২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬: ইসিএলের ঝাড়খণ্ডের রাজমহল খনির লালামাটিয়া প্রকল্প এলাকায় দুর্ঘটনা। মৃত্যু হয় তিরিশ জনের।
৩১ জানুয়ারি, ২০১৯: বাঁকুড়ার বড়জোড়া থানার বাগুলি।
ফের দুর্ঘটনা।
দু’টি ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনাটি ঘটে খোলামুখ খনিতে। ইসিএলের প্রাক্তন আধিকারিকেরা জানান, এই ধরনের খনিতে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পুকুর কাটার মতো করে মাটি কেটে কয়লা তোলা হয়। অভিযোগ, এই ধরনের খনিগুলিতে কয়লা কাটার জন্য যে ধরনের সুরক্ষাবিধি মেনে চলা দরকার, অনেক ক্ষেত্রেই তা মানে না বরাতপ্রাপ্ত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাগুলি। ‘অবৈধ’ ভাবে কয়লা তোলা হলে তো সে সব বিধি মানার প্রশ্নই নেই।
মূলত কী কী সুরক্ষাবিধি মানা দরকার?
কোল ইন্ডিয়ার প্রাক্তন খনি বিশেষজ্ঞ অনুপ গুপ্ত জানান, খনির মাটি ও কয়লা কেটে উপরে তুলতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র, ডাম্পার ও ‘হাইওয়া’ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। যন্ত্রগুলি খনিতে নামানো ও তোলার জন্য একটি শক্ত ও প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করতে হয় (হল রোড)। ভারী যন্ত্র ও কয়লাবোঝাই হাইওয়া ও ডাম্পার যাতায়াত করায় রাস্তায় ফাটল ধরে। ফলে সঙ্গে সঙ্গে সেই ফাটল মেরামত করতে হয়। না হলে রাস্তা ভেঙে খনিতে ধস নামার সম্ভাবনা থাকে। ফলে প্রতি দিন দরকার, রাস্তা পরীক্ষা। খনিকর্তাদের একাংশ জানান, অনেক সময়েই রাস্তা যতটা শক্ত ও চওড়া হওয়া উচিত, ততটা করা হয় না। মেরামত তো দূর অস্ত্।
শুধু রাস্তার দিকে নজর রাখাই নয়, খনির দেওয়ালও যথেষ্ট পরিমাণে মোটা ও শক্ত রাখতে হয়। তা না হলে মাটি কেটে গভীরে যাওয়ার সময়ে দেওয়াল আলগা হয়ে ধসে যেতে পারে। মাটি কাটতে কাটতে নীচে নামার সময় উপরের অংশ ধরে রাখতে কয়লার চওড়া স্তম্ভ রাখতে হয়। স্তম্ভ দুর্বল হলে খনিতে বিস্ফোরণের সময়ে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উপরের অংশ ভেঙে পড়তে পারে।
কয়লার স্তরে পৌঁছনোর আগে মাটি ও পাথর (‘ওভারবার্ডেন’) কেটে খনি থেকে নিরাপদ দূরত্বে জমা করতে হয়। তা না হলে খনির উপরিভাগ অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পেরে ওই পাথর ও মাটি খনির মধ্যে ধসে পড়বে। ঠিক যেমনটা, লালামাটিয়া প্রকল্পের ক্ষেত্রে ঘটেছিল।
এ ছাড়া উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাটি ও কয়লা কাটার যন্ত্র, ‘হাইওয়া’ ও ডাম্পারগুলি সপ্তাহে অন্তত চার বার পরীক্ষা করা উচিত। তা না হলে খনির ঢালু পথে যে কোনও সময় যান্ত্রিক গোলমালে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে অনুপবাবু বলেন, ‘‘খোলামুখ খনির নিরাপত্তা বজায় রাখতে হলে এই বিষয়গুলি গুরুত্ব দিয়ে নজরে রাখতে হবে। তা না হলে সাদা চোখে সব ঠিকঠাক মনে হলেও আচমকা বিপর্যয় নামতেই পারে। তখন পরিস্থিতির সামাল দেওয়া অত্যন্ত কঠিন।’’
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, ‘কোল ইন্ডিয়া’র তরফে একাধিক বেসরকারি ঠিকা সংস্থাকে কয়লা তোলার ‘ব্লক’ দেওয়া হচ্ছে। গাফিলতির অভিযোগ উঠছে মূলত এই বেসরকারি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধেই। তবে কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের দাবি, বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে কয়লা কাটার কাজ করানো হলেও কারিগরি তত্ত্বাবধানে থাকেন কোল ইন্ডিয়ার বিভিন্ন ‘সাবসিডিয়ারি’ সংস্থার আধিকারিকেরা। সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও গাফিলতি থাকার কথা নয়। এর পরেও কোনও অভিযোগ উঠলে তার উপযুক্ত তদন্ত করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy