আইনি জট কাটিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে বন্ধ ও রুগ্ণ চা-বাগানগুলির শ্রমিকদের কিছু সুরাহা দিতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। একই সঙ্গে বাগান মালিকদের একাংশের বেআইনি কাজেও রাশ টানতে চাইছে কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার, বাগান মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে ফের উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সংসদ অধিবেশন মিটলে এ মাসের শেষে তিনি সফরের পরিকল্পনা করেছেন।
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে মূল বাধা— তাদের কাছে জমির পাট্টা নেই। বেসরকারি মালিকানাধীন চা-বাগানের আবাসনেই শ্রমিকদের বাস। এই পরিস্থিতিতে চা-বাগান আইন সংশোধন করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করা শ্রমিকদের জমির স্বত্ব দেওয়ার দাবি উঠেছে। কিন্তু সম্প্রতি যে ভাবে একের পর এক চা-বাগানে শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, তাতে টনক নড়েছে মোদী সরকারের। নির্মলা এ দিন আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘ওঁরা বেসরকারি মালিকানাধীন চা-বাগানে বসবাস করলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে যে সব কেন্দ্রীয় প্রকল্প রয়েছে, সেগুলির আওতায় চা-শ্রমিকদের নিয়ে আসা সম্ভব।’’ এর পরেই তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে জট কাটাতে সংসদের চলতি অধিবেশন শেষ হলেই তিনি উত্তরবঙ্গ যাচ্ছেন।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, তরাই ও ডুয়ার্সের যে সব চা-বাগানে অচলাবস্থা রয়েছে, সেখানেই মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। চা-বাগানগুলির অচলাবস্থার অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী। রিপোর্ট পেয়ে তিনিও বিস্মিত। নির্মলা বলেন, ‘‘এক জন ব্যবসায়ী ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে চা-বাগান কিনেছেন। তার পর ঋণ শোধ করতে না-পারায় ওই ব্যাঙ্কে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তার পর আবার অন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে অন্য একটি চা-বাগান কিনছেন।’’ মন্ত্রী বলেন, কারও মদত না-থাকলে এটা করা যায় না। ওই সব ব্যবসায়ী ও তাদের মদতদাতাদের চিহ্নিত করছে সরকার।
চলতি সপ্তাহে দার্জিলিংয়ের সাংসদ সুরিন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া ও গোর্খা জনমুক্তির মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ নির্মলার সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছেন, তরাই ও ডুয়ার্সের বেশ কিছু চা-বাগানে অচলাবস্থার কারণে অনাহার-অপুষ্টিতে মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ২২ জন চা-শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য সরকারের অবশ্য দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় গত সাড়ে চার বছরে বন্ধ চা-বাগানে অনাহারে কেউ মারা যায়নি। নির্মলা বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যসচিব আমাকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, অনাহারে কেউ মারা যায়নি। অসুস্থতায় মৃত্যু ঘটছে। কিন্তু অনেকেই আমার কাছে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।’’
ঘটনা হল, উত্তরবঙ্গে চা-বাগানের অনুন্নয়নকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীও পরিস্থিতি সামাল দিতে উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে চা-বাগানের সমস্যা সমাধানের কথা বলেছেন। মে মাসে উত্তরবঙ্গের চা-বাগান ঘুরে দেখে শিলিগুড়িতে বৈঠক করেছিলেন নির্মলা। তাতেও পরিস্থিতি না বদলানোয় ফের কেন্দ্রের কাছে দরবার করছেন অহলুওয়ালিয়া ও মোর্চা নেতৃত্ব। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির যুক্তি, ‘‘অবিলম্বে চা-বাগানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দিতে হবে। জমির পাট্টার জন্যও কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’’
পিছিয়ে নেই তৃণমূলও। জলপাইগুড়ির তৃণমূল সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মনও আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। বিজয়বাবু বলেন, ‘‘চা-বাগানগুলো মালিকদের বেসরকারি সম্পত্তি। সেটাই বড় বাধা। শ্রমিকদের জমির পাট্টা নেই। এ বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।’’