ফাইল চিত্র।
বিজেপির বিরুদ্ধে যখন জাতীয় স্তরে জোট গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়েছে তখনই তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গের দৃষ্টান্ত টেনে দাবি করল, ‘আমরা একক ভাবে সেই লড়াই মানুষের সমর্থনে জিতে আসার পর জানি কী ভাবে বিজেপিকে হারাতে হয়— তাদের সর্বভারতীয় মিলিত শক্তিকে হারাতে হয়।’ শনিবার তৃণমূলের মুখপত্রে লেখা সম্পাদকীয়তে এই মন্তব্যের পাশাপাশি আরও বলা হয়েছে, ‘মনে রাখুন, এ বার বিধানসভা ভোটে নেত্রীর নেতৃত্বে আমরা একাই বিজেপিকে হারিয়েছি।’ এই রাজ্যের নিরিখে কংগ্রেস ও সিপিএম দুই দলকেই কার্যত তুলোধনা করেছে তৃণমূলের ওই সম্পাদকীয়।
জাতীয় স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে সবাইকে একজোট করতে মমতা সবার আগে উৎসাহ দেখিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের পরে কংগ্রেসের বিশেষ করে রাহুল গাঁধীর ডাকা বিভিন্ন কর্মসূচিতে তৃণমূলের অনুপস্থিতি বা সক্রিয় ভূমিকা না-নেওয়া রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের নজরে এসেছে। মুখপত্রের সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, ‘আজ হঠাৎ মনে হল, ফোনে বলে দিলাম, আমরা মিছিল–মিটিং করছি চলে আসুন, এটা তৃণমূলের ক্ষেত্রে চলবে না।’ সনিয়া গাঁধী ২০ অগস্ট বিরোধীদের যে বৈঠক ডেকেছেন মমতার তাতে ভার্চুয়াল ভাবে অংশ নেওয়ার কথা। তার আগে তৃণমূলের মুখপত্রে এই ধরনের সম্পাদকীয় টিপ্পনীকে রাজনৈতিক মহল তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে। এই অবস্থায় বিরোধী ঐক্যের আবহ কী দাঁড়াবে তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠছে।
এআইসিসি অবশ্য তৃণমূল মুখপত্রের বক্তব্য সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনও বিরূপ কথা বলেনি। এআইসিসি’র ব্যাখ্যা, তৃণমূল নেত্রী নিজেই দিল্লিতে এসে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকে বিরোধী জোটের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। সেই জোটে যে কংগ্রেসকে দরকার, তা-ও তৃণমূল নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছে। আগামী ২০ অগস্ট কংগ্রেস সভানেত্রীর ডাকা বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যোগ দেবেন বলেই আশা করা হচ্ছে। সেখানে নিশ্চিত ভাবেই বিরোধী জোটের সমীকরণ নিয়ে মত বিনিময় হবে।
শনিবার তৃণমূলের মুখপত্র এ কথাও লিখেছে, ‘কংগ্রেস সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনি বলেই বিজেপি এত সাংসদ নিয়ে সরকার গড়ার সুযোগ পেয়েছে। একাধিক রাজ্যেও এ কথা প্রযোজ্য।’ ফলে এক দিকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবং কংগ্রেস- সিপিএম জোটকে হারানোর ক্ষেত্রে মমতার ‘একক’ নেতৃত্বের প্রশংসা অন্য দিকে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের জন্য কংগ্রেসের দিকে আঙুল তোলার যে অবস্থান তৃণমূল নিয়েছে তাতে পর্যবেক্ষকরা অনেকেই মনে করছেন বিরোধী জোটে মমতার ‘নেতৃত্ব’ প্রতিষ্ঠা করছে তাঁর দল। যদিও মমতা যে কংগ্রেসকে নিয়েই জোট গঠন করতে চান তারও উল্লেখ ওই লেখায় রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি-বিরোধী জোট যে বাস্তব নয়, তা সবাইকে বুঝতে হবে। তা ছাড়া অন্য দলকে হারাতে কংগ্রেস কখনও বিজেপির সঙ্গে হাত মেলায়নি।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমরা ধারাবাহিক ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে। কারও কাছ থেকে তা আমাদের শিখতে হবে না।’’