Rahul Gandhi

Rahul Gandhi: ‘বিকল্প নন’ রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলল তৃণমূল, প্রস্তুতি পর্বেই সংশয়ে জোট

বিজেপি-বিরোধী জোটে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলে দিল তৃণমূল কংগ্রেস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:১৭
Share:

ফাইল চিত্র

বিজেপি-বিরোধী জোটে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। সম্ভাব্য শরিকের এই প্রশ্ন ঘিরে প্রস্তুতি পর্বেই সংশয় ঘনাল জোটের চেহারা নিয়ে।
শুক্রবার দলীয় মুখপত্রে রাহুল সম্পর্কে লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের এই অংশকে প্রধান খবর হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। দলীয় মুখপত্রে সুদীপের উদ্ধৃতি হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘‘রাহুল গাঁধীকে আমি বহু দিন চিনি। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, তিনি এখনও নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প মুখ হয়ে উঠতে পারেননি।’’ শুধু তাই নয়, দলীয় মুখপত্রে উদ্ধৃতি হিসেবে প্রকাশিত সুদীপের বক্তব্য, ‘‘আমরা সব বিরোধী দলের সঙ্গে কথা বলেই মমতাকে বিকল্প মুখ হিসেবে সামনে রেখে প্রচারে যাব।’’

Advertisement

বিরোধী জোটে কংগ্রেসকে নিয়ে আপত্তি না থাকলেও রাহুলকে নিয়ে তৃণমূলের ‘অ্যালার্জি’ আগেও রাজনৈতিক মহলের নজরে এসেছে। এ বার সুদীপের ওই মন্তব্যে দলের তরফে কার্যত সিলমোহর দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাহুল গাঁধীকে মানুষ মোদীর বিকল্প হিসেবে দেখছে না। বারবার নির্বাচনী ব্যর্থতায় সুযোগ এবং সময় নষ্ট করা যাবে না। রাহুল সুযোগ পেয়েছেন। পারেননি।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জোটের বিকল্প হিসেবে জবরদস্ত বিশ্বাসযোগ্য মুখ সামনে রেখে প্রচারে যেতে হবে। আর তা হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’

বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে একক শক্তিতে হারানোর পরেই রাজ্যের বাইরে দলের বিস্তারে বিশেষ জোর দিয়েছিল তৃণমূল। সেই সূত্রেই জাতীয় স্তরে বিজেপি- বিরোধী জোটে দলের বিশেষ স্বীকৃতি দাবি করেছিল তারা। এ বার আরও স্পষ্ট করে তা সামনে এনেছেন দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সুদীপ। উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূলের কর্মিসভায় বিরোধী জোটে সরাসরি মমতার নেতৃত্ব দাবি করেছেন তিনি। গত বুধবার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে তৃণমূলের উত্তর কলকাতা জেলা দলের সম্মেলনে সুদীপের বক্তৃতা থেকে ওই অংশ উদ্ধৃত করা হয়েছে। তবে সেখানে সুদীপ এ-ও বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে আমরা কখনই বিজেপির বিকল্পর কথা বলছি না।’’

Advertisement

এই বার্তা সামনে আসতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপিকে খুশি করার অভিযোগ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের এই বার্তায় সব থেকে বেশি খুশি হবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কারণ, তিনি চান যাতে বিরোধী ঐক্য না হয়।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী চান, আঞ্চলিকদলগুলি যাতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। তাই বিজেপি পঞ্জাবে ‘আপ’কে মদত করছে, বাংলায় হয়তো তৃণমূলকে মদত করবে।’’ রাহুল সংম্পর্কে সুদীপের মন্তব্যের সমালোচনা করে অধীরের প্রশ্ন, ‘‘রাহুল গাঁধী কি বলেছেন তিনি যোগ্য? তা ছাড়া কে যোগ্য বা কে যোগ্য নন তা বলার সময় কি এসেছে?’’ তৃণমূলকে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘রাহুল পারবেন না এ কথা বিজেপি বলে। তৃণমূল এ কথা বললে বিজেপির সঙ্গে তাদের ফারাক কমবে।’’

সিপিএমও জোটের নেতৃত্ব নিয়ে তৃণমূলের এই দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এ দিন কলকাতায় বলেন, ‘‘গত নির্বাচনের আগেও আমরা অনেক কিছু দেখেছি। কে মুখ হবেন, সেটা বলার সময় এখনও আসেনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘১৯টা দল সংসদের ভিতরে ও বাইরে বিজেপির বিরোধিতা করছে। এই আন্দোলন চলবে। কিন্তু কোনও ফ্রন্ট এখনও তৈরি হয়নি। ভোটের অনেক দেরি। এর মধ্যে অনেক রকম প্রস্তাব আসতেই থাকবে।’’ তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘নিজেদের মুখপত্রে ছবি ছাপছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী বানাচ্ছেন। বানান। তাতে কী যায় আসে?’’

রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পর মূলত মমতার আগ্রহেই অবিজেপি দলগুলি ও তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। তবে তার মধ্যেই জোটের নেতৃত্ব দাবি করে তৃণমূলের এই রকম বার্তায় রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। দিল্লিতে রাহুল বা কংগ্রেসের ডাকে অনুষ্ঠিত কয়েকটি কর্মসূচিতে তৃণমূলের অনুপস্থিতি জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি করেছিল। সেই সময়ও এ রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে তৃণমূল যে শক্তির প্রমাণ দিয়েছে তার উল্লেখ করে দলীয় নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, কেউ ডাকলেই তাঁরা যাবেন না। দলীয় মুখপত্রের সম্পাদকীয়তেই তা জানিয়ে সরাসরি কংগ্রেসকে বার্তা দিয়েছিল তৃণমূল।

বিরোধী ঐক্যের প্রেক্ষাপটে ভবানীপুরের উপনির্বাচনে মমতার বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি। তবে দল মমতার প্রচারে নামবে না বলেও জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। এই অবস্থায় ভবানীপুরে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতার ছবি দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির পক্ষে তৃণমূল নেত্রীকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আইএনটিইউসি-র নামে ব্যানার ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। ব্যানারে আবেদনকারীদের তরফে আইএনটিইউসি সভাপতি হিসেবে দেবাশিস দত্তের নাম রয়েছে। কিন্তু দল বা শ্রমিক সংগঠনের তরফে এমন কোনও প্রচার করা হচ্ছে না বলে কংগ্রেসের দাবি। ওই ব্যক্তি আইএনটিইউসি-র সভাপতি নন এবং ‘ভুয়ো’ পরিচয়ে এ ধরনের ব্যানারের দায়িত্বও তাঁদের নয় বলে জানিয়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনারকে (সদর) চিঠি দিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ প্রসাদ। ভবানীপুর থানায় অভিযোগ জানান আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি কামারুজ্জামানও। প্রদীপের বক্তব্য, ভবানীপুরে প্রচারে না নামার কথাই কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছিল। তবে তৃণমূল তাদের প্রচারে শামিল হওয়ার জন্য কংগ্রেসকে আবেদন জানালে তখন ভেবে দেখা যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন