Garia

‘কোভিডে মৃত্যুর সম্পর্ক নেই’, দাহ বিতর্কে ভুয়ো তথ্যকে দুষল রাজ্য

শনিবার স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে টুইট করে জানানো হয়েছে, কোভিডে মৃত ব্যক্তির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দিতে বিশেষ পদক্ষেপ করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২০ ০৫:১৩
Share:

গড়িয়া-কাণ্ডে শ্মশানের সামনে বিক্ষোভ। —ফাইল চিত্র।

সৎকার-বিতর্কে নিজেদের অবস্থান আবার স্পষ্ট করল রাজ্য সরকার। গোটা বিতর্কের পিছনে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার দায়ী, এই অভিযোগ করে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই ‘কোভিড-ম্যানেজমেন্টে’ উপযুক্ত পদক্ষেপ করছে প্রশাসন।

Advertisement

শনিবার স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে টুইট করে জানানো হয়েছে, কোভিডে মৃত ব্যক্তির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দিতে বিশেষ পদক্ষেপ করা হয়েছে। মেনে চলা হচ্ছে সৎকারের বিশেষ পদ্ধতি। কিন্তু দাবিদারহীন এবং গলিত মৃতদেহ সৎকারের একটি ঘটনা তুলে এনে বিভ্রান্তিমূলক এবং ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হয়েছে। যার সঙ্গে কোভিড-মৃত্যুর সম্পর্ক নেই। রাজ্য যখন কোভিড-আমপানের মতো জোড়া বিপর্যয়ের মোকাবিলায় লড়ছে, তখন এই ধরনের অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা কোভিড-যোদ্ধাদের মনোবলে আঘাত করতে পারে বলে জানিয়েছে দফতর।

প্রসঙ্গত, গড়িয়া শ্মশানে দাবিদারহীন মৃতদেহ আঁকশিতে টেনে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্ক তৈরি হয়। শুক্রবার সেই প্রসঙ্গ উঠেছিল সুপ্রিম কোর্টেও। ওই ভিডিয়ো প্রসঙ্গে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে বৃহস্পতিবারই লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শৈবালকুমার মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, হাসপাতালের মর্গ থেকে ১৪টি দাবিদারহীন দেহ নিয়ম মেনে তাঁরা পুরসভার হাতে তুলে দেন। কেউই করোনায় মারা যাননি। অথচ ভিডিয়োয় দেহগুলি কোভিড রোগীর বলে ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হয়েছে। পুলিশকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন তিনি। রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন বলেন, ‘‘গড়িয়ার ঘটনার তদন্ত চলছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় শহরে পজ়িটিভ ১৫৮ জন, নতুন রেকর্ড গড়ল কলকাতা

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় শহরে পজ়িটিভ ১৫৮ জন, নতুন রেকর্ড গড়ল কলকাতা

ওই ভাবে দেহ টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে বর্বরোচিত আখ্যা দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কলকাতা পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমার তাঁকে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছেন ইতিমধ্যেই। দিল্লিতে শনিবার তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন অভিযোগ করেন, বিজেপির আইটি সেল কলকাতার একটি শ্মশানের ভিডিয়োর সঙ্গে কোভিড অতিমারিকে জুড়ে প্রচার চালাচ্ছে। বিজেপি মুখপাত্র সেজে তাতে ইন্ধন দিচ্ছেন বাংলার রাজ্যপাল। ডেরেকের কথায়, “রাজ্যপালের উচিত সারকারিয়া কমিশন এবং পুঞ্চ কমিশনের প্রস্তাবগুলি পড়া। তা হলে নিজের সীমারেখা বুঝতে পারবেন। বাংলার সমস্ত খুঁত ওঁর চোখে পড়ে। কিন্তু ওঁর বসের রাজ্য গুজরাত যে অতিমারি রুখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, তা নিয়ে ধনখড়ের মুখে কথা নেই।’’

ফিরহাদও বলেন, ‘‘রাজ্যপাল পক্ষপাতিত্বের রাজনীতি করছেন। কিছু না জেনে টুইট করলেন, দিলীপবাবুর ভাষায় কথা বললেন। রাজ্যের প্রধান হিসেবে উনি জবাব চাইতেই পারেন। কিন্তু ওটা তো বিজেপির অফিস। সেখানে আমি যাব না।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের টুইট, ‘‘আশা করি ভুয়ো খবর এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার না-করে রাজ্যপাল সহযোগিতা করবেন।’’ কটাক্ষ করে তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর মন্তব্য, ‘‘গাছ থেকে পড়ে পচা ফল খুব বেশি যেতে পারে না। আঙ্কলজি, তিনটি কথা—যাদের হাতে রক্ত লেগে বিজেপিতে তাদেরই উত্থান হয়। তৃণমূলে কঠোর পরিশ্রমই স্বীকৃতি পায়। আইনজীবী হিসেবে আপনার কর্মজীবন উজ্জ্বল নয়। রাজস্থানে নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য সুস্থ থাকুন।’’

পাল্টা সুর চড়ান রাজ্যপালও। মহুয়ার উদ্দেশে তাঁর জবাব, ‘‘পঞ্চায়েতে দুর্নীতির কথা বলে দলের তোপের মুখে পড়ে মহুয়া মৈত্র দলকে খুশি করতে রাজ্যপালকে আক্রমণ করেছেন। তাঁর মতো নেতাদের এই অসহায় অবস্থা সত্যিই বেদনার।’’ তাঁর আর একটি টুইটবার্তা, ‘‘এমপি-ত্রয়ী যে ছুরিতে শান দিচ্ছিলেন, এ বার তা রাজ্যপালকে আঘাত করার জন্য বের করা হচ্ছে। আঁকশি দিয়ে মৃতদেহ টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে লজ্জা পাওয়া এবং ক্ষমা চাওয়ার বদলে সাংসদ ও সিনিয়র নেতাদের দিয়ে এই রকম টুইট করানো হচ্ছে। ...দেশের শীর্ষে বাংলাকে দেখার জন্য আরও শক্তি নিয়ে এখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মযুদ্ধ চালাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন