Bihar Election 2025

বিহারে নীতীশ-বিজেপির জয়ে সুবিধাই হবে দিদির! উদ্বুদ্ধ তৃণমূল, ভান্ডারের লক্ষ্মীই সামলে দিল স্থিতাবস্থা বিরোধিতার সব ঝক্কি

বিহারের ভোটে নীতীশের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ সাফল্য পেতে না-পেতেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে, মমতাও কি তা হলে আগামী বছর ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি করবেন। যেমন করেছিলেন ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:০৮
Share:

‘অস্ত্র’ লক্ষ্মীর ভান্ডার, নীতীশ কুমারদের জয়ে উদ্বুদ্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মহামতি গোখলে বলেছিলেন, ‘‘বাংলা আজ যা ভাবে, গোটা ভারত ভাবে আগামী কাল।’’ বিহারের ভোটের ফল ঘোষণা হওয়ার পরে অনেকে বলছেন, দিদি যা ভাবেন, গোটা ভারত তা ভাবে পরদিন। বাংলার মাটিতে যে ‘অস্ত্র’ ব্যবহার করে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট এবং ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই ‘অস্ত্র’ ব্যবহার করেই নীতীশ কুমার এবং বিজেপির জোট সামলে দিল দীর্ঘকাল শাসনের স্থিতাবস্থা বিরোধিতা।

Advertisement

সেই ‘অস্ত্র’ হল, মহিলাদের হাতে নগদ টাকা। একে মহিলা, তার উপর নগদ। বঙ্গে মমতার যে অস্ত্রের নাম ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, পাটলিপুত্রে সেই প্রকল্পই আরও বড় আকারে উপস্থাপিত হয়েছিল ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’ নামে। মহিলাদের স্বনির্ভর করতে ভোটের ঠিক আগেই নীতীশ ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর সরকার নগদ অর্থ দেবে মহিলা ভোটারদের। প্রথম কিস্তিতে দেওয়া হবে ১০ হাজার টাকা। সেই অর্থ পেতে মহিলাদের মধ্যে হিড়িক পড়ে গিয়েছিল হিন্দিবলয়ের হৃদয়ভূমিতে। প্রথম দফা ভোটের দিন কয়েক আগেই ১ কোটি ২১ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১০ হাজার টাকা পৌঁছে গিয়েছিল সরকারের তরফে।

দু’দফার ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, বিহারে গত বারের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি মহিলা এ বার বুথে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। যত সংখ্যক পুরুষ ভোটার দিয়েছেন, তার চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি মহিলা ভোট দিয়েছেন। যার ফল— বেশি ভোট এবং আরও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছে এনডিএ। সম্পূর্ণ ধরাশায়ী আরজেডি এবং কংগ্রেসের মহাগঠবন্ধন।

Advertisement

বিহারে যে নীতীশ-বিজেপির জোট ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে, তা আন্দাজ করেছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। বিহারের জয় স্পষ্ট হতেই শুক্রবার রাজ্য বিজেপির পাশাপাশি সর্বভারতীয় নেতারাও হুঙ্কার দিতে শুরু করেন, ‘‘এর পর বাংলা!’’ বিজেপির এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে এখন থেকেই বাতাবরণ তৈরি করবে, তা স্বাভাবিক। কিন্তু তাতে উদ্বিগ্ন হওয়া দূরস্থান, সার্বিক ভাবে তৃণমূল বরং নীতীশ এবং বিজেপি জোটের জয়ের নেপথ্যের কারণগুলির জন্য ‘উদ্বুদ্ধ’। এনডিএ-এর প্রত্যাবর্তন স্পষ্ট হতেই রাজ্যসভায় তৃণমূলের অন্যতম মহিলা মুখ সাগরিকা ঘোষ সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘মহিলা ভোটারদের ক্ষমতা দেখা গেল ২০২৫ সালের বিহার নির্বাচনে। আগামী বছর বাংলাও দেখাবে। কারণ, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো জননেত্রী আছেন। যিনি ‘মহিলা ফ্যাক্টর’কে আকর্ষিত করেন। খেলা হবে!’

অর্থাৎ, বিহারের পরে বিজেপি যখন বলছে, ‘এ বার বাংলা’ তখন তৃণমূল বলছে ‘খেলা হবে’! ভিত্তি, মহিলাদের হাতে নগদ অর্থ। তবে একই সঙ্গে দু’টি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। প্রথমত, এই ‘জন কল্যাণকামী’ প্রকল্পে অর্থব্যয়ের ‘সুবিধা’ শাসকদলের হাতেই থাকে। দ্বিতীয়ত, এই ধরনের প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ ক্রমশ বাড়তে থাকে। ফলে নীতীশের এককালীন ১০ হাজারের পরে মমতাকে যদি তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অর্থের পরিমাণ বাড়াতে হয়, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

তবে প্রাথমিক ভাবে তৃণমূল এই বিষয়গুলিতে এখনই নজর দিচ্ছে না। বরং প্রথম সারির বেশির ভাগ নেতাই উদ্বুদ্ধ। তাঁদের ব্যাখ্যা, বিহারে নীতীশ এবং বিজেপির এই জয়কে বাংলার প্রেক্ষিতে দেখলে বোঝা যাবে, তৃণমূলের লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। প্রথমত, আরজেডি-কংগ্রেসের জোট বিহারে ভাল ফল করলে বাংলায় মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরের মতো কিছু জেলায় কংগ্রেসের দিকে সংখ্যালঘু ভোট চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারত। বিহারের এই ফলাফলের পরে তার সুযোগ রইল না। সংখ্যালঘু ভোট আরও বেশি করে তৃণমূলের দিকে জমাট বাঁধবে। তাঁদের এ-ও বক্তব্য, বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকলেও সংখ্যালঘু ভোটের কিয়দংশ নীতীশের সঙ্গে গিয়েছে। বাংলায় তার কোনও সুযোগ নেই। দ্বিতীয়ত, বিহারে বিজেপি লড়েছে জোট করে। এখানে তাদের কোনও জোট নেই। আরজেডি-কে জোটের বড় দল হিসাবে কংগ্রেসকে ঘাড়ে বইতে হয়েছে। বাংলায় কংগ্রেসকে তৃণমূল বইবে না। ফলে ‘বোঝা’ নেই। তৃতীয়ত, বিহার দেখিয়ে দিয়েছে সামাজিক সুরক্ষা, মহিলাদের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছে দেওয়ার মতো প্রকল্প দীর্ঘদিনের স্থিতাবস্থা বিরোধিতাকেও ম্লান করে দিয়েছে। তৃণমূলও ১৫ বছরের স্থিতাবস্থা বিরোধিতা সঙ্গে নিয়েই কয়েক মাস পর ভোটের মুখোমুখি হবে।

তবে তৃণমূলের কিছু প্রবীণ নেতা খানিকটা ‘রক্ষণশীল’ হয়ে এখনই উদ্বুদ্ধ হতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, এসআইআর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে বোঝা যাবে কোন দিকে ভোটের চাকা গড়াবে। তাঁরা এ-ও বলছেন যে, নীতীশের সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না। যা তৃণমূলের বিরুদ্ধে রয়েছে। এবং যথেষ্ট জোরালো ভাবেই রয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে, তা আরজি কর আন্দোলন পর্বে স্পষ্ট হয়েছিল। আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গেলেও সেই ক্ষোভ পুরোপুরি উবে গিয়েছে এমন নয়। তবে তাঁরা এ-ও বলছেন যে, বিহারে এনডিএ-এর জয় তৃণমূলের কাছে সাংগঠনিক ভাবে ‘ইতিবাচক’। কারণ, দলের যাঁরা হাওয়ায় গা ভাসিয়ে ২৫০ আসন পাব ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলেন, তাঁরা রাস্তায় নামবেন। কারণ, বিহারের ফলাফলের পরে বিজেপি-ও তেড়েফুঁড়ে বাংলার ভোটের ময়দানে নামার চেষ্টা করবে।

যে প্রশ্নটা দলের প্রবীণদের একটি অংশকে ভাবাচ্ছে— বিহারের ভোটে নীতীশের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ সাফল্য পাওয়ায় মমতাও কি তাঁর নিজস্ব লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি করবেন। যেমনটা করেছিলেন ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে? এখনও সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূল কিছু বলছে না। তবে এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘ভোটের আগে বিধানসভায় যে অন্তর্বর্তী বাজেট (ভোট অন অ্যাকাউন্ট) পেশ হবে, সেখানে যাতে ভান্ডারের লক্ষ্মী বৃদ্ধি করা যায়, সে ব্যাপারে প্রশাসনে আলোচনা শুরু হয়েছে।’’

মমতার ‘অস্ত্র’ এর আগে প্রয়োগ করে বিজেপি মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রেও সাফল্য পেয়েছিল। কালীঘাট লাইনে হেঁটেছিল কর্নাটকের কংগ্রেসও। এ বার তুঙ্গ সাফল্য এল বিহারেও। তৃণমূল অবশ্য বলছে, ‘‘আসল থাকতে নকলের দিকে হাত বাড়াবেন না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement