Matua Voters

ভোটব্যাঙ্ক ফেরাতে তৃণমূলপন্থী মতুয়াদের কৌশলী উদ্যোগ

এতদিন গাইঘাটার ঠাকুরবাড়ির চৌহদ্দিতেই ঘোরাফেরা করত মতুয়াদের রাজনীতি। কিন্তু এ বার উদ্যোগ শুরু হয়েছে ঠাকুরবাড়ির চৌকাঠকে বাদ রেখেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:৫৭
Share:

মতুয়া ভোটব্য়াঙ্ক ফেরাতে সক্রিয় তৃণমূল— নিজস্ব চিত্র।

২০১১ সালে যে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক তৃণমূলের রাজ্য জয়ের রাস্তা মসৃণ করেছিল, ২০২১ সালের ভোটেই তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোট হাতছাড়া হওয়ার ফল হাতেনাতে টের পেয়েছে তারা। মতুয়া ভোটের সিংহভাগই চলে গিয়েছিল বিজেপি-র ঝুলিতে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজ্যের ১০২টি বিধানসভা আসনে মতুয়াদের প্রভাব রয়েছে। যার মধ্যে সরাসরি ৩০টি আসনের নিয়ন্ত্রক তাঁরাই। এমনই সব তথ্য পরিসংখ্যানের কথা মাথায় রেখেই জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বনগাঁর ঠাকুরবাড়িতে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিজেপির এমন সব ‘সক্রিয়’ পদক্ষেপ রুখতেই মতুয়া মহাসংঘের একাংশ নীরবে কৌশলী প্রচার করে যাচ্ছে।

Advertisement

বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের মতো করে মতুয়াদের মন ফিরে পাওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন। শুরু হয়েছে দলগত প্রয়াসও। এর মধ্যেই মতুয়া মহাসংঘের তৃণমূলপন্থীরাও নেত্রীর হাত শক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে। এতদিন গাইঘাটার ঠাকুরবাড়ির চৌহদ্দিতেই ঘোরাফেরা করত মতুয়াদের রাজনীতি। কিন্তু এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে ঠাকুরবাড়ির চৌকাঠকে বাদ রেখেই। সূত্রের খবর, রাজ্যের মতুয়া-অধ্যুষিত এলাকাগুলিতেই যাচ্ছেন আপাত-অচেনা ওই সদস্যরা। সেখানে গিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে আড্ডার ছলে কথাবার্তা বলে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে। চায়ের দোকান, সেলুন, কোর্ট চত্বর, হোটেল-সহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সেখানকার মতুয়া সম্প্রদায়ের মন বোঝার পাশাপাশি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের ‘ভয়াবহতার কথা’ তুলে ধরছেন।

যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তি দিয়ে নাগরিকত্বের বিষয়টি বোঝানো হচ্ছে মতুয়াদের। মতুয়া সম্প্রদায়কে বিজেপি নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই প্রতিশ্রুতি যে কতটা ‘ভিত্তিহীন’, তা-ও বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে। সঙ্গে সিএএ-তে নাগরিকত্বের আবেদন করলেই মতুয়ারা বহিরাগত বলে প্রমাণিত হয়ে যাবেন বলে সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। ভোটার, রেশন, আধারের মতো সরকারি পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও কেন আবার নতুন করে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী হতে হবে? সেই প্রশ্নও মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের মনে জাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

যদিও এই উদ্যোগে তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের কোনও অংশগ্রহণ নেই। তবে বিষয়টি শুরু করার আগে শীর্ষনেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন শাসকল ভুক্ত ওই মতুয়ারা। তবে এমন কোনও উদ্যোগ শুরু হওয়ার কথা মানতে চাননি মতুয়া মহাসংঘের অন্যতম কর্তা তথা কলকাতা পুরসভার ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর (বর্তমান কো-অডিনেটর) রাজীব দাস। কিন্তু তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে, নাগরিকত্ব এবং সিএএ নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে তাঁরা প্রচার করছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপি ভুলভাল প্রচার করে লোকসভায় মতুয়াদের ভোট নিয়েছে। ভারতের নাগরিক হতে গেলে যা যা প্রয়োজন, সবই আমাদের রয়েছে। ভোটার কার্ড থেকে শুরু করে রেশন কার্ড অবধি। তাহলে আবার কেন মতুয়ারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে যাবে?’’ রাজীব আরও বলেন, ‘‘আমি তো কলকাতা পুরসভার ভোটে দাঁড়িয়ে কাউন্সিলর হয়েছি। যদি নাগরিকই না হতাম, তাহলে ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার কোথা থেকে পেতাম! এ সব কথাই আমরা মতুয়াদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।’’

আরও পড়ুন: বহরমপুরে অধীরের সামনেই কৃষি আইন নিয়ে কংগ্রেসকে খোঁচা বিজেপি সাংসদের

ভোট রাজনীতির সমীকরণ বোঝাতে গিয়ে নানা প্রশ্নেরও সম্মুখীন হচ্ছেন তৃণমূলপন্থী মতুয়ারা। উঠে আসছে ঠাকুরবাড়ির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টিও। বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের দলের প্রতি বিরাগভাজন হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: ২০০ টাকায় করোনা টিকা, প্রস্তুতকারী সংস্থাকে বরাত কেন্দ্রের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন