Jiban Krishna Saha

এজলাসে পুত্রকে জড়িয়ে কান্না জীবনকৃষ্ণের! সহযোগিতা করার কথা বললেও বিধায়ককে জেলে পাঠাল আদালত

জীবনের আইনজীবী জ়াকির হুসেন পাল্টা সওয়াল করে জানান, ‘আসল’ যাঁরা, তাঁরা জামিন পেয়ে গিয়েছেন। জীবন আগে যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখনও তদন্তকারীদের সহযোগিতা করেছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৫ ১৩:৩০
Share:

বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। — ফাইল চিত্র।

কলকাতার বিচার ভবনে ইডির বিশেষ আদালতের এজলাসে শনিবার উপস্থিত হন নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। এজলাসে উপস্থিত হন তাঁর স্ত্রী টগরি সাহা এবং পুত্র। পুত্রকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন ইডির হাতে ধৃত বড়ঞার বিধায়ক। আদালতে তাঁর আইনজীবী দাবি করলেন, আগে যখন সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখন তদন্তকারীদের সাহায্য করেছিলেন তিনি। যদিও আদালত তাঁকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলেই থাকবেন তিনি।

Advertisement

এসএসসি দুর্নীতি মামলায় গত ২৫ অগস্ট মুর্শিদাবাদের কান্দির আন্দিতে গ্রামের বাড়ি থেকে জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করে ইডি। তাঁর ইডির হেফাজতের মেয়াদ শনিবার শেষ হয়েছে। সে কারণে বিচার ভবনে ইডির বিশেষ আদালতে হাজির করানো হয়েছিল তাঁকে। সেখানেই এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী এবং পুত্র। পুত্রকে দেখে কেঁদে ফেলেন জীবন। এর আগে যখন সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি, তখন সুপ্রিম কোর্টে জামিন পাওয়ার খবর পেয়েও কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। সে সময় তিনি প্রেসিডেন্সি জেলে ছিলেন। সেই জেল সূত্রেই জানা গিয়েছিল। এ বার এজলাসে ভেঙে পড়লেন বিধায়ক।

ইডির আইনজীবী ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনকৃষ্ণকে আবার হেফাজতে নিতে চেয়ে আবেদন করেন। তিনি সওয়াল করে জানান, এই কয়েক দিনে তদন্তে যা পাওয়া গিয়েছে, তা জানিয়ে নথি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তদন্তকারী অফিসার সে বিষয়ে জানাতে পারেন আদালতে। জীবনের আইনজীবী জ়াকির হুসেন পাল্টা সওয়াল করে জানান, ইডি যে অভিযোগ করেছে, তাতে আরও বড় কারও জড়িত থাকার সম্ভাবনা। সেখানে তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেহাত কম। নিজের মক্কেলকে ‘থার্ড লাইন এজেন্ট’ বলেছেন আইনজীবী। তিনি আরও সওয়াল করে জানান, ‘আসল’ যাঁরা, তাঁরা জামিন পেয়ে গিয়েছেন। জীবন আগেও তদন্তকারীদের সহযোগিতা করেছেন। যদিও আদালত তাঁকে আবার বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, গত কয়েক বছরে এক কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছেন তিনি।

Advertisement

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জীবনকে এর আগে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল। সুপ্রিম কোর্টে তিনি জামিন পেয়েছিলেন। এ বার তাঁকে ইডি গ্রেফতার করেছে। ইডি সূত্রে খবর, এসএসসি মামলার তদন্তে নেমে তৃণমূল বিধায়কের অনেক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং লেনদেনের হদিস মিলেছে। শুধু জীবনকৃষ্ণ নন, তাঁর ঘনিষ্ঠদের অ্যাকাউন্টেও লেনদেন হয়েছে বলে খবর। এ বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য, নথি সংগ্রহ করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। অনেকের বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে ৪০ লক্ষের বেশি টাকা অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন জীবনকৃষ্ণ। কারও কারও কাছ থেকে একাধিক দফায় টাকা নেওয়া হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশই চাকরি পাননি।

২৫ অগস্ট জীবনের বাড়িতে ইডি যখন হানা দেয়, তখন বিধায়ক পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। দৌড়োতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে কাদায় পড়ে যান তিনি। তাঁর মোবাইল ছিটকে পড়ে পরিত্যক্ত নর্দমায়। জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে আসে ইডি। পরে খোঁজাখুঁজি করে একটি নর্দমা থেকে পাওয়া যায় জীবনের মোবাইল। বীরভূমে তাঁর পিসি তথা তৃণমূল কাউন্সিলর মায়া সাহার বাড়িতেও তল্লাশি অভিযান চলেছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এর আগে সিবিআই যখন জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করেছিল, তিনি কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের দেখে দু’টি মোবাইল বাড়ির পাশের পুকুরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। তিন দিন ধরে তল্লাশি চালিয়ে পুকুরের জল ছেঁচে তুলে সেই মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement