৩ কোম্পানিতে কেমন ভোট, সংশয়ে সুশান্ত

চাওয়া হয়েছিল দেড়শো, মিলেছে মাত্র তিন কোম্পানি। এই পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে রাজ্যের ৯২টি পুরসভার ভোট করাতে গিয়ে ভোটারদের মনে আস্থা জোগানোর কাজে খামতি থেকে গেল বলে আক্ষেপ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়ের। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘ভোটারদের মনে আস্থা জাগাতে ১৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৫
Share:

রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করতে রাজভবন এলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। ছবি: প্রদীপ আদক।

চাওয়া হয়েছিল দেড়শো, মিলেছে মাত্র তিন কোম্পানি। এই পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে রাজ্যের ৯২টি পুরসভার ভোট করাতে গিয়ে ভোটারদের মনে আস্থা জোগানোর কাজে খামতি থেকে গেল বলে আক্ষেপ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়ের।

Advertisement

বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘ভোটারদের মনে আস্থা জাগাতে ১৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হয়েছিল। পাওয়া গিয়েছে মাত্র তিন কোম্পানি। ১৫০ কোম্পানি আর তিন কোম্পানি যে এক হতে পারে না, তিন বছরের শিশুও তা জানে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তিন কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথে মোতায়েন করে লাভ হবে না। তাই তাদের টহলদারির কাজে লাগাতে চায় কমিশন।’’

পুরভোটের ঠিক আগে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অভিযোগকে ঘিরে তেতে উঠেছে শহর কলকাতা। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী কম থাকা নিয়ে খোদ রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের এই মন্তব্যে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কমিশনের বোধোদয় হল বড্ড দেরিতে! এতে রাজ্যবাসীকে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। যাঁরা তৃণমূলকে পছন্দ করেন না, তাঁরা যদি ভোট দিতে না পারেন, তা হলে তার দায় রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।’’ তবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ওঁর (সুশান্তরঞ্জন) আক্ষেপ করার কী আছে বুঝলাম না। উনি যদি সত্যিই কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইতেন, তা হলে আরও বেশি উদ্যোগী হতেন।’’

Advertisement

কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যাপারে রাজ্য সরকারও দায় নিতে নারাজ। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চেয়েছিলাম। দিল্লি তা দিতে না পারলে দায় রাজ্যের নয়। রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ দিয়েই নিরপেক্ষ ভাবে ভোট করা হবে।’’

বেশ কিছু দিন ধরেই ভোটারদের মনে আস্থা জোগানোর জন্য পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে সওয়াল করছিলেন সুশান্তরঞ্জনবাবু। তিনি জানান, পুরভোটে যে তিন কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া যাবে, তা রাজ্য সরকার এ দিনই কমিশনকে জানিয়েছে। রাজ্য এ-ও জানিয়েছে যে, কলকাতায় ভোট হয়ে গেলে ওই তিন কোম্পানির মধ্যে এক কোম্পানি যাবে হুগলিতে, বাকি দুই কোম্পানি উত্তর ২৪ পরগনায়। পুরভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য এ দিন নিজে সময় চেয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করেন সুশান্তরঞ্জনবাবু। পরে তিনি জানান, নির্বাচনী প্রস্তুতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজ্যপালকে ওয়াকিবহাল করেছেন। বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের উপরে হামলা এবং কাশীপুরের ঘটনা রাজ্যপালকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে বলেছেন রাজ্যপাল।’’

তবে বিজেপি-র প্রদেশ কমিটির সম্পাদক অসীম সরকারের কটাক্ষ, ‘‘শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার বুঝেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া এখানে অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। উনি অসহায়। তাই রাজ্যপালের কাছে ছুটে গিয়েছেন। কিন্তু সাংবিধানিক বাধা থাকায় এ ক্ষেত্রে রাজ্যপালেরও কিছু করার নেই।’’

রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, মনোনয়পত্র পেশ শুরু হওয়ার দিন থেকে এ পর্যন্ত কমিশনের কাছে কলকাতায় ৮০টি এবং অন্যত্র ১৫০টি সন্ত্রাসের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই কমিশন পুলিশকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছে। তবে কাশীপুরের ঘটনায় পুলিশ এখনও কমিশনকে রিপোর্ট দেয়নি। পুলিশকে বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় অভিযুক্ত স্বপন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে কোনও অপরাধমূলক মামলা রয়েছে কি না তা জানাতে। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ এখনও পর্যন্ত কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা-ও জানাতে বলা হয়েছে।

কিন্তু প্রচার-পর্বে যে ভাবে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠছে, তাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুপস্থিতিতে পুরভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হওয়া কি সম্ভব? কমিশনার বলেন, ‘‘সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’ রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, ভোটপর্ব নির্বিঘ্ন রাখার জন্য এ দিন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ ও রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডির সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করেন। বৈঠকে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ-কর্তারাও ছিলেন।

রাত পোহালেই ভোট কলকাতায়। কলকাতা পুলিশ দাবি করেছে, ভোট-পর্ব নির্বিঘ্নে করার সব ব্যবস্থাই তারা নিয়েছে। জল, স্থল এবং আকাশপথে নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশ মিলিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় মোট ৩২ হাজার পুলিশকর্মী টহল দেবেন। সঙ্গে থাকছে ড্রোনের নজরদারিও।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার, ভোটের দিন গঙ্গাতেও নজরদারির পরিকল্পনা করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন