Education

School: লক্ষ্য মাধ্যমিক, গ্যারাজের কাজ ফেলে স্কুলে জয়দীপ

জয়দীপের বাড়ি বাদুড়িয়ার ঘোষপুরে। বাড়ি থেকে একটু দূরে নকপুলের একটি গ্যারাজে কাজ করে সে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৩১
Share:

প্রতীকী চিত্র।

দীর্ঘ লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় আর্থিক অনটনের মোকাবিলায় ওরা সবাই নানা ধরনের কাজে নামতে বাধ্য হয়েছিল। ১৬ নভেম্বর ফের স্কুল খুলেছে, বন্ধুরা স্কুলে যাচ্ছে। স্কুলে যাওয়ার জন্য ওদেরও মন কেমন করছে। কাজে নেমে পড়া পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কাজের ফাঁকেই স্কুলে যাওয়া শুরু করবে ওরা। পরীক্ষাও দেবে আবার।

Advertisement

ইঞ্জিনের সাসপেনশন, গাড়ির ব্রেক-বিভ্রাট থেকে শুরু করে ইঞ্জিনের ছোটখাটো সমস্যার সমাধান কী ভাবে করতে হয়, গত কয়েক মাসে বেশ ভালই তা শিখে নিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ চাতরা স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এখন বন্ধুদের স্কুলে যেতে দেখে তার আর মন টিকছিল না গ্যারাজে। ঠিক করে ফেলে, ফের স্কুলে যাবে সে-ও। শুরুও করেছে যেতে। গ্যারাজ একেবারে ছেড়ে দিচ্ছে না সে। জয়দীপ জানাচ্ছে, সংসারে আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে তিন মাসের ছুটিতে ফিরবে গ্যারাজে।

জয়দীপের বাড়ি বাদুড়িয়ার ঘোষপুরে। বাড়ি থেকে একটু দূরে নকপুলের একটি গ্যারাজে কাজ করে সে। তার কথায়, “স্কুল খোলার পরে তিন দিন স্কুলেও গেলাম। আবার সেই পুরনো পরিবেশে পড়াশোনা, খুবই ভাল লাগছে। সামনেই মাধ্যমিক। পরীক্ষাটা ভাল করে দিতেই হবে।” জয়দীপ জানিয়েছে, লকডাউনে গ্যারাজে কাজ নেওয়ার পরে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বন্ধুদের দেখে অনলাইনে ক্লাস করতে খুব ইচ্ছা করত তারও। গ্যারাজ থেকে পাওয়া মাসমাইনের টাকা জমিয়ে একটি স্মার্টফোনও কিনেছে সে। জয়দীপ বলল, “স্কুল খুলে যাওয়ায় স্মার্টফোনটা এখন আর পড়াশোনার কাজে বিশেষ লাগছে না। গ্যারাজের মালিককে বলেছি, মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে ছুটিতে ফের কাজে যোগ দেব।”

Advertisement

জয়দীপের স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, “লকডাউনে যারা কাজে চলে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে যে কেউ কেউ স্কুলে ফিরছে, এটা খুব আশার কথা। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য জয়দীপকে আমরা সব রকম সাহায্য-সহযোগিতা করব।”

জয়দীপের মতো স্কুলে ফিরছে দত্তপুকুর থানা এলাকার বহেড়ার বাসিন্দা দুই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সাইন মোল্লা ও আব্দুল মেহেতাব মিস্ত্রি। সাইন টোটো সারানোর গ্যারাজে কাজ নিয়েছিল এবং আব্দুল নেমেছিল রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজে। দু’জনেই জানিয়েছে, সপ্তাহে এক বা দু’দিন করে স্কুল যাচ্ছে। সাইন বলল, “লকডাউনের সময় আর্থিক কারণেই কাজে নেমেছিলাম। স্কুল খুললেও এখনই কাজ ছেড়ে দিতে পারব না। গ্যারাজের মালিককে বলেছি, এখন কাজে আসতে পারব না। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাটা দেব।” আর আব্দুল জানাল, দুর্ঘটনায় পা জখম হওয়ার পরে তার বাবা কাজকর্ম করতে পারেন না। ওই পড়ুয়া বলল, ‘‘লকডাউনে সংসার চালানোর জন্য রাজমিস্ত্রির কাজে নেমে পড়েছিলাম। কিন্তু স্কুল খোলার পরে পড়াশোনার জন্য মনটা কেমন করে উঠল। অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার ইচ্ছা আছে। তাই কাজের ফাঁকে আপাতত সপ্তাহে এক দিন হলেও স্কুলে যাচ্ছি।”

সাইন ও আব্দুল পড়ে বারাসতের ছোট জাগুলিয়া হাইস্কুলে (উচ্চ মাধ্যমিক)। ওই স্কুলের শিক্ষক কল্যাণ সরকার বলেন, “লকডাউনে আর্থিক কারণে ওরা কাজে চলে গিয়েছিল। ওদের বলেছি, পড়াশোনায় সব সময় সাহায্য করব। ওদের মতো আরও কেউ যদি রুজির টানে স্কুল ছেড়ে দিয়ে থাকে, তাদেরও খুঁজে খুঁজে স্কুলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি আমরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন