TMC

বারাসতের সাংগঠনিক দায়িত্বে সব্যসাচী, ফুরফুরার কাশেম তৃণমূলের নতুন পদে, ইফতার থেকে পার্টিতে আনলেন মমতা

দীর্ঘ ন’বছর পরে এ বার ইদের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ফুরফুরায় ইফতার পার্টিতে গিয়েছিলেন। সেই মঞ্চে কাশেমের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৫ ২০:৩৩
Share:

(বাঁ দিকে) সব্যসাচী দত্ত। (মাঝে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাশেম সিদ্দিকি (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

গত দেড়-দু’মাস ধরে সব্যসাচী দত্তের গতিবিধি, চালচলন দেখে বোঝা যাচ্ছিল, তিনি কোনও দায়িত্ব পেতে চলেছেন। সেই দায়িত্ব কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। এমনও জল্পনা ছিল যে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তিনি রাজাহাট-নিউটাউন বিধানসভা কেন্দ্রের টিকিট পেতে পারেন! তবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল না, তার আগেই তৃণমূলের বারাসতের সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান করা হল সব্যসাচীকে। পাশাপাশি, তৃণমূলের কোর কমিটিতে এলেন ফুরফুরা শরিফের কাশেম সিদ্দিকি, যাঁকে গত ইফতার পার্টিতে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দেখা গিয়েছিল। আর তার পরেই শুরু হয়েছিল তাঁকে নিয়ে জল্পনা।

Advertisement

সম্প্রতি তৃণমূলের তরফে সাংগঠনিক রদবদলের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তখন বারাসতের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এ বার সেই তালিকা প্রকাশ করল তৃণমূল। তাতে দেখা গেল, তৃণমূলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হয়েছেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। চেয়ারম্যান করা হয়েছে সব‍্যসাচীকে। তৃণমূল সাংগঠনে চেয়ারম্যান পদের যে খুব কার্যকারিতা রয়েছে, তা নয়। জেলা সংগঠন পরিচালিত হয় সভাপতির নেতৃত্বে। চেয়ারম্যান সেখানে খানিকটা পরামর্শদাতার ভূমিকা নেন। তৃণমূলের অনেকেই মনে করছেন, সব্যসাচী শুধু পরামর্শদাতার ভূমিকায় আটকে থাকবেন না। তিনি একটা সময়ে রাজারহাট-নিউ টাউনের তৃণমূল বিধায়ক ছিলেন। বিধাননগরের মেয়র ছিলেন। বিধাননগরের মেয়র থাকাকালীন ২০১৯ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে বিধাননগর আসনে তৃণমূলের সুজিত বসুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে হারেন সব্যসাচী। ভোট মিটে যাওয়ার পরে কয়েক মাস যেতে না-যেতেই তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা নিয়ে তৃণমূলে ফিরে যান তিনি। বিধাননগর পুরসভার নির্বাচনে তাঁকে টিকিট দেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁকে আর মেয়র করা হয়নি। তবে চেয়ারম্যান করা হয়। গত কয়েক মাস ধরে সেই সব্যসাচীর দলে সক্রিয়তা লক্ষ্য করা গিয়েছে। দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের দিন অতি সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। মুর্শিদাবাদের হিংসায় নিহত, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে সুতিতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তখনও মঞ্চে ছিলেন সব্যসাচী। প্রশ্ন উঠেছিল, কোনও সরকারি পদে নেই তিনি, তার পরেও কেন মঞ্চে? এ বার তাঁকে সাংগঠনিক পদে বসাল তৃণমূল।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল থেকে যাঁরা বিজেপিতে যাওয়া শুরু করেন এবং পরে আবার যাঁরা ফিরে আসেন, তাঁদের সম্পর্কে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘সকলকে প্রায়শ্চিত্ত করিয়ে নেওয়া হবে।’’ সম্প্রতি হাওড়া জেলা পরিষদে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেন্টর পদে নিয়োগ করা হয়েছে। তবে সেটা প্রশাসনিক দায়িত্ব। সব্যসাচী সম্ভবত প্রথম নেতা, যিনি বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফেরার পরে সাংগঠনিক দায়িত্ব পেলেন।

Advertisement

একই সঙ্গে তৃণমূলের কোর কমিটিতে কাশেমকে নিয়ে আসা হয়েছে। দীর্ঘ নয় বছর পরে এ বার ইদের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ফুরফুরায় ইফতার পার্টিতে যান। সেই মঞ্চে কাশেমের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। পার্ক সার্কাসে ইফতারের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দেখা যায় কাশেমকে। দু’জনকে তখন ঘন ঘন কানে কানে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। এই সব বিবিধ সূচক দেখে অনুমান করা হচ্ছিল যে, ফুরফুরা শরিফ থেকে মমতা এক জন তরুণ বলিষ্ঠ মুখ চান। কারণ, ফুরফুরার পিরজাদা নওশাদ ভাঙড়ের বিধায়ক। বাম জমানার শেষ পর্ব থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় মমতা সরকারের কিছুটা সময় ফুরফুরায় ‘তৃণমূলপন্থী পিরজাদা’ বলতে ছিলেন ত্বহা সিদ্দিকি। সেই ত্বহার বয়স হয়েছে। আগের মতো তাঁর উঠোনে সেই ভিড়ও আর হয় না বলে শোনা যায়। এর মধ্যে উত্থান হয়েছে মমতার বিরোধিতা-করা নওশাদ সিদ্দিকির। যে কোনও রাজনৈতিক দলই চাইবে একই এলাকা থেকে এক জন বলিষ্ঠ মুখকে তাদের দিকে নিয়ে আসতে। কাশেমকে পরবর্তীতে কী দায়িত্ব দেবে তৃণমূল, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। তৃণমূলের একাংশ মনে করছে, তাঁকে খুড়তুতো ভাই নওশাদের বিরুদ্ধে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা হতে পারে।

গত কয়েক সপ্তাহ আগে একটি ঘটনায় রাজারহাট-নিউটাউনে কাশেম গতিবিধি বৃদ্ধি পেতে দেখা গিয়েছিল। বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য ঘিরে সেখানে গোলমাল হয়। সে কারণে কাশেম যান সেখানে। এই তাপস আবার সব্যসাচীর বিরোধী বলে পরিচিত। সব্যসাচীর সাংগঠনিক দায়িত্ব পাওয়া, কাশেমকে কোর কমিটিতে নেওয়া ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।

তৃণমূলের কোর কমিটিতে এলেন উত্তরবঙ্গের নেতা শঙ্কর মালাকারও। কয়েক দিন আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। এক সময়ে কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলার সভাপতি ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের সহসভাপতিও ছিলেন। মাটাগাড়া নকশালবাড়ির দু’বারের প্রাক্তন বিধায়ক এ বার তৃণমূলের কোরকমিটিতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement