Teacher

অবসরের ২০ বছর পরেও পড়ানো থামেনি ‘দাদু স্যরের’

১৯৬১ সালে রঙ্গিলাডি গোপালচক প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

কাশীপুর শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৩২
Share:

মনের টানে: খুদে পড়ুয়াদের মাঝখানে সুবল নন্দী। ছবি: সঙ্গীত নাগ

শিক্ষক হিসেবে অবসর নিয়েছেন কুড়ি বছর আগে। কিন্তু স্কুলে যাওয়া থামেনি পুরুলিয়ার কাশীপুরের সুবল নন্দীর। থামেনি পড়ানোও। কচিকাঁচাদের কাছে আশি ছুঁইছুঁই এই শিক্ষক এখন ‘দাদু স্যর’।

Advertisement

গ্রামের টোলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে, কাশীপুরের পঞ্চকোট রাজ হাইস্কুলে ভর্তি হন সুবলবাবু। ১৯৫৮ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। তখন কাশীপুরে কলেজ ছিল না। আর্থিক কারণে পুরুলিয়া শহরে গিয়ে কলেজে পড়াশোনা করা হয়নি তাঁর। ১৯৬০ সালে রেলে চাকরি নিয়ে অসম গিয়েছিলেন। ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যুর জেরে সেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বাড়ি ফেরেন।

১৯৬১ সালে রঙ্গিলাডি গোপালচক প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। টানা ৪০ বছর শিক্ষকতার পরে, ২০০১ সালে অবসর নেন। তার পরে বছর দুয়েক বাড়িতে কাটিয়েছিলেন। কিন্তু মন টেকেনি। পড়ুয়াদের টানে চলে যান নিজের গ্রাম নপাড়ার প্রাথমিক স্কুলে। শুরু করেন বিনা পারিশ্রমিকে পড়ানোর দ্বিতীয় ইনিংস। তার পরে পেরিয়ে গিয়েছে ১৭টা বছর।

Advertisement

ন’পাড়া প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া শম্পা কুম্ভকার, অভিজাত সিংহদের কথায়, ‘‘দাদু স্যর খুব ভাল পড়ান। ওঁর ক্লাসের জন্য মুখিয়ে থাকি।” ক্লাসে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন ‘দাদু স্যর’ও। বললেন, ‘‘যখন, যে-ক্লাসে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তখন সেই ক্লাসে যাই। গণিত, বাংলা, ইতিহাস— সব বিষয়ই পড়াই।’’

‘‘পড়ানোটা ওঁর নেশা। ছাত্রছাত্রীদের ছাড়া থাকতে পারেন না,’’ বলছেন সুবলবাবুর স্ত্রী জাহ্নবী নন্দী। জুড়ছেন, ‘‘অবসর নেওয়ার পরে, বাড়িতে মনমরা হয়ে বসে থাকতেন। দেখে খারাপ লাগত।’’ সুবলবাবুর কথায়, ‘‘বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম। কেবল মনে হত, স্কুলে পড়াতে পারলে ভাল হত। এলাকার কয়েক জনকে মনের কথা জানিয়েছিলাম।’’

সে সুবাদেই ন’পাড়া প্রাথমিকে সুবলবাবুকে পড়ানোর প্রস্তাব দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক অলক মুখোপাধ্যায়। অলকবাবু বলেন, ‘‘তখন স্কুলে ছাত্র ছিল চারশোর কাছাকাছি। শিক্ষক ছিলেন মাত্র চার জন। কয়েক জনের কাছে সুবলবাবুর ইচ্ছের কথা শুনেছিলাম। কিছুটা দ্বিধা নিয়েই ওঁকে বিনা পারিশ্রমিকে পড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম।” সেই প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ’ বলার আগে দ্বিতীয় বার ভাবেননি সুবলবাবু।

প্রধান শিক্ষক জানাচ্ছেন, ঝড় হোক বা বৃষ্টি, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে হাজির হন এই প্রবীণ শিক্ষক। এখন স্কুলে ন’জন শিক্ষক রয়েছেন। পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৪২। তবু সুবলবাবু স্কুলের কাছে অপরিহার্য।

সহকর্মী শিক্ষক কাজল করের কথায়, ‘‘বাচ্চাই হোক বা সহকর্মী—সুবল স্যর হলেন বনস্পতি। ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন এখনও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন