আর্সেনিক প্রকল্পের জল চুরি, ভরা হচ্ছে মাছপুকুর

আর্সেনিকের বিষ থেকে মানুষকে বাঁচাতেই বিশুদ্ধ জল সরবরাহের উদ্যোগ। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার নোদাখালির আর্সেনিক-মুক্ত জল প্রকল্প থেকে সরবরাহ করা জল বহু গৃহস্থের বাড়িতে পৌঁছচ্ছে না। জল চুরি হয়ে যাচ্ছে মাঝপথেই। সেই জল লাগানো হচ্ছে মাছ চাষের কাজে। এই চুরির জন্য শুধু যে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, পানীয় জল দূষিতও হয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৪:১৮
Share:

আর্সেনিকের বিষ থেকে মানুষকে বাঁচাতেই বিশুদ্ধ জল সরবরাহের উদ্যোগ। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার নোদাখালির আর্সেনিক-মুক্ত জল প্রকল্প থেকে সরবরাহ করা জল বহু গৃহস্থের বাড়িতে পৌঁছচ্ছে না। জল চুরি হয়ে যাচ্ছে মাঝপথেই। সেই জল লাগানো হচ্ছে মাছ চাষের কাজে। এই চুরির জন্য শুধু যে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, পানীয় জল দূষিতও হয়ে যাচ্ছে। এবং পুরো চুরি চক্রের পিছনে খেল্ সেই রাজনীতিরই!

Advertisement

আর্সেনিকের দাপটের মধ্যে নোদাখালির ওই প্রকল্প চালু হয় ২০০৪ সালে। লক্ষ্য ছিল, ছ’টি ব্লক ও দু’টি পুরসভা এলাকার তিন কোটি বাসিন্দাকে প্রতিদিন সাড়ে তিন কোটি গ্যালন বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করা। পরে কলকাতা পুরসভার জোকা ১ এবং ২ নম্বর ব্লককেও ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখন সেখান থেকে প্রতিদিন দু’‌কোটি ৭০ লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহ করা হয়।

প্ল্যান্টের দায়িত্ব রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের। ওই দফতরের প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার-ইন-চিফ প্রবীর দত্ত বলেন, “এই প্ল্যান্টের যন্ত্রপাতি বিশ্বে এক নম্বর। কিন্তু পাইপে ফুটো করে এন্তার জল চুরি হয়।” এর জেরে গঙ্গার জল এনে নোদাখালির প্ল্যান্টে শোধন করে সরবরাহ করা হলেও আর্সেনিকে আক্রান্ত ১০টি এলাকার অনেক জায়গাতেই তা পৌঁছয় না। দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানান, জল চুরিতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদত আছে বলেই আসল প্রাপকেরা বঞ্চিত।

Advertisement

ওই ১০টি এলাকায় মোট ৬৭টি ওভারহেড জলাধার তৈরি করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, নোদাখালির প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহ করা জল তাতে রাখা। যাতে অনেক বেশি গতিতে মানুষের কাছে জল পৌঁছয়। কিন্তু বাম আমল থেকেই নেতাদের মদতে পাইপ ফুটো করে জল বার করে নেওয়া হচ্ছে। জলধারগুলিতে প্রয়োজন অনুযায়ী জল পৌঁছয় না। ফলে সরবরাহের সময় জলের চাপও বেশি হয় না। এই কারণেই জলাধার থেকে দূরের অনেক এলাকা কার্যত নির্জলা থেকে যায়।

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সচিব সৌরভ দাস বলেন, “আমরা জল উৎপাদন করি। কিন্তু আমরা তো পুলিশ নই। জল চুরি আটকাতে সভাধিপতি থেকে একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত হাতজোড় করে অনুরোধ জানিয়ে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। পঞ্চায়েত-পুরসভা স্তরে সক্রিয়তা না-থাকলে চুরি বন্ধ হবে না।”

জল চুরির জন্য পাইপে এত বড় বড় ফুটো করা হয়েছে যে, বাইরের নোংরা জল ঢুকে পানীয় জলকে দূষিত করে তোলে। আশপাশে মাছ চাষ হয়। জল চুরি করা হয় মূলত সেই সব পুকুর ভরানোর জন্য। আর্সেনিক-মুক্ত জল পেতে হলে বোতল-বন্দি পানীয় জল কিনতে হয়। গরিবদের ভরসা এখনও খাল-বিল-পুকুরের জল।

এই পরিস্থিতিতেই নোদাখালি প্ল্যান্টের সামনে ১২০০ কোটি টাকায় প্রতিদিন পাঁচ কোটি ৩০ লক্ষ গ্যালন জল দেওয়ার আর একটি প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রশাসনিক উদ্যোগ না-থাকলে এর সুফল মানুষ কতটা পাবেন, তা নিয়ে সংশয় আছে সৌরভবাবুরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন