দুধের ভ্যানে ধাক্কা, উল্টে গেল গাড়ি, দুর্ঘটনায় রক্ষা অভিষেকের

মুর্শিদাবাদে দলীয় কর্মিসভা থেকে ফেরার পথে মঙ্গলবার এক পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হলেন তৃণমূল যুব সভাপতি তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

দুর্ঘটনাগ্রস্ত অভিষেকের গাড়ির অবস্থা দেখছেন সিআইডি অফিসাররা। ছবি: দীপঙ্কর দে।

মুর্শিদাবাদে দলীয় কর্মিসভা থেকে ফেরার পথে মঙ্গলবার এক পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হলেন তৃণমূল যুব সভাপতি তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন বিকেলে সিঙ্গুরের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি দুধের গাড়িকে আচমকাই ধাক্কা মেরে উল্টে যায় অভিষেকের গাড়িটি। দুমড়ে যাওয়া বুলেটপ্রুফ এসইউভি থেকে তরুণ সাংসদকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তাঁর প্রায় অচৈতন্য অবস্থা। বাঁ দিকের চোখের নীচটা থেঁতলে গিয়েছে। কনভয়ের পিছনের দিকে থাকা একটি গাড়িতে চাপিয়ে দ্রুত তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে।

Advertisement

রাতে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাংসদের বাঁ চোখের নীচের হাড়টি ভেঙেছে বলে আশঙ্কা। তবে এখনই অস্ত্রোপচার না করে আপাতত ৭২ ঘণ্টা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আপাত ভাবে ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা বলে মনে হলেও ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খবরটি শোনার পরে প্রথমে নবান্নে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন তিনি। সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন। হাইওয়েতে গাড়ির গতি কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, জেলা প্রশাসনকে তা-ও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। তার পরে সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছন তিনি।

Advertisement

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, দুর্ঘটনা ঘটে বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ। বহরমপুর থেকে ফিরছিলেন অভিষেক। বর্ধমানে চা খাওয়ার জন্য তাঁদের কনভয় দাঁড়ায়। তত ক্ষণ তাঁর গাড়িতেই ছিলেন সদ্য কংগ্রেস থেকে দলে আসা বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। ফের রওনা দেওয়ার সময় মানস নিজের গাড়িতে চলে যান। কনভয়ের পিছনে আসতে থাকে সেই গাড়ি। পাইলট কারের পিছনে অভিষেকের গাড়িতে থাকেন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব সুমিত রায়। সুমিত চালকের পাশেই বসেছিলেন। অভিষেক বসেছিলেন মাঝের সিটের বাঁ দিকে জানলার ধারে।

সিঙ্গুরের কাছাকাছি রাস্তার বাঁ দিক ঘেঁষে বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল একটি দুধের ভ্যান। সেটিকে উদ্ধারের জন্য একটি ব্রেক ভ্যানও মজুত ছিল। অভিষেকের পাইলট কার পাশ কাটিয়ে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যায়। কিন্তু অভিষেকের গাড়ি সরাসরি ধাক্কা মারে দুধের ভ্যানে। নিমেষে উল্টে যায় এসইউভি। কয়েক বার পাল্টি খেয়ে সেটি ডিভাইডারে গিয়ে পড়ে। অভিষেক যে দিকে বসেছিলেন, সেই অংশটি দুমড়ে ভিতরে ঢুকে যায়। ঠিক পিছনের এসইউভি-ও দ্রুত ব্রেক কষতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাল্টি খায়। নিরাপত্তা রক্ষীরা তৎক্ষণাৎ ছুটে আসেন। নেমে আসেন মানস ভুঁইয়া-খালেদ এবাদুল্লাহরাও। সকলে মিলে গাড়ির দরজা ভেঙে অভিষেককে উদ্ধার করেন। বের করে আনা হয় গাড়ির চালক এবং সুমিতকেও। এর পর মানসের গাড়িতেই অভিষেককে শুইয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন দুই পুলিশ কর্মী। মমতাকে ফোন করে খবর দেন মানস।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আহত অভিষেককে। —নিজস্ব চিত্র

অভিষেক পৌঁছতেই আইটিইউ-তে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। প্লাস্টিক সার্জন রাজেন টন্ডনের নেতৃত্বে মেডিক্যাল টিম গঠন করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, আইটিইউ-র ২১৭ নম্বর কেবিনে শুরু থেকেই ঠায় বসেছিলেন অভিষেকের মা ও স্ত্রী। রাতে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভাল রকম চোট পেয়েছে অভিষেক। আমি যখন দেখেছি তখনও রক্ত ঝরছিল। মুখটা খুব ফুলে রয়েছে।’’ জানান, অভিষেকের সঙ্গেই দশ জন পুলিশ কর্মী কিছুটা আহত হয়েছেন।

সন্ধেবেলা সিআইডির স্পেশাল সুপার আকাশ মেঘারিয়ার নেতৃত্বে গোয়েন্দাদল ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। সঙ্গে ছিল কলকাতা পুলিশের ফেটাল স্কোয়াড ট্রাফিক পুলিশেরও একটি দল। দাঁড়িয়ে থাকার সময় দুধের গাড়ি এবং ব্রেক ভ্যান দু’টি কেন ‘ইন্ডিকেটর’ জ্বালায়নি, সেই অভিযোগে রাতে দু’টি গাড়ির চালককে আটক করা হয়।

বিকেলেই মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে অভিষেকের খবর নেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। সন্ধ্যায় হাসপাতালে অভিষেককে দেখতে যান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ। খবর নেন অন্য বিরোধী নেতারাও। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ হাসপতাল থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠাই ওকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। ওকে যে এত মানুষ ভালবাসে, জানতাম না।’’ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার পর কিছুটা আশ্বস্ত অভিষেকের বাবা অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বলেন, ‘‘ঈশ্বরই বাঁচিয়েছেন। এখন ও ভাল আছে। মনে হচ্ছে বড় ফাঁড়া কাটল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন