জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ (বাঁ দিক থেকে) অনিকেত মাহাতো, দেবাশিস হালদার এবং আসফাকুল্লা নাইয়া। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
কাউন্সেলিং না মেনে ‘প্রতিহিংসামূলক ভাবে পোস্টিং’ পরিবর্তন করা হয়েছে তিন জনের। এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের বক্তব্য, আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ দেবাশিস হালদার, অনিকেত মাহাতো এবং আসফাকুল্লা নাইয়া এই ‘প্রতিহিংসার’ শিকার। তাঁদের ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং না মেনে অন্যত্র ‘পোস্টিং’ দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পথে লড়াই করছেন তিন জন। পাশাপাশি, জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’ বা ডব্লিউবিজেডিএফ ঠিক করেছে, এই তিন জনের মধ্যে দু’জন নির্ধারিত পোস্টিংয়েই যোগ দেবেন। এক জন যোগ দেবেন না। নেবেন না বেতনও। আপাতত এই ‘রণকৌশলেই’ এগোতে চাইছেন ডাক্তারেরা।
শুক্রবার দেবাশিস এবং আসফাক পোস্টিংয়ের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছেন। তার পরেই সংগঠনের তরফে সমাজমাধ্যমে ভিডিয়োবার্তা দিয়েছেন তাঁরা। ছিলেন অনিকেতও। সেখান থেকেই দেবাশিস ‘রণকৌশলের’ কথা জানান। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ হিসাবে আমাদের তিন জনের পোস্টিং পরিবর্তন করা হয়েছে। সংগঠনগত ভাবে আমরা মনে করছি, আরজি করের ঘটনা, থ্রেট কালচার (হুমকি সংস্কৃতি), স্বাস্থ্য ভবনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা যে প্রতিবাদ করেছিলাম, তার জন্যই এটা করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য ভবনে লিখিত ভাবে আমরা অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু কোনও প্রত্যুত্তর পাইনি। ফলে আমরা আইনি পথে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
অভিযোগ, ‘পোস্টিংয়ের’ বিরোধিতা করায় জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন ‘সরকার ঘনিষ্ঠ’ অনেকে। দেবাশিস বলেন, ‘‘একটা অপপ্রচারের চেষ্টা চলছে, আমরা নাকি গ্রামে যেতে চাই না। গ্রামের মানুষের চিকিৎসা নাকি আমরা করতে চাই না। প্রতিহিংসামূলক ভাবে যেখানে আমাদের পোস্টিং দেওয়া হয়েছে, সেখানকার মানুষ তো কোনও দোষ করেননি। তাঁদের যাতে অসুবিধা না হয়, তাই আমরা ঠিক করেছি, আমি আর আসফাকুল্লা সেখানে গিয়েই কাজে যোগ দেব। পাশাপাশি, আইনি লড়াইও চালিয়ে যাব।’’ উল্লেখ্য, দেবাশিসকে মালদহের গাজোল স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এবং আসফাকুল্লাকে পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘পোস্টিং’ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদস্বরূপ অনিকেত নির্ধারিত জায়গায় কাজে যোগ দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাক্তারদের সংগঠন। কাজ না-করায় তিনি নেবেন না বেতনও। দেবাশিস বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের জন্য আমরা যে আন্দোলন করেছি, তার প্রতি আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেটা আমরা ভুলে যাইনি। তাই এই সিদ্ধান্ত। যদি কেউ ভেবে থাকেন, অনিয়মকে আমরা মেনে নিচ্ছি, তা ভুল। কারণ, সংগঠনগত ভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের মধ্যে এক জন অর্থাৎ অনিকেত আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন এবং কাজে যোগ দেবেন না। কারণ, মেধাভিত্তিক কাউন্সেলিং উপেক্ষা করে অন্যায় করা হয়েছে। অনিকেত কোনও পারিশ্রমিকও নেবেন না।’’
অনিকেত বলেন, ‘‘আন্দোলনে বহু সাধারণ মানুষ আমাদের সমর্থন করেছেন। এখন অপপ্রচার করা হচ্ছে যে, আমরা সেই সাধারণ মানুষেরই বিরুদ্ধে! তাঁদের কথা আমরা কখনওই ভুলে যেতে পারি না। আবার, অনিয়মকেও মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমাদের আইনি লড়াই চলবে।’’ পরে আদালত চত্বর থেকে অনিকেত বলেন, ‘‘১৬০০ জনের মধ্যে শুধু আমাদের তিন জনের পোস্টিং পরিবর্তন করা হয়েছে। যেখানে পোস্টিং দিয়েছে, আমাদের সেখানে যেতে কোনও সমস্যা নেই। দেবাশিসদা, আসফাকদা সেখানে যাবেন। স্বাস্থ্য ভবনের এই অনৈতিকতার বিরুদ্ধে, স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে আমি পোস্টিংয়ের জায়গায় যোগ দিচ্ছি না।’’ আসফাকুল্লার বক্তব্য, ‘‘আমাদের লড়াই শুধু আইনি পথে নয়, রাস্তাতেও চলবে। আগামী দিনে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটব। যাতে আর কেউ এই অন্যায়ের সম্মুখীন না হন, সেই চেষ্টা করব। যেখানে যাব, সেই গ্রামেও আমরা আন্দোলন সংগঠিত করব। স্বাস্থ্যের অধিকার সকলের। তার দাবিতে আমাদের লড়াই চলবে।’’
বস্তুত, সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তারদের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার পরে তিন বছরের ‘বন্ড’ থাকে। সেই ‘বন্ড’ অনুযায়ী সরকারের তরফে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কোথায় কাকে নিয়োগ করা হবে, কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এবং মেধাতালিকার ভিত্তিতে তা স্থির হয়। মেধাতালিকায় থাকা চিকিৎসকেরা পোস্টিংয়ের জন্য বেছে নিতে পারেন পছন্দের জায়গা। যাঁদের নাম তালিকার উপরের দিকে থাকে, তাঁরা আগে সুযোগ পান। কিন্তু দেবাশিস, অনিকেত, আসফাকুল্লার ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়া মানা হয়নি বলে অভিযোগ।