জবকার্ড হাতে হাবলের স্ত্রী সন্ধ্যা বাগদি। —নিজস্ব চিত্র।
এলাকায় ‘কাজ নেই’। তাই জীবন এবং আইন ভাঙার ঝুঁকি নিয়ে কয়লা কাটতে গর্তে ঢুকতে হয়। এমনটাই দাবি করছেন মালিয়াড়া গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার সকালে বাঁকুড়ার বড়জোড়া নর্থ কোলিয়ারিতে অবৈধ ভাবে কয়লা তোলার সময় ধসে মৃত্যু হয়েছে মালিয়াড়ার তিন জনের। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দু’ভাই—হাবল ও বিশ্বনাথ বাগদি। হাবলের স্ত্রী সন্ধ্যা বাগদি এ দিন পরিবারের জবকার্ড বার করে দাবি করেন—২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাবল শেষ একশো দিনের প্রকল্পে কাজ পেয়েছেন। বিশ্বনাথ আরও আগে—২০১৩ সালের অক্টোবরে।
২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে একশো দিনের প্রকল্পে (এমজিএনআরইজিএস) বাঁকুড়ায় এখনও পর্যন্ত গড়ে ৭২ দিন করে জবকার্ডধারীরা কাজ পেয়েছেন। বড়জোড়া ব্লকে এই গড় ৬২ দিন। কিন্তু মালিয়াড়ার বাগদিপাড়া, বাউরিপাড়া ও কিনাইপাড়ার অনেক বাসিন্দাই দাবি করেছেন, তাঁরা ওই প্রকল্পে কাজ পাননি। সে ক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারত চাষের কাজ। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের যেটুকু জমি রয়েছে, তার মাটি অনেকটাই শক্ত, পাথুরে। তাতে চাষ ভাল হয় না।
আরও পড়ুন: না ফিরলেই মরতে হত না, আক্ষেপ
মালিয়াড়ার বাসিন্দা সুখময় বিশ্বাস, রেণু বাউড়ি, অলকা বাউড়িরা জানাচ্ছেন, বেশ কয়েক বছর আগে এলাকায় কিছু ইটভাটা ছিল। সেখানে দিনমজুরি করে তাঁদের চলে যেত। পরিবেশ বিধি ভাঙার দায়ে এখন সেগুলো বন্ধ। তাঁদের দাবি, ‘‘চাষ নেই। কলকারখানায় কাজ নেই। একশো দিনের কাজ মেলেনি। তাই জীবনের ঝুঁকি নেয় অনেকে।” স্থানীয় সূত্রের খবর, অবৈধ ভাবে কয়লা তুলে খোলাবাজারে বিক্রি করলে বস্তাপিছু ১০০-১২০ টাকা মেলে। গড়ে তিন থেকে পাঁচ বস্তা তোলেন অনেকে। এলাকাবাসীর একাংশ তাই সে কাজে জড়াচ্ছেন বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
আরও পড়ুন: সুরক্ষাবিধি না মানলেই বিপদ, মত খনিকর্তাদের
বিডিও (বড়জোড়া) ভাস্কর রায় অবশ্য বলেন, ‘‘ওই এলাকা থেকে কাজের আবেদন পাইনি। না হলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নিতাম।’’ তবে বড়জোড়ার বিধায়ক সিপিএমের সুজিত চক্রবর্তীর অভিযোগ, একশো দিনের প্রকল্পে কাজ দেওয়ার সময়ে দেখা হয় রাজনীতির রং। যন্ত্র দিয়ে কাজ করিয়ে শ্রমিকদের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দেওয়া হয়। প্রশাসন সে অভিযোগ মানেনি। মালিয়াড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের শান্তনু তিওয়ারিও বলেন, ‘‘এলাকার বেশিরভাগ মানুষ একশো দিনের কাজ পেয়েছেন।’’
বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস জানাচ্ছেন, কোনও জবকার্ডধারী একশো দিনের প্রকল্পে কাজ চাইলে তাঁকে কাজ দিতেই হবে। তাঁর আশ্বাস, ‘‘মালিয়াড়ায় যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’