Handloom Saree

পুজোর মুখেও তাঁতে মন্দা, ব্যতিক্রম বালুচরি

করোনার ধাক্কায় গত দু’বছরে অধিকাংশ সময় বন্ধ ছিল তাঁতঘর। কর্মীরা অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। এ বার পুজোয় নিজেই গোটা তিরিশ শাড়ি বুনছেন পূর্ব বর্ধমানের এই তাঁতি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৩০
Share:

করোনার ধাক্কায় গত দু’বছরে অধিকাংশ সময় বন্ধ ছিল তাঁতঘর। ফাইল চিত্র।

বাড়িতে তাঁতযন্ত্র দশটি। এক সময়ে কর্মী রেখে মাসে প্রায় দেড়শো শাড়ি বোনাতেন পূর্বস্থলীর নসরতপুরের হাফেজউদ্দিন মণ্ডল। এখন সে সব তাঁর চিন্তারও অতীত।

Advertisement

করোনার ধাক্কায় গত দু’বছরে অধিকাংশ সময় বন্ধ ছিল তাঁতঘর। কর্মীরা অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। এ বার পুজোয় নিজেই গোটা তিরিশ শাড়ি বুনছেন পূর্ব বর্ধমানের এই তাঁতি। তাঁর কথায়, ‘‘রঙ্গবতী শাড়ি বুনছি। নিজে বুনছি বলে শ’দেড়েক টাকা লাভ থাকছে, এই যা।’’

হস্তচালিত তাঁতের ক্ষেত্রে সমস্যা কিন্তু একাধিক। পাওয়ারলুম আসার পর থেকেই এই তাঁতিদের বাজার সঙ্কুচিত হয়েছে, রেষারেষিও বেড়েছে। তা-ও নদিয়ার শান্তিপুর-ফুলিয়া, পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া-কালনা, হুগলির ধনেখালি বা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে তাঁতের কাপড়ের উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। কিন্তু নোটবন্দি, জিএসটি চালু এবং সর্বোপরি করোনা এসে তাঁতঘরগুলিকে নতুন করে বিপদে ফেলেছে। সুতো থেকে রং, সব কাঁচামালের দাম বেড়েছে। কর্মী কমেছে। এই পরিস্থিতিতে পুজো নতুন করে আশার আলো দেখাবে মনে করেছিলেন অনেক তাঁতি। কিন্তু যতটা বাজার বাড়বে বলে মনে করা হয়েছিল, ততটা বাড়েনি বলে আফসোস তাঁদের।

Advertisement

ফুলিয়ার বাসিন্দা, পদ্মশ্রী তথা রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত তাঁতশিল্পী বীরেন বসাকের আক্ষেপ, “ব্যবসা আগের ৩০ শতাংশও ছোঁয়নি এখনও।” ফুলিয়ারই বিশ্বজিৎ বসাক বলছেন, “তিন বছর আগেও আমার বাড়িতে পাঁচটা তাঁত ছিল। এখন তা একটায় ঠেকেছে।” শান্তিপুরে দামি জামদানি বা মটকা সিল্ক, মাঝারি দামের টাঙ্গাইল, আর সাধারণ সুতির শাড়ি বোনা হয়। হস্তচালিত তাঁতে একটা ভাল জামদানি শাড়ি বুনতে এক জনের গড়ে সপ্তাহ দুই সময় লাগে। সেখানে যন্ত্রচালিত তাঁতে এক দিনে পাঁচ-সাতটি জামদানি হয়। দামও কম। একে করোনা, তার উপরে একশো দিনের কাজ নেই, চাষেও মার খেয়েছেন অনেক চাষি। কালনার সমুদ্রগড় টাঙ্গাইল তাঁতবস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির কার্তিক ঘোষের কথায়, ‘‘এর ফলে যন্ত্রে তৈরি কম দামের শাড়ির দিকেই বেশি ঝুঁকছেন বহু ক্রেতা।’’

ধনেখালি ইউনিয়ন তাঁতশিল্পী সমবায় সমিতির শো-কেস ভর্তি শাড়ি। কিন্তু পুজোর ক’দিন আগেও এক দুপুরে মাছি তাড়াতে দেখা গেল কর্মীদের। করোনার আগে তাদের পুজোর বিক্রি সামগ্রিক ভাবে ৯০ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যেত। এখন দিনে কয়েক হাজার টাকায় এসে ঠেকেছে। প্রায় সর্বত্র তাঁতিরা বলছেন, গত বছরের চেয়েও এ বারের অবস্থা খারাপ। তন্তুজের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অবশ্য বলছেন, ‘‘সরকার তাঁতিদের জন্য নানা পদক্ষেপ করেছে।’’ সম্প্রতি তন্তুজ শিবির করে কিছু শাড়ি কিনেছে, তাতে তাঁতিরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন। কিন্তু সেটা এত বাজারের পক্ষে যথেষ্ট কি না, সেই প্রশ্ন রয়েইছে।

এর উল্টো ছবি বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে। এমনিতে বালুচরির বাজার পুজো-নির্ভর নয়। বিয়ের মরসুমে বিক্রিবাটা ভাল হয়। তার উপর রাজ্য সরকার নাগাড়ে শাড়ি কিনে বিপণন করতে থাকায় সেখানে তাঁতির মজুরি বৃদ্ধি থেকে সর্বাঙ্গীন উন্নতি হয়েছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে বিষ্ণুপুর মেলায় প্রায় এক কোটি টাকার বালুচরি ও স্বর্ণচরী বিক্রি হয়েছে। হ্যান্ডলুম বিশ্ব বাংলার ক্যাটেগরি ম্যানেজার ময়ূখী বসাকের কথায়, “বিয়েবাড়িতে বেনারসির বদলে বালুচরি ব্যবহার হচ্ছে। করোনাকালে আমাদের অনলাইন ব্যবসায় বিষ্ণুপুরের বালুচরি বড় সাফল্য পেয়েছে।” এটুকুই ভাল খবর।

(সহ প্রতিবেদন: সম্রাট চন্দ, কেদারনাথ ভট্টাচার্য, প্রণব দেবনাথ, প্রকাশ পাল ও অভিজিৎ অধিকারী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন