Digha Jagannath Temple Inauguration

দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন সমারোহ রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছোতে প্রস্তুতি শাসকদলের, শুভেন্দুর কাঁথিতেও আয়োজন

মন্দির উদ্বোধনের বহু আগে থেকেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব জেলা সভাপতিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, বড় এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে জেলার প্রতিটি প্রান্তে জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন দেখানোর বন্দোবস্ত করতে হবে।

Advertisement

অমিত রায়

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:০৪
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের শঙ্খনাদ দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছিল কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি। বুধবার, অক্ষয়তৃতীয়ার দিন দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের সমারোহ রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে চায় শাসকদল তৃণমূল। সেই লক্ষ্যে সোমবার রাতে দলের জেলা স্তর থেকে শুরু করে নিচুতলা পর্যন্ত একটি ‘অডিয়োবার্তা’ পাঠানো হয়েছে। সেই বার্তায় রয়েছে জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন সংক্রান্ত বিস্তারিত ঘোষণা। ওই বার্তা মঙ্গলবার দিনভর গ্রাম, অঞ্চল, ব্লক, ওয়ার্ড এবং টাউনে প্রচার করতে বলা হয়েছে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, মন্দির উদ্বোধনের বহু আগে থেকেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব জেলা সভাপতিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, বড় এলইডি স্ক্রিনে সমস্ত জেলার প্রতিটি প্রান্তে জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন দেখানোর বন্দোবস্ত করতে হবে। জেলাভিত্তিক সেই কাজ শুরুও করেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতিরা। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্দেশে বলা হয়েছে, শুধু বড় এলইডি স্ক্রিন লাগিয়ে জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করলেই হবে না, সেখানে যাতে এলাকার জনগণ যোগ দিতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। সঙ্গে আয়োজন করতে হবে জগন্নাথদেবের ভোগ বিতরণেরও। প্রয়োজনে দিঘার মন্দির উদ্বোধনের পরে সাধারণ মানুষকে যাতে একসঙ্গে বসিয়ে ভোগ খাওয়ানো যায়, তেমন ব্যবস্থাও রাখতে হবে। শীর্ষ নেতৃত্বের ওই নির্দেশ পাওয়ার পর জেলা সভাপতিরা তাঁদের জেলার গ্রাম, পঞ্চায়েত, ব্লক ও টাউন সভাপতিদের কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছেন। এপ্রিলের গরমে যাতে আমজনতার জগন্নাথদেবের মন্দির উদ্বোধনের সম্প্রচার দেখতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য বড়সড় ছাউনির বন্দোবস্ত করতেও বলা হয়েছে। সেই ছাউনিতে রাখতে হবে পানীয় জলের ব্যবস্থাও। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আপৎকালীন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও রাখতে বলা হয়েছে।

হাওড়া সদর জেলা তৃণমূলের সভাপতি কল্যাণ ঘোষ যেমন বলছেন, ‘‘আমরা অনেক আগে থেকেই মন্দির উদ্বোধন সম্প্রচারের যাবতীয় বন্দোবস্ত করেছিলাম। কিন্তু নতুন নির্দেশ আসার পর নতুন বিষয়গুলিও যুক্ত করা হচ্ছে। আমরা চাই, সমাজের সমস্ত শ্রেণির মানুষ উদ্বোধনে যোগ দিন। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’’ তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনকে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু দিঘার পরিসরেই আটকে রাখতে চান না। তিনি একই সঙ্গে জোর দিতে চাইছেন জনসংযোগের উপরেও। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে মন্দির উদ্বোধন কর্মসূচি রাজনৈতিক ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। মন্দির উদ্বোধন সমারোহের মাধ্যমে দলের নিচুতলার নেতা-কর্মীরা যাতে আমজনতার কাছে পৌঁছে যেতে পারেন, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে চাইছেন বিচক্ষণ রাজনীতিক মমতা। দ্বিতীয়ত, মমতা যখন দিঘায় মন্দির উদ্বোধনের কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকবেন, তখন দলের সর্ব স্তরের নেতা এবং কর্মীরাও যাতে মন্দির উদ্বোধন ঘিরে পারস্পরিক ‘দ্বন্দ্ব’ ভুলে এক ছাতার নীচে থাকতে পারেন, সেই ভাবনাও এমন নির্দেশের পিছনে কাজ করেছে বলে দলের একাংশের অভিমত।

Advertisement

‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে ওই প্রক্রিয়ায় বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি পুরসভা এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বকে। কারণ, নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের দিন কাঁথি শহরে সনাতনী ধর্ম সম্মেলনের আয়োজন করতে চান। প্রশাসন থেকে অনুমতি না পেয়ে তিনি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। সোমবার সেই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার রায় দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আদালতের রায় ঘোষণার আগেই কাঁথিতে সনাতনী সম্মেলনের আয়োজন করে ফেলেছেন শুভেন্দু। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট সম্মেলনের অনুমতি দিলে বাকি প্রস্তুতিও সেরে ফেলবেন তিনি। সে দিকেও নজর রয়েছে শাসক তৃণমূলের। কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘‘আমরা জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের দৃশ্য সাধারণ মানুষকে দেখাতে সব ওয়ার্ডেই এলইডি স্ক্রিন বসাচ্ছি। শহরের কোনও কোনও জায়গায় যজ্ঞানুষ্ঠানও হবে। ওই দিন সাধারণ মানুষ মন্দিরের উদ্বোধন দেখতে এসে যাতে ভগবানের প্রসাদ পান, সেই জন্য তিন হাজার মানুষের খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্তও করা হয়েছে।’’

তবে শুভেন্দুর সনাতনী সম্মেলনকে বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ সুপ্রকাশ। বরং তাঁর অভিযোগ, প্রভু জগন্নাথকে নিয়ে যিনি রাজনীতি করছেন, তাঁর বা তাঁর দলের কর্মসূচি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’ কাঁথিতে সনাতনী সম্মেলন আয়োজনে শুভেন্দুর সহযোগী দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপ দাস অবশ্য বলেন, ‘‘কারা প্রভু জগন্নাথকে নিয়ে রাজনীতি করছে, তা গোটা বাংলা দেখছে। আমরা তো সনাতনী সম্মেলন করব আদালতের নির্দেশে। আদালত নির্দেশ দিলে তবেই সম্মেলন করতে পারব। নচেৎ নয়। দিঘা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে আমাদের সনাতনী সম্মেলন হচ্ছে অক্ষয়তৃতীয়া উপলক্ষে কিছু ধর্মপ্রাণ মানুষকে সামনে রেখে। এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগাযোগ নেই। তা হলে কেন কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যানের গাত্রদাহ হচ্ছে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement