অন্যতম অভিযুক্ত জয়গাঁও-এর এসডিপিও অনিরুদ্ধ ঠাকুর।
২৮ কোটি টাকার সোনা পাচারে নাম জড়াল রাজ্যের তিন পুলিশ আধিকারিক এবং দুই সেনা কর্মীর। অভিযোগ, ভুটান সীমান্ত দিয়ে বেআইনি ভাবে এ রাজ্যে ঢোকা প্রায় ১৫ কিলোগ্রাম বাজেয়াপ্ত সোনা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেছিলেন অভিযুক্তরা। এক এসডিপিও পদমর্যাদার আধিকারিক সহ তিন পুলিশ অফিসার এবং সেনার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও তাঁর সহযোগি জওয়ানকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। ধৃতদের শনিবার আলিপুরদুয়ার আদালতে তোলা হয়।
গত কয়েক মাস ধরেই ভুটান সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পরিমাণে বেআইনি সোনা ঢুকছিল এই রাজ্যে। কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতর (ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স) উত্তরবঙ্গের একাধিক জায়গায় হানা দেয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের থেকে পাওয়া সূ্ত্র ধরেই তদন্তে নামে রাজ্য সিআইডি।
সিআইডি গোপন সূ্ত্রে খবর পায়, সোনা পাচারকারীরা চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে প্রায় ১৫ কিলোগ্রাম বেআইনি সোনা ভুটান থেকে এ দেশে পাচার করবে। সেই পাচারকারীদের উপর নজর রাখতে গিয়েই সিআইডির আধিকারিকরা জানতে পারেন, পাচার করার জন্য আনা সোনা ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করেছে রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক। সরকারি ভাবে সেই সোনা বাজেয়াপ্ত দেখানো হয়নি। সেখানেই সন্দেহ হয় সিআইডি আধিকারিকদের।
আরও পড়ুন: ৪৯৮-এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে খুশি সব পক্ষই
এই দুই পুলিশ আধিকারিক ও অন্য সন্দেহভাজনদের উপর ১০ সেপ্টেম্বর থেকে নজর রাখা হয়েছিল বলেও জানিয়েছে সিআইডি। অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম অনিরুদ্ধ ঠাকুর। আলিপুরদুয়ার জেলার জয়গাঁও-এর এসডিপিও-র পদে রয়েছেন অনিরুদ্ধ। অভিযোগ, গোটা প্রক্রিয়াতেই তাঁর সঙ্গী ছিলেন বারোবিষা থানার ওসি কমলেন্দ্র নারায়ণ। তাঁদের গতিবিধির উপর নজর রাখতে গিয়েই সিআইডি জানতে পারে ওই ২৮ কোটি টাকা মূল্যের সোনা পাচারকারীদের থেকে বাজেয়াপ্ত করে আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছিলেন এই দু’জন।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শুক্রবার রাতেই আটক করা হয় এই দুই পুলিশ কর্তাকে। জয়গাঁও পৌঁছন সিআইডি-র শীর্ষ আধিকারিকরা, ছিলেন আইজি উত্তরবঙ্গ আনন্দ কুমার এবং রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের একাধিক আধিকারিকরাও। আটক অনিরুদ্ধ এবং কমলেন্দ্রকে জেরা করে জানা যায় গোটা চক্রে জড়িত আরও অনেকে। উঠে আসে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদ মর্যাদার সেনা আধিকারিক পবন ব্রহ্ম এবং সেনা জওয়ান দশরথ সিংহের নাম। শুক্রবার রাতেই তাঁদের জেরার জন্য আটক করা হয়। দু’জনেই সেনার গোয়েন্দা বিভাগের কর্মী এবং হাসিমারা সেনা ছাউনিতে কর্মরত। হাসিমারা থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সত্যেন্দ্র নাথ রায়কেও রাতেই আটক করা হয় এই পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে। শনিবার পাঁচ জনকেই গ্রেফতার করা হয়।
সিআইডি জানিয়েছে, কমলেন্দ্র নায়ারণ আগে হাসিমারারই ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ছিলেন। তারই অধঃস্তন ছিলেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সত্যেন্দ্র। শুক্রবার গভীর রাতে এঁদেরকে আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপারের অফিসে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিআইডি আধিকারিকদের সন্দেহ করা হচ্ছে, আরও বেশ কিছু সেনা ও পুলিশ আধিকারিক এই সোনা পাচার চক্রে যুক্ত। পাঁচ জনকে জেরা করে তাঁদেরই হদিশ চালানো হচ্ছে। খবর দেওয়া হয়েছে সেনা ইস্টার্ন কমান্ডকেও। শীর্ষ সেনা আধিকারিকরাও সমান্তরাল তদন্তের জন্য আলিপুরদুয়ারে পৌঁছচ্ছেন।
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে খুন করে থানায় হাজির স্বামী
ডিআইজি সিআইডি নিশাত পারভেজ বলেন , ‘‘ ধৃতদের কাছ থেকে এক কিলোগ্রাম ওজনের ১৫ টি সোনার বাট পাওয়া গিয়েছে। তবে সেই সোনার উৎস কী, তার কোনও সদুত্তর তাঁরা দিতে পারেননি। দুর্নীতির অভিযোগে পাঁচজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।”
শুক্রবার রাতেই গোটা ঘটনা জানানো হয় মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও। স্বরাষ্ট্র দফতর সূ্ত্রের খবর, ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সকালেই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের সবুজ সঙ্কেত দেয় মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। অন্য দিকে সেনা কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ফোর্ট উইলিয়াম সূত্রের খবর, ধৃত সেনা কর্মীদের সেনার নিজস্ব আদালতে বিচার করার আবেদন জানানো হবে সেনার পক্ষ থেকে।
দুই বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, 'বাংলার' খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।