘টিম অভিষেক’-এর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন